২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

মুহূর্তেই করোনা সারার ওষুধ!

মুহূর্তেই করোনা সারার ওষুধ! - ছবি : সংগৃহীত

মুহূর্তেই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এমন ওষুধের পরীক্ষা চলছে। এ ওষুধটি আক্রান্তের শরীরে মুহূর্তেই শুধু প্রতিরোধ গড়ে তুলবে না, এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরে থাকবে দীর্ঘ দিন। গবেষকরা বলছেন, এ ওষুধটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় জরুরি ওষুধ (ইমার্জেন্সি ড্রাগ) হিসেবে দেয়া যাবে।

ল্যাবরেটরিতে কার্যকর প্রমাণিত হওয়ার পর এবার ১০ জনের ওপর এই ওষুধটি প্রয়োগের পরীক্ষা চলছে। তারা আশা করছেন, পরীক্ষা সফল হলে হাজার হাজার মানুষের জীবন বাঁচাবে ওষুধটি। যারা করোনা আক্রান্তদের সেবাযতœ করবেন, আক্রান্ত না হলেও ওষুধটি দেয়া হলে তাদের মধ্যেও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। ব্রিটেনের ডেইলি মেইল এ-সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট ছেপেছে গতকাল শনিবার। গার্ডিয়ানও এ বিষয়ে একটি রিপোর্ট করেছে।

ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন হসপিটালের (ইউসিএলএইচ) বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ পরীক্ষা সফল হলে বিশ্বব্যাপী এক হাজার ১২৫ জনের মধ্যে ওষুধটি পরীক্ষা করা হবে। যে ১০ জন ইতোমধ্যে নতুন এই ডোজটি নিয়েছেন, তাদের পরপর দু’টি ডোজ ওষুধ দেয়া হয়েছে ইনজেকশনের মাধ্যমে। গবেষকরা এটিকে ‘স্টর্ম চেজার’ বলছেন। তারা আশা করছেন, এই ওষুধটি দেয়া হলে মানুষের শরীরে ছয় মাস থেকে এক বছরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

ইউসিএলএইচের বিজ্ঞানীরা করোনা আক্রান্তদের মধ্যে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার জন্য প্রোভেন্ট নামে একটি দ্বিতীয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (পরীক্ষা) শুরু করেছেন, যারা করোনার ভ্যাকসিন থেকে উপকার পাননি অথবা যাদের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কাজ করে না অথবা যারা করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
যে ১০ জনের মধ্যে নতুন এ ওষুধটির পরীক্ষা চলছে তাদের মধ্যে ইউসিভার্সিটির ছাত্র ও মেডিক্যাল স্টাফ রয়েছেন। তৃতীয় ট্রায়ালের অংশ হিসেবেই এই ১০ জনের ওপর ওষুধটির পরীক্ষা চলছে।

এই পরীক্ষার পরবর্তী টার্গেট গ্রুপের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, অনেকে একত্রে একই বাসায় থাকে এমন শিক্ষার্থী এবং সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তি, যারা করোনা রোগীদের দেখাশোনা করেছেন, সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং শিল্পকারখানার শ্রমিক।

ওষুধটির এখনো কোনো নাম দেয়া হয়নি। সাঙ্কেতিক ‘এজেডডি৭৪৪২’ নামক এই অ্যান্টিবডিটি ব্রিটিশ-সুইডিশ ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা তৈরি করেছে। এ কোম্পানিটিই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে করোনার ভ্যাকসিন (টিকা) তৈরির কাজ করছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরবর্তী পরীক্ষায় বয়স্ক ব্যক্তি, ক্যান্সার আক্রান্ত, এইচআইভি আক্রান্ত এবং যারা দীর্ঘমেয়াদি কেয়ার হোমে থাকছেনÑ এমন ব্যক্তিদের প্রোভেন্ট পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া হবে। এনএইচএস ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল মেডিক্যাল পরিচালক প্রফেসর স্টিফেন পউয়িস বলেছেন, ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চিকিৎসার নতুন পদ্ধতি পরীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তিনি বলেন, ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগীদের ক্ষেত্রে যারা ভ্যাকসিন থেকে উপকার পাবেন না, তাদের জন্য এটি বিকল্প চিকিৎসা হতে পারে।

স্টর্ম চেজারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউসিএলএইচের ভাইরোলজিস্ট ড. ক্যাথরিন হোলিহান। তিনি বলেন, এ অ্যান্টিবডির সংমিশ্রণটি ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। তাই আশা করছি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এই চিকিৎসা দেয়া হলে আক্রান্তদের টিকা দিতে দেরি হওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে করোনা ছড়ানোর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
ইউসিএলএইচ সংক্রামক রোগের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ড. নিকি লংলি প্রোভেন্ট ট্রায়াল করছেন। তিনি বলেন, টিকা যাদের মধ্যে কাজ করে না তাদের আশ্বাস দিতে চাই এই ওষুধ তাদের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।

ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ পল হান্টার বলেন, স্টর্ম চেজার ট্রায়ালের নতুন চিকিৎসা হাজারো জীবন বাঁচাতে সহায়তা করতে পারে। তিনি বলেন, কেয়ার হোমে করোনা প্রতিরোধ এবং গুরুতর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঝুঁকির মুখোমুখি লোকদের বাঁচাতে এটি কাজ করবে। কারণ এমন জরুরি ওষুধ না হলে এ ধরনের রোগী বাঁচার সম্ভাবনা কম।

বিশ্বে আক্রান্ত ৮ কোটি ছাড়াল
বিশ্বে করোনাভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮ কোটি ১ লাখ ছাড়িয়েছে। অন্য দিকে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ছাড়িয়েছে। কোভিড-১৯ পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা আট কোটি ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৪ জন। একই সময়ে করোনায় মোট মারা গেছেন ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ৯৩৮ জন। ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৭ জন। খবর : ওয়ার্ল্ডোমিটার, বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, স্পুটনিক, এএফপি, আলজাজিরার।

মডার্নার টিকা নিয়ে চিকিৎসক অসুস্থ : ফাইজার-বায়োএনটেকের পর মডার্নার ভ্যাকসিনে প্রথম অ্যালার্জিবিষয়ক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ফিজিশিয়ান। বোস্টন মেডিক্যাল সেন্টারে কর্মরত হোসেইন সদরজাদেহ নামের ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, টিকা নেয়ার প্রায় সাথে সাথে তার শরীরে অ্যালার্জি দেখা দেয়। পাশাপাশি মাথা ঝিমঝিম করে এবং বেড়েছিল হৃৎস্পন্দন।

ফাইজারের ভ্যাকসিনে এর আগে অ্যালার্জির ছয়টি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ আসে। সেগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। ফাইজারের টিকা নিয়ে কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের এক নার্স অজ্ঞানও হয়ে যান। বিজ্ঞানীরা এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় কিছুটা চিন্তিত হলেও বিপজ্জনক মনে করছেন না।

টিকা নিতে দ্বিধা ব্রিটিশদের : নতুন ধরনের (স্ট্রেইন) করোনাভাইরাসের জেরে ব্রিটেনে সংক্রমণ দ্রুততার সাথে বাড়ছে। সরকারি হিসাবেই ইংল্যান্ডে এখন প্রতি ৮৫ জনের একজন সংক্রমিত। কিন্তু লন্ডনের স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, সংক্রমণের ভীতি বাড়লেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ প্রস্তাব পেয়েও করোনার টিকা নিতে অস্বীকার করছেন।
ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য বিভাগের (এনএইচএস) কর্মকর্তা মোস্তফা ফারুক। তিনি লন্ডনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার একটি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক। টিকা দেয়া শুরুর প্রথম সপ্তাহেই তারা সন্দেহ, বিভ্রান্তি ও আপত্তির মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ফোন করে টিকা নেয়ার প্রস্তাব দিচ্ছি, অনেক মানুষ গড়িমসি করছেন, নানা প্রশ্ন করছেন। অনেকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করছেন।’

অ্যান্টিবডি নিয়ে নতুন পরীক্ষা : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন ধরনের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে সংক্রমিতের সংস্পর্শে এসেছেন এমন ১০ জন ব্যক্তিকে অ্যান্টিবডি দেয়া হয়েছে। আট দিনের মধ্যে যারা করোনায় সংক্রমিতের সংস্পর্শে এসেছেন, তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি দিয়ে এই পরীক্ষা চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কার্যকর প্রমাণিত হলে টিকা নিতে পারবে না এমন ভাসমান জনগোষ্ঠীকে এটি সুরক্ষা দিতে পারবে। করোনার সংক্রমণ রোধেও এটি সহায়ক হবে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন হাসপাতালের (ইউসিএলএইচ) এনএইচএস ট্রাস্ট এই পরীক্ষা চালাচ্ছে।

৬০ ঊর্ধ্বদের টিকা নেয়ার অনুমতি রাশিয়ার : নিজেদের তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের শরীরেও প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার জাতীয় টিকা কর্মসূচি থেকে এতদিন ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষকে বাদ রাখা হয়েছিল। এ ধরনের বয়সীদের শরীরে আলাদা করে এ টিকার পরীক্ষা চালানো হয়। আর পরীক্ষার পর গতকাল ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষেরাও এ ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে পারবেন।

ব্রিটেনের ধরন মিলল লেবানন, জাপান ও ফ্রান্সে : করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের ঢেউ চলাকালে ব্রিটেনে ভাইরাসটির যে নতুন ধরন (স্ট্রেইন) দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, সেটি পাওয়া গেছে জাপান ও ফ্রান্সেও। জাপানে সংক্রমণের পাঁচটি ঘটনায় ও ফ্রান্সে একটি ঘটনায় এ ভাইরাসের নতুন ধরনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। লেবাননের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, সে দেশে নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাসের সাথে মিল রয়েছে এটির।

অতিসংক্রামক ধরন ভারতে মিলেছে মার্চেই : ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের যে নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে, ভারতে অনেকটা একটি প্রকৃতির ধরন পাওয়া গিয়েছিল গত মার্চ মাসেই। সম্প্রতি এই দাবি করেছেন দেশটির বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিলের (সিএসআইআর) ইনস্টিটিউট অব জিনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির (আইজিআইবি) পরিচালক অনুরাগ আগারওয়াল। এই গবেষক বলেন, ভারতে যখন করোনা মহামারী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখনই একটি অতিসংক্রামক ধরন শনাক্ত হয়।

পানামায় কিউবার চিকিৎসকেরা : করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সহায়তা করতে গত বৃহস্পতিবার সকালে কিউবার দুই শতাধিক চিকিৎসকের একটি দল পানামায় গেছে। পানামার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টুইটারে জানায়, ‘কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা জোরদার করতে কিউবা থেকে ২২০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসেছেন।’

টেস্টের লাইনে দাঁড়িয়ে প্রাণ গেলো ১৫ জনের : কোভিড-৯১ এ আক্রান্ত হয়েছেন কি না সেটা টেস্ট করাতে আসছেন অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে কোভিড-৯১ এ পরীক্ষা নিয়ে কড়াকড়ির কারণে অপেক্ষমাণদের সারি ছিল দীর্ঘ। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ে সীমান্তে মানুষের ভোগান্তি ছিল মাত্রাহীন। আর এ টেস্ট করাতে এসেই মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। ক্রিসমাসের ছুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবেশে ইচ্ছুকদের করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। তবে বিপুলসংখ্যক মানুষের নমুনা পরীক্ষায় লেগে যাচ্ছে ব্যাপক সময়। গাড়ি ও ট্রাকের সারি দেখা গেছে কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত।


আরো সংবাদ



premium cement