১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাঁচকি মাছের চানাচুর

- ছবি : সংগৃহীত

ইলিশের স্যূপ, নুডুলস, পাঙ্গাসের আচার, মাছের পিৎজার পর এবার দেশী প্রজাতির কাঁচকি মাছের চানাচুর তৈরি করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের একদল গবেষক। যেসব বাচ্চারা ছোট মাছ খেতে চায় না তাদের জন্য বিকল্প উপায়ে মাছের পুষ্টি গ্রহণের উপায় উদ্ভাবন করেছেন কাঁচকি মাছ প্রক্রিয়া। শুধু তাই নয়, কাঁচকি মাছের চানাচুর, কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বারও তৈরি করেছেন বাকৃবির গবেষকরা।

রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন গবেষক দলের প্রধান ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার। গবেষণায় সহযোগী ছিলেন প্রভাষক মো: মোবারক হোসেন।

ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার বলেন, কাঁচকি দেশী প্রজাতির খুব ছোট ও প্রায় স্বচ্ছ একটি মাছ। মাছটি দেশের নদ-নদী, খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। কিন্তু মাছের আকার ছোট ও কাঁটাযুক্ত হওয়ায় অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন না। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা খেতে চায় না। কিন্তু এই ছোট মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। যারা ছোট মাছ খেতে চায় না, বিকল্প উপায়ে তাদের সেই পুষ্টি গ্রহণের উপায় হিসেবে তৈরি করা হয়েছে এই মাছের চানাচুর ও বার। দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ থেকে তৈরিকৃত খাদ্য উৎপাদনে গবেষণায় কাঁচকি মাছকে নির্বাচন করি। কাঁচকি মাছে শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ‘এ’ বিদ্যমান। বর্তমানে এ মাছটির প্রচুর পরিমাণে আহরিত হচ্ছে।

হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাঁচকি মাছ গুরুত্বপূর্ণ। মাছের এই প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল সহজে তারা যেন পেয়ে যায় এ জন্যে দু’টি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ছয়টি পণ্য উৎপাদন করেছি। শিশুসহ সকল বয়সের মানুষের চানাচুর ও বার জাতীয় খাবারটি খুব পছন্দনীয়। তাই ক্যাটাগরি-১-এর পণ্যগুলো মূলত চানাচুর জাতীয়। অন্য দিকে ক্যাটাগরি-২-এর পণ্যগুলো মূলত কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বার জাতীয় (যা স্থানীয়ভাবে তিল বাদাম তক্তি হিসেবে পরিচিত) করে তৈরি করা হয়েছে। এতে তারা এসব মুখরোচক খাবারের সাথে মাছের পুষ্টিও গ্রহণ করতে পারবে।

মো: মোবারক হোসেন বলেন, মুখরোচক খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিমান বৃদ্ধির লক্ষেই আমরা গবেষণা প্রকল্পটি সম্পন্ন করেছি। ছোট মাছের কাটা খেতে হবে চিবিয়ে। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যাবে। অন্য দিকে গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দিয়ে থাকে এ কাঁচকি মাছ।

তিনি আরো বলেন, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশ নিউট্রিশন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা যায়, চানাচুর জাতীয় পণ্যগুলোতে গড়ে ৪-৫ % ময়েশ্চার, ২৬-৩০% লিপিড, ১৮-২২% প্রোটিন, ৫% মিনারেল, ২% ফাইবার ও ৩৯-৪২% কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। যেখানে সাধারণ চানাচুরে প্রোটিন থাকে ১২-১৩%। বার জাতীয় পণ্যগুলোতে ২০-২২ % ময়েশ্চার, ১৩-১৯% লিপিড, ১৩-১৫% প্রোটিন, ১২-১৫% মিনারেল, ২-৩% ফাইবার ও ৩২-৩৪% কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়।

তিল ও বাদামের পণ্যগুলো তৈরি করা হয় বাদাম, মাছ, তিল ও গুড়ের সমন্বয়ে। প্রথমে উপাদানগুলো স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে শুষ্ক করে নেয়া হয়। যেখানে মাছ, তিল ও বাদাম প্রথমে ভেজে নেয়া হয়। মাছগুলো মিডিয়াম তাপমাত্রায় ভেজে নেয়া হয়। এতে মাছগুলো মচমচে হবে। পরে আখের গুড়ের সাথে মিশিয়ে এসব বার তৈরি করা হয়। অন্য দিকে বাজারের তৈরি চানাচুরের সাথে প্রক্রিয়াকৃত মাছ মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে চানাচুর। মাছ দিয়ে তৈরি এসব পণ্যে পরবর্তীতে মাছে কোনো গন্ধ থাকে না। জিপার ব্যাগে পণ্যগুলো দুই মাসের বেশি সময় পর্যন্ত ভালো থাকে বলে জানান গবেষক দলের প্রধান নুরুল হায়দার।

পণ্যগুলোর বাজার মূল্য কেমন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণ প্রাণের ২৫ গ্রামের যে পিনাট বার পাওয়া যায় তার দাম ১০ টাকা করে। তাই মাছের তৈরি বারের দাম ১৫-২০ টাকা করে হতে পারে। প্রতিকেজি মাছের তৈরি বার বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা ৬০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন। অন্য দিকে মাছের চানাচুরের দাম নির্ধারণ হবে মাছের পরিমাণের ওপর। চানাচুরে মাছের পরিমাণ যত বেশি হবে তার দামও তত বেশি হবে।

এ বিষয়ে ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা বলেন, এ ধরনের পণ্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে দেশীয় পুষ্টিকর ছোট মাছগুলো সকল শ্রেণীর ভোক্তাদের মাঝে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে, যা বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।


আরো সংবাদ



premium cement