২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনার টিকা নিয়ে যত প্রশ্ন ও উত্তর

করোনার টিকা নিয়ে যত প্রশ্ন ও উত্তর - ছবি : সংগৃহীত

কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনার অংশ হিসেবে বিশ্বজুড়েই গণ-টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বাংলাদেশেও বুধবার বিকেল থেকে শুরু হওয়ার কথা আনুষ্ঠানিক টিকাদান কর্মসূচি।

বিভিন্ন ধরণের তথ্য ও নির্দেশনা থাকার কারণে অনেক সময়ই এগুলো বিভ্রান্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু টিকা সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য রয়েছে যা জানা থাকলে এ পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা সম্ভব।

ভ্যাকসিন বা টিকা কী?
টিকা মানুষের দেহকে নির্দিষ্ট কোনো একটি সংক্রমণ, ভাইরাস কিংবা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত করে। টিকায় মূলত যে বস্তুটির কারণে ওই রোগটি হয় তার একটি নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল অংশ থাকে যাকে "ব্লু-প্রিন্ট" বলা হয়।

এই অংশটি দেহে একই রকমের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পরবর্তীতে ওই ভাইরাসের আক্রমণ শনাক্ত করতে সহায়তা করে এবং সেটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

টিকার কারণে খুব বেশি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম। তবে অনেকের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন, হাতে ব্যথা বা হালকা জ্বর।

তবে এর পরের ধাপ হচ্ছে, আপনি ওই রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা অর্জন করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি'র মতে ভ্যাকসিন বা টিকার সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয়টি হচ্ছে, অন্য ওষুধগুলো যখন কোনো একটি রোগের প্রতিকার করে বা সারিয়ে তোলে, টিকা সেখানে ওই রোগটিকেই প্রতিরোধ করে।

টিকা কি নিরাপদ?
টিকার একটি আদি রূপ আবিষ্কৃত হয়েছিল ১০ম শতকে চীনে। তবে ১৭৯৬ সালের আগে এটি স্বীকৃতি পায়নি। ওই বছর এডওয়ার্ড জেনার দেখেন যে, কাউপক্স বা গোবসন্ত রোগের মৃদু সংক্রমণ গুটি বসন্ত রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। তিনি তার এই তত্ত্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুই বছর পর গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার করেন এবং তখন থেকে ল্যাটিন শব্দ "ভ্যাকা" থেকে ভ্যাকসিন শব্দটির উৎপত্তি হয়। ল্যাটিন ভাষায় ভ্যাকা শব্দটির অর্থ হচ্ছে গরু।

আধুনিক বিশ্বের চিকিৎসা দুনিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ধরা হয় ভ্যাকসিন বা টিকাকে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভ্যাকসিন বা টিকার কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত ২০-৩০ লাখ মৃত্যু প্রতিরোধ করা এবং ২০টির বেশি রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

সিডিসি বলছে যে কোনো টিকা বাজারে আনার আগে সেগুলো নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানবদেহে প্রয়োগের আগে সেগুলো ল্যাবে প্রাণীর উপর পরীক্ষা করা হয় এবং সেটা নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের অনুমোদন নেয়া হয়। ঝুঁকি আছে আছে কিন্তু ওষুধের তুলনায় ঝুঁকির চেয়ে সুবিধাই বেশি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গুটি বসন্তের কথা যাতে কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে। যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে।

তবে এ ধরণের সাফল্য অর্জন করতে কয়েক দশকও লেগে যায়। গত বছরের অগাস্টে মাত্র আফ্রিকাকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এই রোগের টিকা দেয়া কর্মসূচি সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে আরো ৩০ বছর আগে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে সারা বিশ্বের মানুষকে কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়া এবং এর মাধ্যমে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে কয়েক মাস এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে।

টিকা কিভাবে তৈরি হয়?
কোন একটি রোগের জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্যারাসাইট কিংবা ফাঙ্গাস যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শরীরের অ্যান্টিজেন উপাদানটি অ্যান্টিবডির উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।

সচরাচর, দৈনন্দিন জীবনাচরণের সময় কোনো দেহে জীবাণু প্রবেশ করার আগে অ্যান্টিজেনের একটি নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল অংশ দেহে প্রবেশ করিয়ে দেয় টিকা। তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ওই আসল জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং প্রতিহত করে।

নতুন এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই আসলে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরি করা হয়েছে।

কোভিডের টিকা কিভাবে তুলনা করা হয়?
ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্না দুটি টিকাই মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন যা ভাইরাসের জেনেটিক কোড ব্যবহার করে।

দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিজেন ব্যবহারের পরিবর্তে এই টিকাগুলো দেহের কোষকে শেখায় যে কিভাবে একটি "স্পাইক প্রোটিন" তৈরি করতে হবে। এই স্পাইক প্রোটিনটি কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপরিভাগে থাকে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যে অ্যান্টিবডি দরকার হয় সেটি তৈরি করতে সাহায্য করে এই প্রোটিন।

অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন আবার আলাদা- বিজ্ঞানীরা শিম্পাঞ্জীকে আক্রান্ত করতো যে সাধারণ সর্দি লাগার ভাইরাস সেটিকে কিছুটা রূপান্তরিত করে তার সাথে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেনেটিক কোডের কিছু অংশ জুড়ে দিয়েছেন।

এই তিনটি টিকাই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের জন্য অনুমোদিত। মেক্সিকো, চিলি ও কোস্টারিকায় ফাইজার টিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ব্রাজিলে অক্সফোর্ড ও সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের অনুমোদন রয়েছে।

আরো কী কী কোভিড ভ্যাকসিন রয়েছে?
বেইজিংভিত্তিক সিনোভ্যাক এর তৈরি করা করোনাভ্যাক নামের টিকা এরই মধ্যে চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে দেয়া শুরু হয়েছে। এ টিকাটি প্রচলিত পদ্ধতি অর্থাৎ ভাইরাসের মৃত বা নিষ্ক্রিয় অংশ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

তবে এই ভ্যাকসিনটির কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য আসার পর এই প্রশ্ন ওঠে। আর ব্রাজিলের গবেষকরা এরইমধ্যে বলেছে যে এই টিকাটি মাত্র ৫০.৪ ভাগ কার্যকর।

ভারতে কোভিশিল্ড নামে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মিলে এই ভ্যাকসিনটি উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া ভারত বায়োটেক নামে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান কোভ্যাক্সিন নামে একটি টিকা উৎপাদন করছে।

রাশিয়া তাদের নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিন ভেক্টর ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি ব্যবহার করছে। যা ভাইরাসের একটি ভার্সন বা রূপ থেকেই বানানো হয়েছে। এ টিকাটি আর্জেন্টিনায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। এরইমধ্যে টিকাটির তিন লাখ ডোজ অর্ডার করেছে দেশটি।

ফাইজার, ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসন এন্ড জনসনের প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডোজ টিকা কেনার অর্ডার দিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। তবে জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানির টিকাটি এখনো ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে।

তবে গ্লোবাল কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় আরো ৬০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়নের। কোভ্যাক্স কর্মসূচিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গাভি নামে একটি ভ্যাকসিন অ্যালায়্যান্সের যৌথ তত্ত্বাবধানে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য টিকা নিশ্চিতে পরিচালিত হয়।

বিশ্বের কোথাও এখনো টিকা নেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে কোনো ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকলে সবাইকেই এই টিকা নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

সিডিসি বলছে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয় এই টিকা। সেই সাথে অন্যকে সুরক্ষিত রাখতেও সহায়তা করে। এই টিকাকে মহামারি থেকে উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে সংক্রমণ ছড়ানোকে বাধাগ্রস্থ করতে হলে ৬৫% থেকে ৭০% মানুষের টিকা নিতে হবে। তার মানে হচ্ছে মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অনেক মানুষ অবশ্য যে দ্রুততার সাথে কোভিডের টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

যদিও এটা সত্য যে বিজ্ঞানীরা একটা টিকার নকশা ও ট্রায়াল করতে কয়েক বছর পার করে দেন, তবে একটি সমাধান খুঁজে পাওয়ার পক্ষে বৈশ্বিক স্বার্থ কাজ করার কারণে টিকার উৎপাদন দ্রুততর হয়েছে। আর এই কাজটি করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিজ্ঞানী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় করেছে।

সংক্ষেপে, টিকাদান কর্মসূচী কোটি কোটি মানুষের মধ্যে কোভিডের সংক্রমণ ঠেকিয়ে দেবে এবং হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের পথ তৈরি করবে। এটা আমরা যত দ্রুত অর্জন করতে পারবো তত দ্রুত আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, তাদের তালিকায় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে ১৫৪টি ভ্যাকসিন।

এছাড়া ফেস-ওয়ানে ছোট আকারে নিরাপত্তা নিয়ে ট্রায়ালে রয়েছে ২১টি ভ্যাকসিন। ফেস টু-তে নিরাপত্তা ট্রায়ালে রয়েছে ১২টি এবং ফেস-থ্রি তে বিস্তারিত পরীক্ষা এবং কার্যকারিতার ট্রায়ালে রয়েছে আরো ১১টি ভ্যাকসিন।

আরো যেসব টিকার ট্রায়াল এখনো চলছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি। বলা হচ্ছে এটি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের মতোই কাজ করবে এবং এটি ৯২% সুরক্ষা দেয়া বলে এখনো পর্যন্ত জানানো হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে ছয় হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা করা হচ্ছে জ্যানসেন'স নামের একটি টিকা। পুরো বিশ্বে এই টিকার ট্রায়ালে অংশ নিয়েছে ৩০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী।

চীনের সিনোফার্ম ও উহান ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস চূড়ান্ত ট্রায়ালে রয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার গামেলিয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউটেরও একটি ভ্যাকসিন ট্রায়ালে রয়েছে।

কোন কোন দেশে টিকা দেয়া হচ্ছে?
করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হওয়ার পর ইসরাইলে এখন পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। সারা বিশ্বে টিকা দেয়ার এটাই সর্বোচ্চ হার।

ইসরাইলে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১১.৫৫ জনকে এই টিকা দেয়া হয়েছে। তার পরই রয়েছে বাহরাইন। ওই দেশে এই হার ৩.৪৯। তৃতীয় স্থানে ব্রিটেন, হার ১.৪৭।

ফ্রান্সে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৩৮ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট ছিল ২০২০ সালের মধ্যে দুই কোটি মানুষকে টিকা দেয়া কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা প্রায় ২৮ লাখ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে।

ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে এই টিকাটি আনা হচ্ছে। সিরাম ইন্সটিটিউট এই টিকাটি উৎপাদনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ভারতে তারাই এই টিকাটি উৎপাদন করছে।

সিরাম ইন্সটিটিউট- যারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্ততকারক এবং তারা প্রতি মাসে পাঁচ কোটি টিকা তৈরি করছে।

ভারতে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড এর মধ্যেই বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার ও সেশেলসে পাঠানো হচ্ছে।

এসব চালানের কোনটি যাচ্ছে উপহার হিসেবে, আর কোনটি সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে করা বাণিজ্যিক চুক্তির অধীনে।

এ ছাড়াও ভারত কোভিশিল্ড পাঠাচ্ছে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও মরিশাসে। ব্রাজিলে এ টিকা পাঠানো হবে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি অনুযায়ী।

কোভিশিল্ড কতটা কার্যকর?
কোভিশিল্ড দেয়া হলে মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে এবং যেকোনো রকম করোনাভাইরাস দেহে ঢুকলে তাকে আক্রমণ করতে শিখে যায়।

চার থেকে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি দেয়া হয়, এবং এটি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়- ফলে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার চেয়ে এটি সহজে বিতরণযোগ্য।

আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি প্রথমে আধা ডোজ এবং পরে পুরো ডোজ দেয়া হলে তার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হয়।

তবে এই পদ্ধতিতে টিকাটি দেবার পক্ষে যথেষ্ট স্পষ্ট উপাত্ত নেই।

সিরাম ইন্সটিটিউট বলছে, কোভিশিল্ড উচ্চ মাত্রায় কার্যকর এবং ব্রাজিল ও যুক্তরাজ্যে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের উপাত্তে তার সমর্থন মিলেছে।

এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন একটা নিরাপদ ভ্যাকসিন। তবে ভ্যাকসিন নেয়ার পরে কারো কারো ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যেমন ভ্যাকসিন প্রয়োগের জায়গায় ফুলে যাওয়া, সামান্য জ্বর হওয়া, বমি বমি ভাব, মাথা ও শরীর ব্যথা।

ফাইজার, অক্সফোর্ড ও মডার্নার টিকার ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের মধ্যে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে বলা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, টিকার স্থানে ব্যথা, ফোলা বা লাল হওয়া, মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, জ্বর, শীতল অনুভূতি, মাথাব্যথা ও ক্লান্তি।

তবে এগুলোকে টিকা শরীরে সাথে মানিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি বলেই ধরা হয়।

এখন পর্যন্ত বিশ্বে যেসব স্থানে টিকা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভারতে টিকা কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৪৫০ জনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। টিকা দেয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একজনের মৃত্যুর খবরও শোনা গেছে। তবে ভারতের কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে ওই মৃত্যুর সাথে টিকার কোনো সম্পর্ক নেই।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, দেশটিতে বিনামূল্যের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর টিকা গ্রহণকারী কারো মধ্যে যদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বাংলাদেশে কারা প্রথম টিকা পাবেন?
টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ১৭ ক্যাটাগরির নাগরিকদের নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে তাদের টিকা নেয়ার পরে অন্যরা টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন।

এই ১৭ ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে :

সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মী, বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সম্মুখ সারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম-কর্মী, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক।

টিকা নেয়ার আগে কী কী জানা জরুরি?

ব্রিটেন ও আমেরিকায় যে টিকাগুলো অনুমোদন পেয়েছে সেখানে টিকা সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নিতে বলা হচ্ছে।

যেমন কোনো কোনো সমস্যা থাকলে টিকা নেয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে সে বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে।

টিকা নেয়ার আগে চিকিৎসককে জানাতে হবে যে আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিনা বা আপনি কোনো রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন কিনা।

যেমন, আগে কোন টিকায় তীব্র এলার্জি দেখা দেয়া, তীব্র জ্বরসহ অসুস্থতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, ক্যান্সারের চিকিৎসা চলা, রক্তপাত বা আঘাতের কোন সমস্যা থাকা, গুরুতর অসুস্থতা, গর্ভবতী বা শিশুকে বুকের দুধ পান করাচ্ছে কিনা- এ বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে।

আর যে টিকা আপনি নিতে যাচ্ছেন সেগুলোর সাধারণ কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা সে বিষয়টিও জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন।

সুরক্ষা অ্যাপে যেভাবে নিবন্ধন করা যাবে
বাংলাদেশে টিকা নিতে হলে প্রথমেই নিবন্ধন করতে হবে। এজন 'সুরক্ষা' নামে স্মার্টফোনের জন্য অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট তৈরি করেছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।

সেখানে প্রথমে নিজের পেশার ধরণ, পেশা বাছাই করার পরে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিতে হবে।

বাংলা ও ইংরেজি, উভয় ভাষায় এই ওয়েবসাইটে তথ্য পূরণ করা যাবে। ওয়েব অ্যাপলিকেশনে নিবন্ধন করতে হলে তাদের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে।

নিবন্ধন করার সময় তার নাম, বয়স, পেশা, এনআইডি নম্বর, ঠিকানা (সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভার ওয়ার্ড), যে কেন্দ্রে টিকা নিতে আগ্রহী - সেই কেন্দ্র নির্ধারণ করে দিতে হবে।

তবে এজন্য কোনো স্ক্যান করা কপি বা ছবি দিতে হবে না। নিবন্ধনের জন্য কোনো খরচ বা ফি নেই।

একটি এনআইডি নম্বর থেকে একবারই নিবন্ধন করা যাবে। যেকোনো ব্যক্তি তার কম্পিউটার ব্যবহার করে এই নিবন্ধন করতে পারবেন।

নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর একটি ভ্যাকসিন কার্ড আসবে। সেটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে হবে। টিকা নেয়ার সময় এই কার্ডটি দরকার হবে।

সুরক্ষা অ্যাপ কিভাবে কাজ করবে?
করোনাভাইরাসের টিকা নিতে হলে এই অ্যাপে নিজেদের তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত করতে হবে। সেখান থেকে সরকার টিকা গ্রহীতার সম্পর্কে যেমন সব তথ্য পাবেন, তেমনি যারা টিকা নেবেন, তারাও পরবর্তী আপডেট সম্পর্কে জানতে পারবেন।

স্মার্ট মোবাইল ফোনে ডাউনলোডের পর ফোন নম্বর ও এনআইডি নম্বর দিয়ে ব্যবহারকারীরা অ্যাপে নিজেরা নিবন্ধন করবেন।

অ্যাপে নিবন্ধন করার সময় নাম, জন্মতারিখ, এনআইডি নম্বর, অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা আছে কিনা, পেশা ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।

অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল -উভয় স্টোরেই এই অ্যাপটি পাওয়া যাবে। স্মার্ট ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিতে হবে।

একবার টিকা নিলে কত দিন সুরক্ষিত থাকা যাবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো টিকাই শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারে না। আর একবার টিকা নিলে কত দিন সুরক্ষা মিলবে সেটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

আর তাই এখনো পরামর্শ হিসেবে বলা হচ্ছে যে, টিকা নিলেও যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হয়।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটির প্রথম ডোজ নেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি নিতে হবে।

কয় ডোজ টিকা নিতে হবে?
ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকার ক্ষেত্রে দেহে সুরক্ষা তৈরি হতে দুই ডোজ টিকা দরকার হয়। ফাইজারের টিকার ক্ষেত্রে দুই ডোজের মাঝে ২১ দিন বিরতি দেয়ার কথা বলা হয়।

আর মডার্নার ক্ষেত্রে ২৮ দিনের বিরতি নেয়া ভালো বলে জানাচ্ছে সিডিসি।

তবে সর্বোচ্চ কত দিন পর্যন্ত বিরতি নেয়া যাবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায় না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে নির্ধারিত তিন সপ্তাহ বা এক মাসের মধ্যেই টিকার দ্বিতীয় ডোজটি নিয়ে ফেলা উচিত।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটির প্রথম ডোজ নেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি নিতে হবে।

টিকা কাজ শুরু করতে কত দিন লাগে?
টিকা দেবার পর মানবদেহ করোনাভাইরাসের জেনেটিক উপাদানগুলো চিনে নিতে এবং এ্যান্টিবডি ও টি-সেল তৈরি করতে বেশ খানিকটা সময় নেয়।

তার পরই এগুলো ভাইরাসের দেহকোষে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বা আক্রান্ত কোষগুলোকে মেরে ফেলতে শুরু করে।

"টিকার পুরো কার্যকারিতা তৈরি হতে কমপক্ষে দু-সপ্তাহ বা সম্ভবত আরো বেশি সময় লাগে" - বলছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজিস্ট অধ্যাপক ড্যানি অল্টম্যান।

অন্য কোনো টিকা নেয়ার সময় কি কোভিডের টিকা নেয়া যাবে?
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বলছে, আপনি যদি কোভিড-১৯ এর টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে অন্য কোন টিকা নেয়ার আগে কমপক্ষে ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তারপর টিকাটি নিতে হবে।

একইভাবে আপনি যদি অন্য কোনো টিকা নিয়ে থাকেন তাহলে কোভিডের টিকা নিতে শুরু করার জন্যও ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

টিকা নেয়া লোকেরা কি ভাইরাস ছড়াতে পারে?
এটা এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এ ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন- জানাচ্ছেন বিবিসির বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদদাতা ডেভিড শুকম্যান।

এর কারণ হলো, টিকার ট্রায়ালগুলোতে দু'টি জিনিস দেখা হয়েছে।

একটি হলো- টিকাটি নিরাপদ কিনা, এবং অপরটি হলো- তা করোনাভাইরাস আক্রান্তদের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া কতখানি ঠেকাতে পারে।

দুটি ক্ষেত্রেই ভালো ফল পাওয়া গেছে।

কিন্তু ভ্যাকসিন নিলেও একজন থেকে আরেকজনে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে কিনা- তার অনুসন্ধান করা হয়নি।

ফলে যারা টিকা নিয়েছেন তারা অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াতে পারেন কিনা- এটা অজানা।

টিকা নেয়ার কারণে কি কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে?
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি বলছে, টিকা নেয়ার কারণে কেউ কোভিডে আক্রান্ত হবে না। কারণ এ পর্যন্ত যে টিকাগুলোকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাদের কোনটিতেই জীবন্ত ভাইরাস নেই। যার থেকে কোভিড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যে ভ্যাকসিন বা টিকা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে সেগুলো মানুষের দেহকে করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে এবং সেটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে শেখায়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সাময়িকভাবে জ্বরের মতো উপসর্গ থাকতে পারে।

তবে এর মানে হচ্ছে যে, কোভিড-১৯ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা গড়ে তুলতে শুরু করেছে দেহ।

তবে এই সুরক্ষা তৈরি হতে যেহেতু কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে, তাই টিকা দেয়ার পর পরই কেউ কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন। এর মানে হচ্ছে যে, সুরক্ষা তৈরি করার মতো পর্যাপ্ত সময় পায়নি টিকাটি।

আক্রান্তদেরও কি টিকা নিতে হবে?

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি বলছে, কোভিড আক্রান্ত হয়ে সেরে ওঠার পরও টিকা নিতে হবে।

সংস্থাটি বলছে, যেহেতু কোভিডের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এবং দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে তাই আক্রান্ত হোন আর না হোন, টিকা নেয়া উচিৎ।

তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুবই কম। আর একবার সেরে ওঠার পর ৯০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার উদাহরণও আরো কম।

তবে একবার কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর টিকা নিতে ৯০ দিন অপেক্ষা করা উচিৎ। এ বিষয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

একবার কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর কতদিন রোগটি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায় সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর কোভিড আক্রান্ত হওয়ার কারণে প্রাকৃতিকভাবেই যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয় তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়।

গর্ভবতী নারীরা কি টিকা নিতে পারবেন?
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গর্ভবতী নারীরা করোনাভাইরাসের টিকা নিতে পারবেন না।

কারণ কোভিড প্রতিরোধে যে টিকাটি দেয়া হচ্ছে তা গর্ভবতী নারীদের উপর ট্রায়াল করা হয়নি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি বলছে, গর্ভবতী কোন নারী যদি কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্মুখ সারিতে থেকে থাকে, যেমন : চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী তাহলে তাদের টিকা নেয়া উচিৎ। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কারা টিকা নিতে পারবেন না?
করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)।

সংস্থাটি বলছে, অতীতে যাদের কোন টিকা নেয়ার পর বড় ধরনের অ্যালার্জি হয়েছে বা কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে, তাদের টিকা নিতে হলে বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে। বিশেষ করে তাদের অবশ্যই টিকা নেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।

তবে যাদের খাবার বা পরিবেশে বা মুখে খাবার ওষুধে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের টিকা নিতে কোন সমস্যা নেই।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে তারাও টিকা নিতে পারবেন না।

টিকা নেয়ার পর কী করতে হবে?
টিকা নেয়ার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং সেগুলো দুই একদিন থাকতে পারে।

এক্ষেত্রে যা করতে হবে তা হলো :

• ভ্যাকসিন নেয়ার পর টিকা কেন্দ্রে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন

• ভ্যাকসিন নেয়ার পর যেকোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র/স্বাস্থ্যকর্মী/চিকিৎসকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন।

• ভ্যাকসিন নেয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।

বাংলাদেশে টিকা কর্মসূচীর সর্বশেষ অবস্থা কী?
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের জন্য বাংলাদেশের বেক্সিমকো এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে।

বাংলাদেশের সরকার বিনামূল্যে এসব টিকা বিতরণ করবে, যে কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে বুধবার। প্রথম দিন টিকাদান কর্মসূচী শুরু করা হবে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কর্মসূচি উদ্বোধন করবেন।

এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে প্রথম দিকের টিকাদান কর্মসূচি চলবে।

তবে সারা দেশে টিকার কার্যক্রম শুরু হবে আটই ফেব্রুয়ারি।

এরই মধ্যে ভারত থেকে পাওয়া উপহারের কুড়ি লাখ এবং ক্রয় করা টিকার ৫০ লাখ ডোজ ঢাকায় এসে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, বেক্সিমকো এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে একটি চুক্তির অধীনে তারা যে পরিমাণ করোনাভাইরাসের টিকা কিনেছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে তারা যে টিকা পাবার আশা করছেন তার পরিমাণ হবে সব মিলিয়ে চার কোটি ৯০ লাখ ডোজ।

বাংলাদেশে কত মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে?
কোন একটি দেশে সাধারনত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এলেই দেশব্যাপী সুরক্ষাবলয় তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেক্ষেত্রে সংখ্যাটি হবে সাড়ে ১৩ কোটি'রও বেশি।

সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী টিকা সংগ্রহ এবং প্রয়োগে এক বছরেরও বেশি সময় লেগে যাবে।

ভ্যাকসিনেই কি সংক্রমণ থেকে মুক্তি মিলবে?
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন নেয়া মানেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকার গ্যারান্টি নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির সাবেক প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাজুল ইসলাম এ বারি বলছেন, টিকা মানুষের শরীরে কতদিন কার্যকর থাকবে সেটা নিশ্চিত নয় কেউই।

"টিকার সুরক্ষা কি মানুষের শরীরে তিন মাস থাকবে, ছয় মাস থাকবে নাকি একবছর থাকবে সে বিষয়ে কেউই নিশ্চিয় নয়। কারন এটা অজানা। এর পরে বুস্টার ডোজ নিতে হবে কি-না, সেটাও অজানা। সুতরাং টিকা নিলেও মানুষকে আরো কিছুদিন সতর্ক থাকতেই হবে।"

চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সমীর কুমার সাহা বলছেন, যে কোন টিকা আসার আগে বেশ কয়েকবছর সময় নিয়ে এর কার্যকারিতাসহ বিভিন্ন বিষয় দেখা হয়।

এবার একটি নজিরবিহীন পরিস্থিতি। ফলে অনেক কিছু নিয়েই প্রশ্ন আছে।

তবে তিনি এটাও বলছেন, কতদিন সুরক্ষা থাকবে সেটা অজানা হলেও সুরক্ষা যে পাওয়া যাবে এ বিষয়টা কোম্পানিগুলো পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছে।

ভ্যাকসিন নিয়ে যত সন্দেহ :
গত ১০০ বছরে রোগ প্রতিষেধক টিকার কারণে কোটি কোটি মানুষের জীবনরক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু অনেক দেশেই টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা তৈরি হয়েছে, আর এই প্রবণতা এখন বাড়ছে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকা নেয়া না নেয়ার প্রশ্নে অনেক মানুষের মাঝেই এক ধরনের সংশয় বা আস্থার অভাব দেখা যাচ্ছে।

বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী বা ভিআইপিরা আগে টিকা না নেয়ায় সংশয় বাড়ছে। তবে সরকার মনে করছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংশয় তৈরি করা হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলটির অনেক নেতাই বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড: আহমদ কায়কাউস বলেছেন, মহামারির লড়াইয়ে সামনের সারিতে যারা ছিলেন, ভিআইপিদের বাদ রেখে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে টিকা দেয়ার পরিকল্পনাকে ভিন্নভাবে দেখা ঠিক নয়।

সূত্র : বিবিসি

 


আরো সংবাদ



premium cement