২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেশে দরিদ্রদের মধ্যেই এইডস আক্রান্তের সংখ্যা বেশি

- ছবি : সংগৃহীত

দেশে এইডস আক্রান্তদের ৩৩ শতাংশ সাধারণ মানুষ। এদের বেশিরভাগই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী। যাদের মধ্যে রয়েছেন নারী ও পুরুষ যৌনকর্মী, সমকামী, যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তি, প্রবাসী শ্রমিক, হাসপাতালে প্রসব সেবা নিতে আসা মা ও রোহিঙ্গা।

বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এইডস আক্রান্তদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়লেও বিশ্বব্যাপী আধুনিক ওষুধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উদ্ভাবনের ফলে মৃত্যুহার অনেক কমে এসেছে। বাংলাদেশের জাতীয় এইডস, এসটিডি কন্ট্রোল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এইডসে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগীদের চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে আসার হার প্রতিবছর বাড়ছে।

এইডসে মৃত্যুর হার কমছে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থভাবে বেঁচে রয়েছেন। এছাড়া সচেতনতাও বাড়ছে। তাদের মতে, ২০১৯ সালে এইডস বিষয়ে সচেতনতার হার ছিল ৫২ শতাংশ, যা গেল বছর বৃদ্ধি পেয়ে ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর দুই বছর আগের চিকিৎসা সেবার আওতায় থাকা রোগীদের সংখ্যা ছিল ৬৫ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৭৭ শতাংশে এসেছে।

এইডস নিয়ে গবেষণাকারী একাধিক সংস্থার মতে, বাংলাদেশে সরকারিভাবে এইডসের চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়। বেসরকারি পর্যায়ে এই সেবা নেয়ার সুযোগ এখনো নেই। ফলে আক্রান্তদের মধ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারীদের জীবনযাপন, খাবার, কর্মসংস্থাননের ক্ষেত্রে পুনর্বাসন হচ্ছে না। কারণ অনেকের এইচআইভি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের রোগ আছে, সেটার চিকিৎসার জন্য তাদের জন্য আলাদা খুব বেশি সুবিধা নেই।

তাদের তথ্যানুযায়ী, এইডস শনাক্তের জন্য সারা দেশে ২৭টি কেন্দ্র থাকলেও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ১১টি কেন্দ্র। সে হিসেবে দেশের সরকারি তথ্য বলছে, যাদের শরীরে এইডস শনাক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত ৮৪ শতাংশ চিকিৎসার আওতায় আসছে।

জাতিসঙ্ঘের এইচআইভি-এইডস বিষয়ক সংস্থা ইউনিএইডস বলছে, বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিচারে এখনো বেশি না হলেও এইডস রোগীর সংখ্যা আক্রান্তদের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। সংস্থাটির তথ্য মতে, বাংলাদেশে এখন এইডস আক্রান্তের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ০.১ শতাংশ। আর এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। তবে দেশে চিকিৎসার আওতায় রয়েছে মাত্র আট হাজার রোগী।

বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইডস রোগীদের চিকিৎসার সাথে তাদের সেবা এবং পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং ও মনিটরিংয়ের প্রয়োজন। যা যথাযথ হচ্ছে না। আবার অনেকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় না। বেশিরভাগ রোগী বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নেন। অনেকে আবার কিছুদিন পর ওষুধ ছেড়ে দেন বা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এটা কিন্তু চিকিৎসার জন্য বড় সমস্যা তৈরি করে। তবে আক্রান্তদের উচিত যদি এইডসের পাশাপাশি অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা থাকে, তাহলে তার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেই রোগের চিকিৎসা নেয়া। কারণ একটা মানুষ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা নেন তাহলে তিনি আরো দশজন সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাত্রা করতে পারেন।

উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে চিকিৎসকদের ভাষ্য, এখন যে ওষুধ এসেছে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চেয়ে কার্যকারিতা অনেক বেশি। এইডসের জীবাণু একেবারে নির্মূল সম্ভব নয় জানিয়ে তারা বলেন, এর ওষুধ নিয়মিত আজীবনই খেতে হবে। তাতে ভাইরাল লোডটা কমে আসবে। ফলে তার নিজের মাঝে খারাপ প্রভাব যেমন ফেলবে না, অন্যদের মাঝেও ছড়াবে না। তাতে আক্রান্ত ব্যক্তি একেবারে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে।


আরো সংবাদ



premium cement