মাঙ্কিপক্সে আতঙ্ক নয়
- ডা: হুমায়ুন কবীর হিমু
- ২৫ মে ২০২২, ০০:০০
ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। কোভিডের আঘাত কাটেনি এখনো। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে দেউলিয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্বের ১৫টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাঙ্কিপক্স। এখন পর্যন্ত এটি কিরূপ ধারণ করবে তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে এখনই এটিকে নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি দেশে কয়েক ডজনের বেশি মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত করেছে দেশগুলোর স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের শুরু থেকে এ সংক্রমণ বাড়ছে। তবে রোগটি আফ্রিকার কিছু অংশে উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়েছে।
সর্বশেষ কানাডায় ১২ জনের বেশি মাঙ্কিপক্সের রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। এর আগে ৪০ জনের বেশি রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল ইউরোপের দেশ স্পেন ও পর্তুগাল।
৬ মে থেকে মাঙ্কিপক্সের ৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাজ্যে। আর গত ১৮ মে প্রথম একজন মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্তের দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রে। কানাডা থেকে ফিরে আসার পর দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ম্যাসাচুসেটসের এক ব্যক্তির শরীরে এ ভাইরাস ধরা পড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে, প্রতি বছর আফ্রিকার প্রায় ডজনখানেক দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর আসে। বেশির ভাগই কঙ্গোতে, যেখানে বছরে প্রায় ছয় হাজার মানুষ শনাক্তের রিপোর্ট পাওয়া যায় এবং নাইজেরিয়ায় এ সংখ্যা কমপক্ষে তিন হাজার।
১৯৫৮ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম রোগটি শনাক্ত করেন। তারা তখন গবেষণায় বানরদের মধ্যে ‘পক্স-সদৃশ’ রোগের অস্তিত্ব টের পান এবং পরে এটি মাঙ্কিপক্স নামকরণ করা হয়। মানবদেহে এর সংক্রমণ ঘটে ১৯৭০ সালে। কঙ্গোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৯ বছর বয়সী একটি ছেলে প্রথম মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু দেশে হাজার হাজার মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। তবে ইউরোপ ও উত্তর আফ্রিকায় সংক্রমণের ঘটনা এবারই প্রথম।
মাঙ্কিপক্স ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে। এটি সাধারণত বানরের পক্স বা বসন্ত রোগ করে থাকে। কিন্তু তা মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশে নির্মূল হওয়া গুটিবসন্ত প্রজাতির ভাইরাস এটি। সাধারণত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় এর সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। এর আগেও সীমিত আকারে এ ভাইরাস দেখা গেছে। কিন্তু এবারই এটি বেশ আগ্রাসী ভাব দেখাচ্ছে।
কিভাবে ছড়ায়
এ ভাইরাস সাধারণত আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা থাকে তাদের সংক্রমিত করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে ছড়াতে পারে। মানুষের দেহে এটি তিনভাবে প্রবেশ করতে পারে- ক্ষতস্থান, শ্বাসপ্রশ্বাস ও মিউকাস মেমব্রেন বা চোখ, নাক ও মুখের মাধ্যমে। কাজেই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা পরিবারের লোকজন, চিকিৎসার সাথে জড়িত লোকজন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এ সময়ের ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হওয়াদের বেশির ভাগ সমকামী বা উভকামী পুরুষ। মানে যৌনাঙ্গের মাধ্যমে ছড়ায়। আবার গবেষকরা মনে করছেন ভাইরাসটি শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে তৈরি হওয়া ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।
আবার যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের কেউ কেউ এমন রোগীর সংস্পর্শে আসেননি। ভয়ের ব্যাপার এখানেই।
লক্ষণ
কারো শরীরে এ ভাইরাসটি প্রবেশ করার পর ৭-১৪ দিন সুপ্তাবস্থায় থাকে। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ২১ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। এরপর দেখা দেয় সাধারণ জ্বর, পেশিতে ব্যথা, ক্লান্তি লাগা, গলা বা শরীরের অন্যান্য অংশের গ্রন্থি যাকে লিম্ফনোড বলে তা ফুলে যায়। জ্বরের ১-৩ দিন পর শরীরে র্যাশ দেখা দেয়। র্যাশ সাধারণত মুখে আগে দেখা দেয় এরপর শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পরে এ র্যাশ আকারে বড় হয়, পানি জমে গুটি বসন্তের মতো হয়ে থাকে। এরপর পুঁজ জমে যায় ও শুকিয়ে গিয়ে ক্ষতস্থানের মতো হতে পারে। পুরো সময়টাতে ৩-৪ সপ্তাহ লাগে।
করণীয়
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার কোনো চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। তবে যেকোনো ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মতোই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়। তবে উপসর্গ মোতাবেক চিকিৎসা করতে হবে।
প্রকোপ বন্ধ করতে কয়েকটা জিনিস মেনে চলতে হবে। যেসব দেশে এ রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে সেখান থেকে আসা ব্যক্তিদের আইসোলেশনে রাখতে হবে।
হ্যান্ড হাইজিন মানে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা তাদের ব্যবহৃত কোনো জিনিস ধরলে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
কতটা ভয়াবহ
এ রোগ কতটা ভয়াবহ হবে তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে কঙ্গোতে এ রোগ বেশি দেখা দেয় এবং সেখানে মৃত্যুহার ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এছাড়া মৃত্যুহার প্রায় ১ শতাংশ। কাজেই খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ভ্যাকসিন নেই
এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন নেই। তবে গুটিবসন্তের টিকা এ রোগ প্রতিরোধে প্রায় ৮৫ শতাংশ কার্যকর।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা