২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনায় আক্রান্ত হলেই ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হবে

করোনায় আক্রান্ত হলেই ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হবে - ছবি : সংগৃহীত

করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ার পর থেকে হাসপাতালে সিট পাওয়া যাচ্ছে না। বাইরে না গিয়ে ঘরেই অবস্থান করতে হবে এবং করোনা পজিটিভ হওয়ার পর থেকেই চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হবে। এমতাবস্থায় শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে বুকের সিটি স্ক্যান করে রাখা উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, সিটি স্ক্যানে বুকের অবস্থা স্পষ্ট ধরা পড়ে। ফলে চিকিৎসকের কাছে সিটি স্ক্যান রিপোর্ট থাকলে করোনা রোগীদের সহজে এবং দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।

ডা: শামীম আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ইদানীং করোনা আক্রান্ত হলেও আরটি পিসিআর পরীক্ষায় নেগেটিভ আসছে। এর অনেকগুলো কারণের একটি হলো নাকের যে স্থানে ভাইরাস থাকতে পারে সেখান থেকে সোয়াব (শ্লেষ্মা) নিতে পারছেন না সংগ্রহকারী। ফলে করোনা আক্রান্ত হলেও পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসছে। সে কারণে অভিজ্ঞ সোয়াব সংগ্রহকারী হলে ভালো হয়। আবার করোনাভাইরাসের ঘনত্ব (কনসেনট্রেশন) কম হলে আরটি পিসিআর পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসে থাকে। ডা: শামীম আহমেদ জানান, এখন বলা হচ্ছে, করোনার নতুন ভেরিয়েন্টগুলো শ্লেষ্মা পরীক্ষায় পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়নি তবে ইউরোপ-আমেরিকার গবেষকরা বলছেন, নতুন ভেরিয়েন্ট নাকের শ্লেষ্মায় পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আগে করোনা হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পেতো না কিন্তু এখন প্রকাশ পাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে একটু বয়স্ক হলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে কিছু কিছু রোগীর লক্ষ্মণ প্রকাশের দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আইসিইউ সেবা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ডা: শামীম আহমেদ বলেন, সবচেয়ে ভালো হয়, প্রয়োজন না হলে ঘরেই অবস্থান করা। ঘরের বাইরে গেলে অন্যের স্পর্শে চলে আসতে হবে। আমরা তো জানিনা কে করোনা আক্রান্ত আর কে নয়। লক্ষ্মণ না থাকলেও আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের অজান্তেই অন্যের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে দেবে। সে জন্য যত দূর সম্ভব লকডাউনের মধ্যে বাড়ির বাইরে না যাওয়া।

তিনি বলেন, দেখা যাচ্ছে, অনেকেই করোনা না হলেও জিঙ্ক, অ্যান্টিবায়োটিক, ভিটামিন, রক্ত জমাট না বাঁধার ওষুধ (রক্ত তরলীকরণ ওষুধ) খাচ্ছেন। অনেক সময় চিকিৎসকরাও দিচ্ছেন এসব ওষুধ। কিন্তু করোনা প্রতিরোধে এসব ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই। এসব খেয়ে শুধু শুধু অর্থ খরচ করার কোনো মানে হয় না। ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে করোনা এমনিতেই শরীরে ধ্বংস হয়ে যায়। ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে হাসপাতাল সেবা লাগে। আবার এর মধ্যে ২ থেকে ৩ শতাংশের ক্ষেত্রে আইসিইউ সেবা প্রয়োজন হয়।

করোনা হলে যেসব লক্ষ্মণ দেখা দেবে সেগুলো হলো- জ্বর আসবে অথবা ঠাণ্ডা লাগবে, কাশি হবে, শ্বাসকষ্ট অথবা ঘন ঘন শ্বাস নেবে, অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেবে, মাংস পেশি অথবা শরীরে ব্যথা অনুভূত হবে, মাথা ব্যথা, জিহ্বায় স্বাদ চলে যাবে অথবা নাকে গন্ধ থাকবে না, গলা ব্যথা হবে, সর্দি (তরল অথবা ঘন), বমি হবে অথবা বমি বমি ভাব হবে, ডায়রিয়া হতে পারে। সিডিসি বলছে, তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত লোকের মধ্যে প্রকাশ পাওয়া লক্ষণগুলোর তালিকা করার চেষ্টা করছে।
বেশির ভাগ মানুষের মৃদু লক্ষণ থাকতে পারে, খুব বেশি অসুস্থ বোধ নাও করতে পারেন। তারা ঘরে অবস্থান করলে কোনো চিকিৎসা অথবা ওষুধ ছাড়াই সুস্থ হয়ে যান। ৯৫ শতাংশের ক্ষেত্রে এমনটি হয়ে থাকে।

তবে অনবরত বুকে ব্যথা, বিরামহীন শ্বাস কষ্ট, শরীর ব্যথা কমে না, এমন হলে অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে। এর বাইরে আরো কিছু উপসর্গ থাকতে পারে। করোনা হলেই ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হবে। একজন ডাক্তারই ভালো বুঝবেন কখন কী করতে হবে।

সিডিসির নির্দেশনা হলো- বাইরের কোনো কিছু স্পর্শ করলে আগে সাবান দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিতে হবে। এরপর শুকনো ও পরিষ্কার কাপড় দিয়ে হাত মুছে নিতে হবে। সাবান না থাকলে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে এমন স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। অসুস্থ হলে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কফ হলে তা টিস্যু পেপার জাতীয় কিছু দিয়ে ঢেকে ঢাকনা রয়েছে এমন ময়লার ঝুড়িতে ফেলতে হবে এবং হাঁচি দিলে নাকে রুমাল চেপে ধরতে হবে অথবা টিস্যু ব্যবহার করতে হবে। এসব কিছু না থাকলে অন্ততপক্ষে শার্টের হাতায় অথবা শাড়ির আঁচলে হাঁচি দিতে হবে। অসুস্থ থাকুন আর না থাকুন এ সময় বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরে থাকতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement