২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বিশ্ব দৃষ্টি দিবস

আর নয় প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব

আর নয় প্রতিরোধযোগ্য অন্ধত্ব -

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী ২৮৬ মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় দৃষ্টিহীনতায় ভুগছে। এদের প্রায় ৬০ শতাংশই ৫০ বছরের বেশি বয়সী। শিশুরাও দৃষ্টিহীনতার সমস্যায় আক্রান্ত হয়। প্রায় ১৯ মিলিয়ন শিশু এতে আক্রান্ত। দৃষ্টিহীনতার শতকরা ৯০ শতাংশই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৩৯ মিলিয়ন মানুষ অন্ধত্বের অভিশাপে ভুগছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের মতে, শতকরা ৮০ ভাগ অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যায়। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। এ কথা চিন্তা করে প্রতি বছর পালিত হয় বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। এ বছরের ৯ অক্টোবর ‘বিশ্ব দৃষ্টি দিবস’ পালন করা হয়। এ বছরও তা পালিত হতে যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরো জানিয়েছে, বিভিন্ন মাত্রার দৃষ্টিহীনতার প্রধান তিনটি কারণ হলো চোখে দেখার ত্রুটি যেমন- কাছে বা দূরে দেখার সমস্যা যাকে মেডিক্যালের ভাষায় মায়োপিয়া, হাইপারমেট্রোপিয়া, অ্যাসটিগমিটিজম বলে, ক্যাটার‌্যাক্ট বা ছানি পড়া, গ্লোকোমা বা চোখের অন্তস্থ চাপ বৃদ্ধি সংক্রান্ত চোখের সমস্যা। অন্ধত্বের প্রধান তিনটি কারণ হলো- চোখে ছানি পড়া, গ্লোকোমা ও বয়সের সাথে সম্পর্কিত মেকুলার ডিজেনারেশন।
চোখে দেখার ত্রুটি নেই এমন লোকের সংখ্যা অনেক কম। তবে আশার কথা চোখে চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স বা ল্যাসিক করে চোখের এ সমস্যা দূর করা যায়। ল্যাসিক চোখের ত্রুটি দূর করার আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। যাদের বয়স ২০ বছর বা তার বেশি, গত ১ বছর ধরে চশমার পাওয়ার পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়নি, চোখের পাওয়ার যদি -২.০০ থেকে -১৬.০০, +১.০০ থেকে +৭.০০ ও অ্যাজটিগমেটিজম -৮.০০ পর্যন্ত হলে ল্যাসিকের জন্য উপযুক্ত বলে ধরে নেয়া হয়। ল্যাসিকের সুবিধা অনেক। মোটা চশমা পরার ঝামেলা নেই।
বিভিন্ন কারণে চোখে ছানি পড়তে পারে। সাধারণত বয়স বেশি হলে ছানি দেখা দেয়। বয়স্কদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছানি পড়ার কারণে দৃষ্টিহীনতা দেখা দেয়। অপারেশনের মাধ্যমে ছানি পড়া চোখের লেন্স পরিবর্তন করে আর্টিফিসিয়াল লেন্স প্রতিস্থাপন করলে চোখে আবার আগের মতো ভালো দেখা যায়। ফ্যাকো ছানি অপারেশনের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে চোখে খুব অল্প ছিদ্র করে অপারেশন করা হয় বলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হয়। এছাড়া এসআইসিএস বা কনভেনশনাল পদ্ধতিতে ছানি অপারেশন করা হয়। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কম খরচে ছানি অপারেশন করা হয়। ছানি পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে অপারেশন করিয়ে নেয়াই শ্রেয়। না হলে জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি চিরদিনের জন্য অন্ধত্বের অভিশাপ দেখা দিতে পারে।
চোখের অন্তস্থ চাপ বেড়ে গেলে চোখের বিভিন্ন অংশের গঠনের সমস্যার দরুন দৃষ্টিহীনতা দেখা দেয়, একেই বলে গ্লোকোমা। এ রোগ দ্রুত নির্ণয় করে চিকিৎসা করতে পারলে চোখের আলো ধরে রাখা সম্ভব হয়। কিন্তু দেরি হয়ে গেলে কিছুই করার থাকে না। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের কিছু দিন পর পর চশমার পাওয়ার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে, হঠাৎ করে চোখে তীব্র ব্যথাসহ চোখ লাল হয়ে গেলে, অনেক দিন ছানি থাকলে ধারণা করা হয় গ্লোকোমায় আক্রান্ত। এ সব ক্ষেত্রে দেরি না করে চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন। এ রোগগুলো কিন্তু সহজেই প্রতিরোধ করা যায় বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চোখ সুস্থ রাখা যায়। কিন্তু অহেতুক দেরি করার কারণে চোখের সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। ধীরে ধীরে চোখের আলো কমতে থাকে, একসময় অন্ধকারের সমুদ্রে ডুবে যায় চোখ।
লেখক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement