১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিঃশ্বাস বলবে স্বাস্থ্যের কথা শরীরের কথা

নিঃশ্বাস বলবে স্বাস্থ্যের কথা শরীরের কথা -

আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়ে থাকে। যদি আপনি ঘুমের সময় নাক ডাকেন বা মুখ খুলে অর্থাৎ হা করে ঘুমান তাহলে আপনার মুখের অভ্যন্তর ভাগ শুষ্ক হয়ে যাবে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া ভালোভাবে বংশ বৃদ্ধি করে থাকে।
দাঁতের ফাঁকে খাদ্য কণা থাকলে তা ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। মুখ হা করে ঘুমালে পেরিওডন্টাল তথা মাড়ির রোগ দেখা দিতে পারে। আপনি যদি উপুড় হয়ে ঘুমান তাহলে নাক ডাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এক পাশ হয়ে ঘুমালে সমস্যার সমাধান হতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে ব্রাশ ও ফ্লস করে ঘুমাবেন।

নিঃশ্বাসের সাথে ধাতব গন্ধ : যদি আপনার নিঃশ্বাসের সাথে ধাতব গন্ধ বা মেটালিক স্মেল পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনার মাড়ির নিচে ব্যাকটেরিয়া বংশ বিস্তার করছে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। শুধু তাই নয় সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করার পাশাপাশি নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস করুন।

নিঃশ্বাসের সাথে টক গন্ধ : যদি আপনার নিঃশ্বাসের সাথে টক গন্ধ পাওয়া যায় এবং সামান্য খাবার বা তরল উপরের দিকে উঠে আসে তবে বুঝতে হবে পাকস্থলি থেকে এসিড ভুল পথে অর্থাৎ উল্টা পথে গলা হয়ে মুখে চলে আসছে যা ডাক্তারি ভাষায় এসিড রিগারজিটেশন বলা হয়। এ এসিড গলা এবং মুখের অভ্যন্তরে ক্ষতি করতে পারে।
নিঃশ্বাসের সাথে ফলের গন্ধ : যদি আপনার নিঃশ্বাস হয় ফ্রুটি ব্রেথ অর্থাৎ ফলের মতো গন্ধ পাওয়া যায় তবে সেক্ষেত্রে বুঝা যায় আপনার শরীর জ্বালানি হিসাবে সুগারের পরিবর্তে ফ্যাট বা চর্বি ব্যবহার করছে। এর অর্থ আপনার শরীরে ইনসুলিন হরমোনের পরিমাণ কম আছে বা কমে যাচ্ছে এবং এ ধরনের ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

স্টিংকি বা দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস হলে : হ্যালিকোব্যাক্টর পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা যদি পাকস্থলির আলসার বা ক্যান্সার হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে অস্বস্তিকর দুর্গন্ধযুক্ত বা স্টিংকি নিঃশ্বাস হয়ে থাকে। এর সাথে বমি বমি ভাব, হার্ট বার্ন, পাকস্থলির ব্যথা এবং বদ হজম হতে পারে। যথাযথ এন্টিবায়োটিক সেবন করলে এসব অবস্থা থেকে পরিত্রাণ লাভ করা সম্ভব।

নিঃশ্বাসে গন্ধ পেলে : ঠাণ্ডা, কফ এবং সাইনাস সংক্রমণ ব্যাকটেরিয়া মিশ্রিত মিউকাস নাকে এবং মুখে প্রেরণ করতে পারে। এর ফলে নিঃশ্বাসে সমস্যা এবং গন্ধ হতে পারে। ঠাণ্ডা বা কফ চলে যাওয়ার পর এ ধরনের পরিস্থিতি আর থাকে না।

ওষুধজনিত সমস্যা : কিছু ওষুধ মুখকে শুষ্ক করে ফেলে এবং মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে থাকে। এর ছাড়া নাইট্রেট জাতীয় ওষুধ যা হার্টের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়, ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি, ঘুমের ওষুধের কারণে কিছু কিছু রাসায়নিক নিঃসৃত হয় যা আপনার নিঃশ্বাসকে গন্ধযুক্ত করতে পারে যখন তা আপনার শরীরে বিভাজিত হয়ে থাকে। বেশি ভিটামিন খেলেও এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
শুষ্ক মুখ এবং সংক্রমণ : টনসিলের সংক্রমণের কারণে নিঃশ্বাসে গন্ধ হতে পারে। ডিহাইড্রেশনের কারণে মুখের অভ্যন্তর ভাগ শুষ্ক হয়ে যায়। মুখে পর্যাপ্ত লালা থাকে না যা মুখের ব্যাকটেরিয়া বা অন্যান্য বস্তুকে পরিষ্কার করে থাকে। ফলে নিঃশ্বাসে খারাপ গন্ধ হতে পারে। মুখে কোনো সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না করলেও নিঃশ্বাসে গন্ধ হতে পারে।

লিভার ফেইলিউর হলে : লিভার ফেইলিউর বা অকার্যকারিতায় মোলডি বা অস্বস্তিকর গন্ধ হতে পারে যা ডাক্তারেরা ফিটর হেপাটিকাস নামে ডাকে। ডাইমিথাইল সালফাইড এর জন্য এ ধরনের গন্ধ পাওয়া যায়। এটি একটি লক্ষণ যেখানে লিভার ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। কারণ লিভারের রোগটি অগ্রসরমান অবস্থায় আছে। এছাড়াও জন্ডিস হতে পারে।

অ্যামোনিয়ার মতো গন্ধ : অগ্রসরমান কিডনি রোগে মুখের লালায় যদি ইউরিয়া জমা হয় তখন শ^াস-প্রশ^াস নেয়ার সময় অ্যামোনিয়ার মতো গন্ধ পাওয়া যায়।

মাছের মতো গন্ধ : অ্যান্ড স্টেইজ রেনাল ফেইলিউর এর ক্ষেত্রে শশ্বাস-প্রশশ্বাস নেয়ার সময় মাছের ন্যায় গন্ধ পাওয়া যেতে পারে।
অতএব আপনার নিঃশশ্বাসে অস্বাভাবিক গন্ধ পেলে তা গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। প্রাথমিক অবস্থায় অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা সহজ হয়ে থাকে।
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
dr.faruqu@gmail.com

 

 


আরো সংবাদ



premium cement