২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শুষ্ক মুখের চিকিৎসা

শুষ্ক মুখের চিকিৎসা -

সিস্টেমিক রোগসহ নানাবিধ কারণে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়ে থাকে। লালার প্রবাহ কমে গেলে অথবা একবারে বন্ধ হয়ে গেলে শুষ্ক মুখ হতে পারে। শুষ্ক মুখ হলে মুখের অভ্যন্তরে জ্বালাপোড়া হতে পারে। দন্তক্ষয় বৃদ্ধি পায়। একজন মানুষের কথা বলতে এবং উচ্চারণ করতে সমস্যা হয়। শুষ্ক মুখের কিছু চিকিৎসা আলোচিত হলো যা কোনো অবস্থায়ই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন করা যাবে না। কারণ এসব ওষুধের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
সেভিমেলিন
ক্যাপসুল সেভিমেলিন ব্যবহৃত হয় জগ্রেনস্ সিনড্রোমের কারণে শুষ্ক মুখের চিকিৎসা করার জন্য। সেভিমেলিন দিনে তিন থেকে চারবার গ্রহণ করা যায়, যা আপনার চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন। সেভিমেলিন কখনোই নিজে নিজে সেবন করতে যাবেন না। সেভিমেলিন সবার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায় না। সেভিমেলিন ব্যবহারের কারণে কারো শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। তাই শ্বাসকষ্ট থাকলে সেভিমেলিন ব্যবহার করা যাবে না। তবে সেভিমেলিন এবং পাইলোকারপিন এর মধ্যে সেভিমেলিন বেশি কার্যকর।
পাইলোকারপিন
পাইলোকারপিন ট্যাবলেট শুষ্ক মুখের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় বিশেষ করে মাথা ও ঘাড়ের ক্যান্সারের রোগীদের রেডিও থেরাপি দেয়ার কারণে যে ধরনের শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয় তা চিকিৎসা করার জন্য। এ ছাড়া জগ্রেনস্ সিনড্রোমের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও পাইলোকারপিন ব্যবহার করা হয়। পাইলোকারপিনের প্রতি যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না। পাইলোকারপিন ৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায়। যাদের অ্যাজমা আছে কিন্তু চিকিৎসা গ্রহণ করেন না অথবা যাদের ক্ষেত্রে অ্যাজমা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না, তাদের ক্ষেত্রে পাইলোকারপিন ব্যবহার করা যাবে না।
ক্যাফাসল বিকল্প লালা
ক্যাফাসল বিকল্প লালা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি কৃত্রিম লালা উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে যখন শরীর নিজে পর্যাপ্ত পরিমাণে লালা উৎপাদন করতে পারে না। মুখের ও গলার শুষ্কতা, ব্যথা অথবা অস্বস্তি নিরাময়ে ক্যাফাসল ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হয় নির্দিষ্ট কিছু রোগের কারণে, ওষুধের কারণে, সার্জারি, কেমোথেরাপি অথবা রেডিও থেরাপি চিকিৎসার পর। ক্যাফাসলের প্রতি এলার্জি থাকলে তা ব্যবহার করা যাবে না। বিকল্প লালা শুধু মুখের জন্য ব্যবহৃত হয়। ক্যাফাসল মুখের মধ্যে কাজ করে এবং এটি গিলে ফেলবেন না। ক্যাফাসল ৩০ সেকেন্ডের জন্য মুখের অভ্যন্তরে রেখে ফেলে দিতে হবে।
অ্যাকোরাল স্প্রে
অ্যাকোরাল ¯েপ্র হলো কৃত্রিম লালা। এটি ব্যবহৃত হয় শুষ্ক মুখ ও গলার ক্ষেত্রে। অ্যাকোরাল ¯েপ্র মুখ ও গলাকে আর্দ্র রাখে এবং ভিজিয়ে রাখে। অ্যাকোরাল স্প্রের প্রতি এলার্জি থাকলে এটি ব্যবহার করা যাবে না। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যে কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
জাইলিমেল্ট ট্যাবলেট
জাইলিমেল্ট ট্যাবলেট হিসেবে স্ট্রিপে পাওয়া যায়। জাইলিমেল্ট ট্যাবলেট প্রয়োগ করলে মুখের অভ্যন্তরে লেগে থাকে। মনে রাখতে হবে, জাইলিমেল্ট ট্যাবলেট খাবার ওষুধ নয়। জাইলিমেল্ট ট্যাবলেট ঘুমের মধ্যে যেন লালা নিঃসরণ হয় সেই বিষয়ে সাহায্য করে থাকে। লালা নিঃসরণ প্রক্রিয়াকে প্রণোদনা দিয়ে থাকে। ঘুমের আগে মুখের উভয় পাশে মোলার দাঁতের পাশে মাড়ির সংযোগ স্থানে স্থাপন করতে হবে। জাইলিমেল্ট ট্যাবলেট দাঁতের কোনো ক্ষতি করে না। উন্নত বিশ্বে জাইলিমেল্ট ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ড্রাই মাউথ জেল
ড্রাই মাউথ জেল শুষ্ক মুখের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি জেল জাতীয় পদার্থ যা কমলা, আপেল, আঙ্গুর ইত্যাদি ফ্লেভারে পাওয়া যায়। যাতে রোগী আরাম বোধ করে। ড্রাই মাউথ জেল শুষ্ক মুখের ক্ষেত্রে লালা নিঃসরণে সাহায্য করে থাকে। তবে জিসি ফুজি ড্রাই মাউথ জেল সবচেয়ে ভালো এবং কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করলে শুষ্ক মুখ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে শুষ্ক মুখের জন্য কোনো ওষুধ সেবন করার প্রয়োজন নেই। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এ ছাড়া ট্রাইসাইক্লিক বিষণœতা নাশক ওষুধ সেবন করলেও আপনার মুখ শুষ্ক হতে পারে। ব্যায়াম করার পর অথবা শারীরিক পরিশ্রমের পর, ভয় পেয়ে গেলে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হতে পারে যা অত্যন্ত সাময়িক। এ ধরনের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
শুষ্ক মুখ মানেই চিকিৎসা নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তবে শুষ্ক মুখের কারণে যেন ব্যাকটেরিয়া বংশ বৃদ্ধি করতে না পারে অথবা মুখের অভ্যন্তরে দাঁতের ক্ষয় না করতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তাই শুষ্ক মুখ নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না। আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করুন। মনে রাখবেন, কোনো অবস্থায়ই নিজে থেকে ওষুধ ব্যবহার করবেন না। নিজে নিজে ওষুধ ব্যবহার করলে মারাত্মক ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ

 


আরো সংবাদ



premium cement