১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনার মধ্যে নতুন উদ্বেগ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন, বাড়াচ্ছে ‍মৃত্যু ঝুঁকি

ভারতে করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশনে - ছবি : বিবিসি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের সাথে সাথে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন বা কালো ছত্রাক সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এমন খবর এখন পাওয়া যাচ্ছে।

বিষয়টি বেশি ঘটছে ভারতে এবং সেখানকার চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বাড়ার মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করছে এই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর অনেকে মারাত্মক এই ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন এবং এমন আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে চিকিৎসকদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে ভারতীয় গণমাধ্যম।

কোভিড ভাইরাসের কারণে যখন রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কম থাকে, তখন সেই ব্যক্তি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে সেটি মুহূর্তের মধ্যেই মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধ তৈরি করার জন্য ভারত সরকার তাদের একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের সমস্যাগুলোই করোনা-উত্তর সময়ে নতুন সংকট তৈরি করতে পারে, যেগুলোকে তারা পোস্ট কোভিড বা লং কোভিড সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

কেন হয়?
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন জানাচ্ছেন, করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয় বলে পরে 'মিউকোরমাইসিসিস' বা এ ধরনের কালো ফাঙ্গাসের ইনফেকশন হতে পারে।

তিনি বলেন, রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় সব ওষুধ দিতে পারেন। তবে তারপরেও সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোন ওষুধে কী ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে সেটিও দেখতে হবে।

‘বিজ্ঞানীদের পরামর্শকে বিবেচনায় নিতে হবে। না হলে এ ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন ভবিষ্যতে বড় আকারের সমস্যায় রূপ নেয়ার আশংকা আছে,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মুশতাক হোসেন বলেন, যেসব রোগী আইসিইউতে যাচ্ছেন তাদের অনেক সময় স্টেরয়েড দিতে হয়, কিংবা এর আগেও চিকিৎসক এটি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা বোধ করতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হলো এই স্টেরয়েডই পরে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ছত্রাক সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

‘তাই এসব বিষয়ে সতর্কতার বিকল্প নেই,’ মন্তব্য করেন তিনি।

ভারতীয় চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে সেখানকার গণমাধ্যমও বলছে, মিউকোরমাইসিসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণে বেশি সমস্যায় পড়ছেন আইসিইউতে থাকা রোগীরাই।

বিশেষ করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে যাদের ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা হার্টের সমস্যার মতো কোনো রোগ থাকে, তারাই বেশি আছেন এই সংক্রমণের ঝুঁকিতে।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন আসলে কী?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক লেলিন চৌধুরী জানান, মানুষের শরীরে অনেক ধরণের ইনফেকশন হতে পারে - এবং এগুলো হতে পারে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাস থেকে।

মূলত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিপর্যস্ত হলে শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ফাঙ্গাস এই ইনফেকশনগুলো শুরু করে এবং সে কারণেই কোভিডের পর এ ধরনের প্রবণতা বেশি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘করোনার লক্ষণ ও প্রভাবের কোনো শেষ নেই। মজা করে বলা হলেও এটি সত্যি যে প্রেগন্যান্সি আর ফ্রাকচার ছাড়া আর সবকিছুই করোনার লক্ষণ হতে পারে। মানসিক রোগ থেকে শুরু করে হার্ট বা মস্তিষ্ক - কোনো কিছুই এর বাইরে নয়। আবার পোস্ট-কোভিড সম্পর্কিত সমস্যাকে এখন লং কোভিড বা দীর্ঘমেয়াদী কোভিড বলা হচ্ছে।

‘অর্থাৎ করোনাভাইরাস সেরে গেলেও নতুন করে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফাঙ্গাস ইনফেকশন তারই একটি,’ বলছিলেন লেলিন চৌধুরী।

এই চিকিৎসক জানান, রক্ত, চামড়া, মুখ, নখসহ শরীরের নানা জায়গায় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন হতে পারে এবং সাধারণত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।

লক্ষণগুলো কেমন, কারা বেশি আক্রান্ত হন
মুশতাক হোসেন ও লেলিন চৌধুরী দু'জনেই মনে করেন, করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন, এমন যে কেউ, অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম - তারাই এ ধরনের ইনফেকশনে পড়ার ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশনের লক্ষণের বিষয়ে ভারতীয় চিকিৎসকদের অনেকে বলছেন, রোগীর চোখ জ্বালা পোড়া করা, নাক বন্ধ থাকা, জ্বর, দৃষ্টিশক্তি কমে আসা-সহ অনেকগুলো লক্ষণ তাদের চোখে পড়েছে।

আবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ফুসফুস দুর্বল থাকায় সহজেই ফুসফুসে আক্রমণ করে এই ছত্রাক। এরপর তা ধীরে ধীরে পুরো শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে রোগীকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিতে পারে বলে তারা মনে করেন।

সাম্প্রতিক সময়গুলোতে গুজরাট ও দিল্লিতে এমন অনেক রোগী পাওয়া গেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম খবর দিচ্ছে।

নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, চোখ কিংবা গাল ফুলে ওঠা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশনের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া, নাক দিয়ে কালো কিছু বেরিয়ে এলে সাথে সাথে বায়োপসি বা পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা শুরুর জন্য ভারতীয় চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন।

ফাঙ্গাস ইনফেকশন দ্রুত চিহ্নিত করে ওষুধ প্রয়োগ করার মাধ্যমে ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশের লেলিন চৌধুরী।

‘বাংলাদেশে এ রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ওষুধ যথেষ্ট আছে। তাই, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে যেকোনো ধরনের পোস্ট-কোভিড জটিলতা হলেই দ্রুত চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement