২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

স্মৃতি নিয়ে লুকোচুরি

-

আলঝেইমার্স বা স্মৃতিভ্রম রোগটি এ সময়ে বিশ্বব্যাপী বেশ আলোচিত। উন্নত দেশগুলোতে এ রোগ নিয়ে বেশ গবেষণা চলছে। উন্নত দেশগুলোতে বয়স্কদের সংখ্যা অনেক বেশি তাই এ রোগে আক্রান্তের হারও বেশি। এক গবেষণায় দেখা গেছে ৬৫ বছরের পর প্রতি আটজনে একজন স্মৃতিভ্রমে আক্রান্ত হন।
খুব খারাপ ধরনের রোগ আলঝেইমার্স। এক সময়ের তেজোদৃপ্ত, শক্তিধর মানুষকে স্মৃতিলোপ করে একেবারে শিশুতে পরিণত করে এটি। নিজের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে না। যে পরিবারকে কেন্দ্র করে কেটেছে তার জীবন যৌবন তাকে পুরোপুরি ভুলে বসে। যাদের সুখ শান্তির জন্য সারাজীবন নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন তারা অচেনা হয়ে যায়। নিজের বাসাকে আপন মনে করতে পারেন না, বারবার বাসা থেকে বের হয়ে যান।
মস্তিষ্কের স্নায়ুর মৃত্যু হলে বা টিসু কমে গেলে এ রোগটি দেখা দেয়। রোগের মাত্রা যত খারাপ হতে থাকে মস্তিষ্কের পরিমাণ তত কমতে থাকে। যেহেতু মস্তিষ্কই স্মৃতি ধরে রাখে এর পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে দেখা দেয় স্মৃতিলোপ। কারো ক্ষেত্রে স্মৃতিলোপ হয় ধীরে ধীরে কারোও আবার দ্রুত। আলঝেইমার্স রোগ শুরুতে নির্ণয় করে চিকিৎসা করতে পারলে স্মৃতিলোপের হার কিছুটা কমানো যায়। মানে রোগ প্রক্রিয়া শ্লথ করা যায়। এ জন্য আলঝেইমার্স রোগের শুরুর লক্ষণগুলো জানা থাকলে সুবিধা।
স্মৃতিলোপ : এ রোগের শুরুতে অনেক দিনের পুরনো স্মৃতিতে কোন সমস্যা হয় না কিন্তু সমস্যা হয় নতুন স্মৃতি নিয়ে। যেমন ছোটবেলার ঘটনা অবলীলায় বলে যেতে পারেন কিন্তু হাতে চশমা রেখে বারবার আপনাকে এসে বলবেন আমার চশমাটা পাচ্ছি না। এককালের জাদরেল গণিতবিদ খুব সাধারণ হিসাবপাতি মেলাতে পারেন না। মোবাইল ফোন কোথায় রেখেছেন কিছুতেই মনে করতে পারেন না। অথচ তাকে তার খুব ছোটবেলার মজার কোন ঘটনা বলতে বলুন দাড়ি কোমাসহ বলবেন। তবে রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে তাও পারেন না। কথাকেও আক্রান্ত করে এটি। অনেক কমন শব্দগুলো ভুলে যেতে থাকেন তারা।
অমনোযোগিতা : কোন কাজে মনযোগ বেশিক্ষণ দিতে পারেন না। নিজের কাজগুলোও করতে পারেন না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যবহার করতে পারেন না। যেমন চুল আচড়ানোর জন্য চিরুনি ব্যবহার করা, রান্না করা, বাথরুম ব্যবহার করা ইত্যাদি। শেষ পর্যায়ে খাবার চিবিয়ে খেতে হবে তাও মনে রাখতে পারেন না।
আচরণগত সমস্যা : শুরুতে খুব পরিচিত জায়গা ভুলে যান। স্টাইলিশ কেউ হঠাৎ করে ছেঁড়া কাপড়চোপড় পরা শুরু করেন। যিনি সব সময় চুল পরিপাটি করে সাজিয়ে রাখতেন তার চুল থাকে উষ্কখুস্ক। মুড খুব দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। নিজের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন থাকেন।
মানসিক সমস্যা : এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি শুরুতে তার সমস্যা বুঝতে পারেন ফলে অন্যদের তিনি তা বলেন কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনি তার সমস্যা বেমালুম ভুলে যান। মনে করেন তিনি ঠিক আছেন। শুরুতে তিনি বুঝতে পারেন তার কি হতে যাচ্ছে তাই তিনি দুশ্চিন্তা করেন। পরিচিত কাউকে চিনতে না পারার কারণে লজ্জিত হন। ডিপ্রেশন তাকে ঘিরে ধরে। কিন্তু পরে তিনি বেশ এগ্রেসিভ হয়ে যান। যে কাউকে মারধর করতে চান। তার মধ্যে নানান মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি পরিচিতদের অপছন্দ করেন, মনে করেন তারা তাকে মেরে ফেলবেন। যে জীবনসঙ্গীকে ভালো বেসেছেন নিজের থেকেও বেশি শেষ বয়সে এসে তাকে সন্দেহ করা শুরু করেন।
রোগ নির্ণয় : এ রোগ নির্ণয় করার কোন টেস্ট নাই। তাই পরিবারের সদস্যদের কথার ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে মেন্টাল স্টেট পরীক্ষা করে ধারণা পাওয়া যায়। অনেক রোগ আছে যাতে স্মৃতিভ্রম হতে পারে যেমন থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, ডিপ্রেশন, স্ট্রোক, ব্রেন টিউমার ইত্যাদি। এ রোগগুলোর কিন্তু চিকিৎসা আছে। চিকিৎসা করালে স্মৃতিলোপ ভালো হয়ে যায়। তাই স্মৃতিভ্রমের সমস্যা দেখা মাত্র নিউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হবেন। আবার বলছি কোনোভাবেই দেরি করবেন না।
আলঝেইমার্স রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখাশুনা করা জরুরি। এরা শিশুর মতো হয়ে যান তাই তাদের শিশুর মতোই টেককেয়ার করতে হবে। আমরা মনে করি বুড়ো বয়সে ভিমরতি করছেন। শিশুদের ব্যাপারগুলো খুব সহজে মানতে পারলেও বয়স্কদেরটা পারি না। তাই অহেতুক খারাপ ব্যবহার করি। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি আরোও মানসিক চাপে পড়েন। তাই এ রোগে আক্রান্তদের সেবা করতে হবে খুব যতœ নিয়ে একেবারেই শিশুর মতো করে। পরিবারে খুব হাসিখুশি পরিবেশ রাখার চেষ্টা করতে হবে।
আলঝেইমার্স আক্রান্তকে বোঝা মনে করবেন না বরং আপনার ঋণ শোধ করার কথা চিন্তা করুন। আপনার বাবা-মা আপনাকে কত কষ্ট করে লালনপালন করেছেন তা বুঝার চেষ্টা করুন। তাদের ঋণ শোধ করার সুযোগ কিন্তু সবাই পান না, মনে রাখবেন। আপনি কাজে লাগান, শান্তি পাবেন।
আলঝেইমার্স আক্রান্তদের শারীরিকভাবে কর্মক্ষম রাখলে রোগ আস্তে চলা নীতি মেনে চলে। তাই তাদের নিয়ে বাইরে হাঁটতে যান।
এ রোগে আক্রান্তরা সূর্য ডোবার সময় খুব আপসেট হন যা সারারাত ধরে চলতে থাকে। তাই সূর্য ডোবার আগেই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে লাইট জ্বালিয়ে দিন।
আলঝাইমার্স রোগ খুব খারাপ হওয়ার আগেই তার জমিজমা, সম্পদের ব্যবস্থা করতে পারেন। না হলে পরে ঝামেলায় পড়তে পারেন।
যাদের পরিবারে এ রোগী আছেন বা যারা তাদের সেবাযতœ করেন তাদের মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভালোবাসার মানুষটির এমন অবস্থা সহজে মেনে নিতে পারেন না। এমনটি হলে চিকিৎসকের পরার্মশ নিন। নিজেকে সময় দিন। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করুন।
আলঝেইমার্স রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে অনেকেই জানতে চান। এটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে। এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তা হলো শাকসবজি, মাছ, বাদাম বেশি করে খেলে ও শারীরিক পরিশ্রম করলে এ রোগের আক্রান্তের সম্ভাবনা কমে।
লেখক : মেডিক্যাল অফিসার
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল


আরো সংবাদ



premium cement
কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩ ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’

সকল