২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মহিলাদের গর্ভকালীন সময় সৃষ্ট হাঁপানি বা অ্যাজমা

-


প্রতিটি নারীর জীবন পরিপূর্ণ হয় মাতৃত্ব লাভের মাধ্যমে। নারীর জীবনে মা হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আর এই মা হওয়ার সময় অর্থাৎ গর্ভকালীন সময়ে মেয়েদের নানা রকম অসুবিধা দেখা দেয়। আমাদের দেশের মেয়েরা প্রেগনেন্সির সময় প্রায়ই হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
গর্ভাকলীন সময়ে নারীদের বিভিন্ন রকম দৈহিক জটিলতার মধ্যে হাঁপানি হচ্ছে একটি। সঠিক সময়ে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হয়ে গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের পক্ষে অ্যাজমায় আক্রান্ত হয়েও একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করা সম্ভব। অনেকে ধারণা করে থাকেন, ‘গর্ভকালীন সময়ে হাঁপানিতে আক্রান্ত মায়ের পক্ষে সুন্দর, সুস্থ ও স্বাভাবিক শিশু জন্ম দেয়া সম্ভব নয়।’ কিন্তু এ ধারণা ঠিক নয়।
গর্ভকালীন সময়ের হাঁপানি নিয়ে অনেক মহিলাই খুব দুশ্চিন্তায় ভোগেন। এ সময়ের হাঁপানির অবস্থা সবার একরকম হয় না। কারো কারো অ্যাজমার পরিমাণ কমে যায়, আবার কারো বেড়ে যায়। কখনো ডেলিভারির কিছু মাস আগে গর্ভবতী মায়ের শ্বাসকষ্টের পরিমাণ বেড়ে যায়। কোনো কোনো মেয়ে যারা প্রথম মা হচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে হয়তো হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে কিন্তু দ্বিতীয়বার মা হওয়ার সময় তা নাও ঘটতে পারে। মাঝে মাঝে এর বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে।
জীবাণুঘটিত কোনো কারণে অ্যাজমার সৃষ্টি হয় না। যে সব মেয়ে ধূমপায়ী তাদের গর্ভাবস্থায় হাঁপানির প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। সন্তান পেটে থাকা অবস্থায় ধূমপান করলে শিশুর হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সম্ভাবনা থাকে এবং শিশুর ওজনও কমে যায়। গর্ভকালীন সময়ে একজন ধূমপায়ীর পাশে থাকাও উচিত নয়। এ ছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছেÑ মাকে তার পেটের মধ্যে বড় হওয়া শিশুটির জন্য অনেক ওজন বহন করতে হয়।
সন্তান প্রসবকালে গর্ভবতী মায়ের অ্যাজমায় আক্রমণের প্রকোপতা খুব বেশি থাকে না। এর কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়, এ সময় মায়ের শরীরে অধিক পরিমাণে এড্রিনালিন জৈবরস এবং কোরটিকো স্টেরয়েড উৎপন্ন হয় যা অ্যাজমা বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে থাকে। যদিও গর্ভকালীন হাঁপানি শিশুদের জন্য বেশি ক্ষতিকারক নয়। কিন্তু তবুও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ সময় গর্ভবতী মাকে চলতে হবে। আর এ সময়ের হাঁপানি চিকিৎসা মা ও তার পেটের সন্তান উভয়কে সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অবদান রাখে। হাঁপানি বা অ্যাজমা কোনো স্বল্পমেয়াদি রোগ নয়। তাই এ ব্যাধি খুব দ্রুত ভালো হয় না। তবে প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহারে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। গর্ভকালীন হাঁপানি বা অ্যাজমার ক্ষেত্রে রোগীর কফ যদি পেকে না যায় বা কফ পরীক্ষার পর যদি জীবাণু পাওয়া না যায় তবে রোগীকে কখনো এন্টিবায়োটিক দেয়া উচিত নয়।
গর্ভবতী মহিলাদের হাঁপানির ওষুধ প্রধানত দুই প্রকারেরÑ
যে সব ওষুধ হাঁপানি রোগীর শ্বাসকষ্ট লাঘব করে এগুলোকে আরামদায়ক ওষুধ বলে। এই জাতীয় ওষুধ হচ্ছেÑ সালবিউটামল, টারবোটালিন, এমাইনোফাইলিন। আর যে সব ওষুধ হাঁপানির লক্ষণ যাতে দেখা না দেয় সে ক্ষেত্রে বাধাদান করে, সেগুলোকে বাধাসৃষ্টিকারী ওষুধ বলা হয়। যেমনÑ স্টেরয়েড ইনহেলার যা কিনা শ্বাসের সাথে টেনে নিতে হয়। এটি হাঁপানির একটি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা। স্টেরয়েড ইনহেলারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে অনেক রোগীনীই দুশ্চিন্তায় ভোগেন। কিন্তু দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। কারণ এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। রোগিনী শ্বাসের সাথে এটি টেনে নিলে খুব অল্প পরিমাণে পেটের শিশুর রক্তের মাধ্যমে দেহে পৌঁছায় এবং বেশির ভাগ অংশ শুধু রোগিনীর ফুসফুসের ওপর প্রতিক্রিয়া করে। শিশুর দেহে যতটুকু পরিমাণ ওষুধ যায় তাতে শিশুর কোনো ক্ষতি হয় না।
এ ছাড়াও রোগীর শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার পরিমাণ বেশি হলে অ্যারো চেম্বার বা স্পেসারের সাহায্যে ওষুধ দেয়া হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গর্ভবতী হাঁপানি মায়েদেরকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া বেক্লোফোর্ট বা বিকোটাইড এবং টাইলেড ইনহেলার, সালবুটামল ইনহেলার দেয়া হয়। প্রেডনিসোলন (স্টেরয়েড ট্যাবলেট) সেবনে শিশুর তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ এটি শুধু মায়ের রক্তে কাজ করে। নিডোক্রেমিনাল সোডিয়াম এবং সোডিয়াম ক্রোমগ্লাইকেট ওষুধগুলো নন-স্টেরয়েড এবং প্রদাহবিরোধী ওষুধ। এসব ইনহেলার ব্যবহারে রোগীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় নেই। প্রসবকালীন সময়ে যদিও হাঁপানি জটিল বা মারাত্মক আকার ধারণ করে না, কিন্তু যদি কোনো রোগীনীর সিজারের প্রয়োজন হয় তবে যে চিকিৎসক অপারেশন করবেন তাকে আগে থেকে জানিয়ে রাখতে হবে যে, রোগিনী হাঁপানিতে আক্রান্ত।
একটি সুস্থ ও সুন্দর শিশু জন্ম দেয়া প্রতিটি মায়েরই কাম্য। তাই যে সব ওষুধ সেবনে পেটের শিশুর ক্ষতি হতে পারে সে সব ওষুধ এড়িয়ে চলতে হবে। যে সব শিশুর বাবা কিংবা মায়ের হাঁপানি থাকে সে সব শিশুর দেহে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সব শিশুরই যে এ রোগ হবে সে ধারণা ঠিক নয়। শিশু জন্ম নেয়ার পরও মা তার হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ সেবন করতে পারেন। হাঁপানির ওষুধ সেবনরত অবস্থায় মা তার সন্তানকে বুকের দুধ পান করালে শিশুর কোনো প্রকার অসুবিধা হয় না।
লেখক : অধ্যাপক, রেসপিরেটরি মেডিসিন


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল