২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কী কারণে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ও দ্বিতীয় ডোজ নেয়া জরুরি?

-

এ মুহূর্তে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে খুব আলোচনা চলছে। এই আলোচনা কতটা যৌক্তিক? একটি উদাহরণ দেয়া যাক। আমেরিকায় প্রায় ৭০ লাখ মানুষকে জনসন ও জনসনের ভ্যাকসিন দেয়ার পর ছয়জনের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনায় এই ভ্যাকসিন দেয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। এ রকম সাময়িক বন্ধ রাখা স্বাভাবিক একটি বিষয়। মধ্যবর্তী এই সময়ে দেখা হবে ভ্যাকসিন দেয়ার সাথে রক্ত জমাট বাঁধার সত্যিকারেই কোনো সম্পর্ক আছে কি না। এ ছাড়াও মধ্যবর্তী এই সময়ে চিকিৎসকদের জানানো হবে এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যদি অন্য কোনো ব্যক্তির মধ্যে পরিলক্ষিত হয় তাহলে তা কিভাবে তার চিকিৎসা দিতে হবে। ধারণা করা হচ্ছে শিগগিরই এফডিএ সাময়িক বন্ধ রাখার প্রক্রিয়াটি তুলে নিয়ে ভ্যাকসিনটি আবার জনসাধারণকে দেয়ার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, কেউ যদি করোনাভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে তার রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা অনেক অনেক গুণ বেশি। ভ্যাকসিন দিয়ে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা একেবারেই নেই বললেই চলে। আর তা হলেও প্রায় ৮৫% লোকদের চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে তোলা সম্ভব বলে ধারণা করা হচ্ছে। বহুল ব্যবহৃত যেকোনো ওষুধ (যেমনÑ প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড) শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত নয়। সেভাবে ভ্যাকসিনেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিছুটা থাকবে, তা স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য। করোনায় সারা বিশ্বে প্রতিদিন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। সেই অনুপাতে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটা নগণ্য, নিজেই ভেবে দেখুন।
অনেকেই আবার বলছেন যে, ভ্যাকসিন নেয়ার পরও ভাইরাস দিয়ে আক্রান্তও হচ্ছেন। তা কি ঠিক হতে পারে? দুই ডোজের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিলে খুব অল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়, তাই, দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিতে অবহেলা করবেন না। প্রথম ডোজ ভ্যাকসিনে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেহেতু পরিপূর্ণ হয় না, সে কারণেই প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধিগুলোও পরিপূর্ণভাবে মেনে চলুন।
দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেয়ার দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পরিপূর্ণ হবে। তাই, দ্বিতীয় ডোজ কোনোভাবেই বাদ দেয়া যাবে না। দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার দুই-তিন সপ্তাহ পর যারা ভ্যাকসিন ডোজ পরিপূর্ণভাবে শেষ করেছেন তারা কি করোনাভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হতে পারেন? উত্তর হলো, করোনাভাইরাস পজেটিভ হয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা করোনাভাইরাস শরীরের মধ্যে ঢুকে পরলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুব তাড়াতাড়ি সক্রিয় হয়ে ভাইরাসকে মেরে ফেলবে ও আমাদের রোগমুক্ত রাখবে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন পাওয়া যাচ্ছে যাও স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। ভাইরাসের পুরনো ধরন ব্যবহার করে যদি ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়ে থাকে তাহলে ভাইরাসের নতুন ধরনের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, তাই খুব অল্পসংখ্যক ভ্যাকসিন নেয়া মানুষ ভাইরাসের নতুন ধরন দিয়ে আক্রান্ত হলেও হতে পারেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভ্যাকসিন নেয়া কেউ করোনাভাইরাস পজেটিভ হলেও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকরী থাকায় ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাস দিয়ে খুব বেশি রোগাক্রান্ত হবেন না, রোগ হলেও তা হবে অল্প মাত্রার। ভ্যাকসিন নেয়া ব্যক্তিকে বেশি রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষা দেবে ভ্যাকসিন এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
মোদ্দা কথা হলো, ভ্যাকসিন দিয়ে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা একেবারেই নেই বললেই চলে। আবার ভ্যাকসিন নেয়ার পরও কেউ করোনাভাইরাসের নতুন ধরন দিয়ে আক্রান্ত হলেও তার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকরী থাকায় ওই ব্যক্তির অল্প মাত্রার রোগ হবে এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। ভাইরাসজনিত রোগ নির্মূল করতে ভ্যাকসিনের চেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ভ্যাকসিনের জন্যই কিন্তু গুটি বসন্ত দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে বিদায় নিয়েছে পোলিও। বিজ্ঞানের মহামূল্য অবদানের অন্যতম একটি হলো ভ্যাকসিন। ভ্যাকসিন নিন, সুস্থ থাকুন।
লেখক : ইমিউনোলজিস্ট, ড্রাগ ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি এফেয়ারস বিশেষজ্ঞ, নেদারল্যান্ডস


আরো সংবাদ



premium cement
গাজায় সাহায্য বাড়াতে ইসরাইলকে নির্দেশ আইসিজের দিল্লি হাইকোর্টে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা খারিজ বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা বছরে পৌনে ৩ লাখ মানুষের মৃত্যু দূষণে

সকল