২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শুরুতেই ডেক্সামেথাসনে চিকিৎসা বন্ধের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ডেক্সামেথাসন ট্যাবলেট - ছবি : সংগৃহীত

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে এসে এক শ্রেণীর চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হলেই রোগীকে ডেক্সামেথাসন ট্যাবলেটসহ আরো অনেক ধরনের ওষুধ যেমন রেভারক্সাবান এবং অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিচ্ছেন। এর বিরোধিতা করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলছেন, এটা উচিত নয়। ডেক্সামেথাসন শুরুতে প্রয়োগ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে সেটাকে নষ্ট করে দেয়। তিনি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম (প্রতিরোধ ক্ষমতা) সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং এই ইমিউন সিস্টেম ফুসফুসে প্রবেশ করোনাভাইরাসসহ ভাইরাসে আক্রান্ত কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে।

কিন্তু ডেক্সামেথাসন বা অন্যান্য স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ এই ইমিউন সিস্টেমের সক্রিয় হওয়াকে বাধা দেয় বা নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। ডেক্সামেথাসন বা স্টেরয়েডের কারণে ইমিউন সিস্টেম ফুসফুসের করোনাভাইরাস ধ্বংস না করে ভাইরাসের রিপ্লিকেশন বা বংশবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং করোনা সংক্রমণ আরো বাড়িয়ে দেয়। এতে করে মৃদু ধরনের করোনা সংক্রমণ (মাইল্ড কোভিড) হঠাৎ করেই মারাত্মক (সিভিয়ার) আকার ধারন করতে পারে।

ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, গত বছর যুক্তরাজ্যের রিকভারি ট্রায়াল থেকেই মূলত কোভিড চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসনের ব্যবহার করতে বলা হয়। সেক্ষেত্রে সেই রিকমেন্ডেশনে পরিষ্কার করে উল্লেখ ছিল যে, কোভিডে আক্রান্ত রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে ঠিক তখনই প্রতিদিন ছয় মিলিগ্রাম করে ডেক্সামেথাসন দিতে হবে সাত দিন। যে সকল কোভিড রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই তাদের কোনোভাবেই ডেক্সামেথাসন দেয়া যাবে না।

ড. মেহেদী আকরাম স্পষ্ট করে বলেন, কোভিডের শুরুতে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির সময় ডেক্সামেথাসন দেয়া যাবে না। রোগী অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করলে অর্থাৎ সাইটোকাইন স্টর্ম শুরু হলে তার মানে অতিমাত্রার ইনফ্লামেশন (জ্বালা-পোড়া) শুরু হলেই কেবল ডেক্সামেথসন দেয়া শুরু করতে হবে। করোনা আক্রান্ত শুরু হওয়ার পর পরই ডেক্সামেথাসন ট্যাবলেট খাওয়ানো শুরু করা হলে তা রোগীর জন্য মহাবিপদই ডেকে আনা হয়। যেখানে রোগী এমনিতেই ভালো হয়ে যেতে পারত সেখানে ডেক্সামেথাসনের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি মারাত্মক করোনায় সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে অবস্থান করতে পারে, এমনকি তার মৃত্যুও হতে পারে।

ড. মেহেদী আকরাম বলেন, এছাড়াও করোনার সময় উচ্চমাত্রার ডেক্সামেথাসন বেশিদিন সেবন করলে আক্রান্ত ব্যক্তি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসেও আক্রান্ত হতে পারে। যেখানে রোগীর নিজের প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতার কারণে সুস্থ হয়ে যেতে পারত সেখানে রোগীকে ডেক্সামেথাসন মৃত্যুর দুয়ার পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে চিকিৎসকের সামান্য ভুলের কারণে। অতএব ইচ্ছামতো ওষুধ সেবন বন্ধ করতে হবে। করোনায় আক্রান্ত হলে ৯০-৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রোগী শুধু প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এবং কাশির ওষুধেই সুস্থ হয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য দৈনিক মৃত্যুহারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বের মধ্যে ওপরের দিকেই। আবার বাংলাদেশে উচ্চহারে শনাক্তের পরিমাণও বাড়ছে। এর মধ্যেই গত ১৫ জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এর একটা ফল আগামী কিছুদিনের মধ্যেই পাওয়া যাবে। ঈদ উপলক্ষে যাতায়াতকারীদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তিই শত শত মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা ভারতের চেয়ে আটগুণ কম। সে হিসেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ২৩০ জনের মৃত্যু ভারতের প্রায় দুই হাজারজনের মৃত্যুর সমান। সে বিবেচনায় বাংলাদেশে ভয়াবহতা চলছে। এর মধ্যেই লকডাউন তুলে দেয়ায় শিগগিরই পুরো দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রভাব পড়তে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement