১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গর্ভকালীন কোমর ব্যথার সহজ সমাধান

-

প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে থাকে কিছু কষ্ট, থাকে ব্যথা। শিশুর একচিলতে হাসির জন্য প্রসূতি মাকে সহ্য করতে হয় যাতনা। প্রসব বেদনা যে না পায় তার পক্ষে অনুভব করা অসম্ভব। গর্ভধারণের শুরুতে মর্নিং সিকনেসও কিন্তু মেয়েদের কম ভোগায় না। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসের পর মেয়েরা কোমর ব্যথায় ভোগেন বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে যে, শতকরা ৫০ থেকে ৭০ ভাগ গর্ভবতীই এ ব্যথায় ভোগেন। তবে আনন্দের ব্যাপার হলো এ ব্যথা কিন্তু আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এটি পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। তার পরও ব্যথা একটি অস্বস্থিকর অবস্থা। কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললে এ ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়।
গর্ভকালীন সময় মেয়েরা অতিরিক্ত ওজন লাভ করে। এ সময় মেয়েদের শারীরিক ওজন প্রায় ১২ থেকে ১৮ কেজি বাড়ে। এ অতিরিক্ত ওজন বহন করতে গিয়ে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়ে। কোমরের দিকের মেরুদণ্ডের অংশে বেশি চাপ বহন করতে হয় বলে ব্যথাটাও কিন্তু এই অংশে বেশি হয়। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময় রিলাক্সিন নামক একটি হরমোনের আধিক্য বেড়ে যায়। এ হরমোনটি শরীরের তলপেটের বিভিন্ন লিগামেন্ট ও মেরুদণ্ডের স্পাইনকে শক্তি জোগায় এমন লিগামেন্টগুলোকে রিলাক্স বা প্রসারিত করে। ফলে স্পাইনগুলো দেহের উপরের অংশের ওজন বহন করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি পায় না। এ কারণেও হতে পারে কোমর ব্যথা।
জরায়ু বড় হয়ে যাওয়ায় মেয়েরা নিজের অজান্তেই কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে হাঁটাচলা করে। কোমর বাঁকানোর ফলেও হতে পারে ব্যথা। এ ছাড়া মেয়েরা অনাগত সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তা, ভয় ও পারিপার্শি¦ক কোন কারণে মানসিক অবসাদে থাকলে এ ব্যথা বেশি আকার ধারণ করতে পারে। ব্যথা নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। এটি খারাপ ধরনের কোনো ব্যথা নয়। আপনাকে একটু কষ্ট দিবে এই যা। আপনার নাড়ি কাটা ধনকে বুকে তুলে নিতে একটু কষ্ট না হয় সহ্য করলেন। ব্যায়াম করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব গাইনিকোলজি ও অবসটেট্রিক্স-এ ২০০৫ সালের একটি প্রবন্ধে দেখানো হয় যেসব গর্ভবতীরা গর্ভধারণের ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন করে ১২ সপ্তাহ ব্যায়াম করে তাদের কোমর ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়। এ কথা শুনে আবার অতিরিক্ত বা বেশি পরিশ্রমের ব্যায়ামগুলো করতে যাবেন না। এতে করে আপনার গর্ভপাতের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি হাল্কা ব্যায়াম যেমন হাঁটতে পারেন, সাইক্লিং করতে পারেন। পেটের ওপর বেশি চাপ পড়ে এ ধরনের ব্যায়ামগুলো এড়িয়ে চলুন। যেকোনো ব্যথায় গরম বা বরফ ছ্যাঁক ভালো কাজ করে। বরফ বা ডিপ ফ্রিজে রাখা গোশতের পোটলা একটি তোয়ালে পেঁচিয়ে কোমরে ধরে রাখুন প্রায় মিনিট বিশেক। এভাবে দিনে কয়েকবার রাখুন। দুই-তিন দিন পর শুরু করুন গরম ছ্যাঁক। একটি বোতলে গরম পানি ভর্তি করে কোমরে ধরে রাখুন। তবে সাবধান পেটে কিন্তু ছ্যাঁক দিবেন না। এতে করে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হাঁটার সময় সোজা হয়ে হাঁটুন। কোথাও বসলে কোমরের নিচে একটি কুশন বা কাপড় প্যাঁচিয়ে কোমর সোজা করে বসুন।
ঘুমের সময় দুই হাঁটুর ফাঁকে একটি বালিশ দিন। ডান দিকে কাত হয়ে ঘুমান, চিৎ হয়ে ঘুমাবেন না। হাই হিল ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। নিচ থেকে কোনো জিনিস তোলার সময় কোমর না বাঁকিয়ে প্রথমে বসে জিনিসটি তুলুন। অবসর সময়ে মজার বই, গান শুনে, আড্ডা দিতে পারেন। এতে মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে পারবেন। স্বামীদেরও ভূমিকা পালন করার আছে। স্ত্রীকে হাসি-খুশি রাখার চেষ্টা করুন। তাকে বেশি করে সময় দিন। এরপরও যদি ব্যথা অসহ্যকর মনে হয় তবে চিন্তার কারণ নেই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ সেবন করতে পারেন। ব্যায়াম, কোমর না বাঁকানো, গরম-বরফ ছ্যাঁকে ব্যথা অনেকাংশে সহনীয় পর্যায়ের মধ্যে চলে আসে। কিন্তু এতেও যদি ব্যথা না কমে তবে অ্যাসিটামিনোফেন দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। একটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে অ্যাসপিরিন, ন্যাপ্রোক্সেন, ইবুপ্রফেন ও অন্যান্য ব্যথানাশক সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলো কিন্তু গর্ভকালীন ও গর্ভস্থ শিশুর নানাবিধ সমস্যার কারণ হতে পারে। এ ব্যথা নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা নেই। তবে ব্যথা প্রচণ্ড রকমের হলে ও অস্টিওপোরোসিস, কশেরুকার অস্টিওআর্থাইটিস হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
লেখক : স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতাল

 


আরো সংবাদ



premium cement