২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মাতৃদুগ্ধ অপরাজেয়, ১৪ মাসেও সংক্রামিত করতে পারেনি করোনা

মাতৃদুগ্ধ অপরাজেয়, ১৪ মাসেও সংক্রামিত করতে পারেনি করোনা - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের ১৪ মাস হয়ে গেল। সংক্রমণের মাধ্যমে মানব শরীরের প্রায় সব অঙ্গকে কাবু করে ফেললেও, এখন পর্যন্ত রহস্যময়ভাবে মায়ের দুধকে স্পর্শই করতে পারেনি করোনাভাইরাস। মানব সভ্যতার ইতিহাসের শুরু থেকে বর্তমান মহামারীর দিনগুলোতেও একইরকমভাবে রোগব্যাধির হাত থেকে অপরাজেয়ই থেকে গেল মাতৃদুগ্ধ।

শুরুর দিনগুলোতে চীনা বিজ্ঞানীরা মায়ের দুধ খাওয়া দু’-একজন শিশুর মধ্যে করোনা সংক্রমণের উল্লেখ করলেও, ওই সংক্রমণ যে মাতৃদুগ্ধ থেকেই হয়েছে, এখনো তার প্রমাণ মেলেনি। কয়েক হাজার কোটি টাকার গুঁড়ো দুধ লবির মুখে ঝামা ঘষে এখনো শিশুর সবচেয়ে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে প্রমাণিত মাতৃদুগ্ধ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) থেকে শুরু করে সায়েন্স, দি সায়েন্টিস্ট প্রভৃতি নামজাদা গবেষণা পত্রিকাগুলোও একবাক্যে মেনে নিয়েছে- করোনার এই দাপাদাপির মধ্যেও অপরাজেয় রয়ে গিয়েছে মাতৃদুগ্ধ। শুধু তাই নয়, এই দুধের মধ্যে থাকা ইমিউনোগ্লোবিউলিন ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধক উপাদান অন্যান্য রোগের পাশাপাশি করোনাও প্রতিরোধ করতে সক্ষম বলেও বলে করছেন ডঃ রেবেকা পাওয়েলের মতো আমেরিকান বিজ্ঞানীরা।

হু সাফ জানিয়ে দিয়েছে, করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ থাকা মাও মুখে মাস্ক পরে, হাত ধোয়া ইত্যাদি স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত মায়েদের থেকে সন্তানদের মধ্যে বিরল কয়েকটি করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটলেও, সেগুলো মাতৃদুদ্ধের কারণে হয়নি— এমন জানিয়েও দিয়েছেন চিকিৎসকরা। শুধু তাই নয়, সায়েন্স-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, আক্রান্ত মা সন্তানকে নিজের দুধ খাওয়ালে তার মধ্যে সার্ভ কোভ ২-এর প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। আর প্রথম দুধ বা কলেস্ট্রাম বস্তুত বাচ্চাদের ভ্যাকসিনের ভূমিকা নিতে পারে বলেও জানিয়েছে বিজ্ঞানীমহলের একাংশ। স্বভাবতই করোনার এতদিনকার সর্বগ্রাসী চেহারার মধ্যেও এই একটি জায়গায় তার হার মানার কারণ নিয়ে জোরদার গবেষণা হওয়া জরুরি— এমনই মনে করছেন রাজ্যের নামজাদা শিশু চিকিৎসক ও স্ত্রীরোগ-প্রসূতি বিশেষজ্ঞরা।

শনিবার ভারতের বিশিষ্ট শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অপূর্ব ঘোষ বলেন, বিজ্ঞানের এত জয়যাত্রার পরেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে আমরা কার্য-কারণের রহস্যভেদ করতে পারিনি। তার অন্যতম এই মাতৃদুদ্ধ। প্রকৃতিই যে এখনো মূল, মাতৃদুগ্ধের ঘটনা তার প্রমাণ। আসলে মাতৃদুগ্ধের মধ্যে বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট এবং অনির্দিষ্ট রোগ প্রতিরোধী উপাদান আছে। সেগুলোই তাকে এখনো নিখাদ এবং অপরাজেয় করে রেখেছে। একই সুরে পিজি হাসপাতালের বিশিষ্ট স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুভাষ বিশ্বাস বলেন, মায়ের প্রথম দুধ কলেস্ট্রাম ইমিউনোগ্লোবিউলিনে ভরপুর। সম্ভবত সেজন্যই করোনাও ছুঁতে পারেনি মাতৃদুগ্ধকে। এই রহস্য এখনো পুরোপুরি ভেদ করা যায়নি। বিজ্ঞানই শেষ কথা নয়, প্রাকৃতিক শক্তিকে কখনই অবহেলা করা যায় না। বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা জরুরি। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবলীনা ব্রহ্ম বলেন, শিশুরা মায়ের দুধ থেকে অত্যন্ত রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি আইজিজি পায়। এই অ্যান্টিবডিই তাকে সুরক্ষিত রাখে। শুধু তাই নয়, শিশুরা আকছার রাইনো ভাইরাস, মেটানিউমোভাইরাস ইত্যাদি সংক্রমণে আক্রান্ত হয়। তার অ্যান্টিবডিও তৈরি হয়। সেগুলিও তাদের সুরক্ষা দেয়।

সূত্র : বর্তমান


আরো সংবাদ



premium cement