২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঈদের স্বাস্থ্যবার্তা

-


ঈদ সমাগত। নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। শহরে, বাজারে বসছে পশুর হাট। সবখানে উৎসবের আমেজ। লাখ লাখ পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সচেষ্ট ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। কিন্তু কোরবানির পর বর্জ্য নিয়ে আমরা চিন্তা করি না। বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলে রাখি। ফলে দেখা দেয় নানান সমস্যা।
কোরবানির হাটগুলোতেও থাকে অপরিচ্ছন্নতা। যেখানে সেখানে পশুর মলমূত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকে মনে করেন পশুর মল খুব ক্ষতিকর নয়। এটা ভুল ধারণা। পশুর মলে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু থাকতে পারে। এগুলো থেকে হতে পারে পেটের পীড়া। তাই বাজারে গেলে সচেতন হবেন। জুতা পরে গেলে ভালো হয়। পশু হাতে ধরার পর হাত না ধুয়েই অনেকে খাবার খান। এতে করে দেখা দিতে পারে পেটের পীড়া। অসুস্থ পশু কিনবেন না। গবাদিপশু জ্বরে আক্রান্ত হলে, প্রাণী কাঁপতে থাকলে, ঘন ঘন শ্বাস নিলে, পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে গেলে এবং পশু হঠাৎ করে মারাও যেতে পারে। মারা যাওয়ার পর প্রাণীর নাক, মুখ ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে কালচে রক্ত বের হয়ে আসে। এমন পশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত বলে মনে করা হয়। এমন অসুস্থ গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, গোশত, হাড়, নাড়িভুঁড়ি ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। তাই যারা পশু জবাই, কাটা-বাছা, ধোয়া, রান্নার কাজে জড়িত তারাই বেশি আক্রান্ত হন। তাই সাবধান হন। তবে অ্যানথ্রাক্স নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু মারা যায় খুব তাড়াতাড়ি। তাই বাজারে যে পশু পাওয়া যায় সেগুলো অ্যানথ্রাক্স মুক্ত বলেই ধরে নেয়া যেতে পারে। কারণ দূরবর্তী কোনো এলাকা থেকে পশু ঢাকায় আনতে যে সময় ব্যয় হয় তাতে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু জীবিত থাকার সম্ভাবনা কম। পশু কেনার সময় অসুস্থ কি না তা নিশ্চিত হয়ে কিনুন।
পশু জবাইয়ের সময়ও সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশে পশু জবাইয়ের নির্দিষ্ট স্থান নেই। তাই শহরে রাস্তার পাশে আর গ্রামে পুকুরের পাশে চলে পশু জবাইয়ের কাজ। পশু জবাইয়ের স্থান হতে হবে পরিষ্কার ও শুষ্ক। পশু জবাইয়ের আগে অনেকেই জবাইয়ের স্থানে পাউডার ছিটিয়ে দেন, এটা ভালোর চেয়ে খারাপ হতে পারে। পশু জবাইয়ের স্থান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হলে মাটিতে বসবাসকারী জীবাণু সহজেই মিশে যেতে পারে জবাই করা পশুর সাথে। এর মাধ্যমে চলে যেতে পারে আপনার পেটে। তা থেকে হতে পারে রোগবালাই। গোবাদিপশুর মলের সাথে ই. কোলাই, সালমোনেলা ও ক্যামপাইলোব্যাকটার নামক জীবাণু থাকে। তাই মল যদি গোশতের সাথে মিশে যায় তাহলে দেখা দিতে পারে ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও অমাশয়ের মতো রোগবালাই। সাবধানে গোশত প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করুন।


গ্রামে পুকুরের পাড়ে জবাইয়ের কাজ করা হয়। ফলে রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য মিশে পানির সাথে। এটা ঠিক নয়। আবার পুকুরের পানিতে চলে নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কারের কাজ। এতে একদিকে পুকুরের পানির জীবাণু যেমন নাড়িভুঁড়িতে মিশে রোগ করতে পারে তেমনি পুকুরের পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। নাড়িভুঁড়ি যদি খেতেই চান তাহলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে খান। আর ময়লা একটি গর্ত করে পুঁতে ফেলুন। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কঠিন হলেও গ্রামে কিন্তু তা সহজ। একটি বড় ধরনের গর্ত করে তাতে সবাই মিলে ময়লা ফেলে এর ওপর ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দিয়ে মাটিচাপা দিন।
শহরে ড্রেনের আশপাশে পশু জবাই করেন। এতে ড্রেনেজ সিস্টেম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ফলে দুর্গন্ধ ছড়াতে সময় লাগবে না। পরিষ্কার জায়গায় জবাইয়ের পর ময়লা একত্র করে তার ওপর ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দিন। এবার সব ময়লা একটি ব্যাগে ভরুন। ময়লার ব্যাগ যদি সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে আসেন খুব ক্ষতি হবে কি? এতে করে আপনার বাসার আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবে, দুর্গন্ধ ছড়াবে না। যদি বাসার আশপাশে ময়লা থাকে তাহলে মশা-মাছি বেশি দেখা দেবে। সে মশা-মাছির মাধ্যমে রোগাক্রান্ত হবেন কিন্তু আপনিই। একটু সচেতন হলেই কিন্তু আমরা শহরেও পরিচ্ছন্নভাবে পশু জবাইয়ের কাজ করতে পারি। মনে রাখবেন, কোনো মুসলিমকে কষ্ট দেয়া কিন্তু ইসলামসম্মত নয়। কোরবানি করছেন আল্লাহকে খুশি করার জন্যই, ময়লা যেখানে সেখানে ফেলে অন্যদের কষ্ট দেয়া কি ঠিক হবে?
কোরবানির গোশত নাকি ইচ্ছেমতো খাওয়া যায়। এটি কিন্তু ঠিক নয়। কিডনি রোগে আক্রান্তের বেশি গোশত খাওয়া ঠিক হবে না।
গরু-ছাগল-ভেড়া এগুলোকে রেডমিট বলে। এগুলো কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোকে আক্রান্তের জন্য। গোশত দু-তিন টুকরো খেলেও চর্বি কিন্তু খাবেন না।
সারা বছরের জন্য গোশত প্রক্রিয়াজাত করে রাখলেও কিন্তু সমস্যা হতে পারে। বেশি দিন ফ্রিজে রাখলে স্বাদ তো কমে যায়। সে সাথে গোশত প্রক্রিয়াজাত করার সময় জীবাণু কিন্তু থেকে যেতে পারে। সব গোশত প্রক্রিয়াজাত না করে গরিব দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেয়াই তো কোরবানির সার্থকতা।
দেশে এখন চলছে করোনার ঢেউ। ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বর। যদিও স্রষ্টার কৃপায় এবারের করোনায় প্রাণহানির খবর খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। তার পরও সচেতন থাকতে হবে। বাজারে গিয়ে কুরবানির পশু কেনার সময় অযথা ঘোরাঘুরি না করাই ভালো। জনসমাগম এড়িয়ে চলা শ্রেয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল