২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ

সন্তান জন্মদানে প্রতি ৬ মায়ের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

সন্তান জন্মদানে প্রতি ৬ মায়ের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত - ছবি : সংগৃহীত

সন্তান জন্মদানে প্রতি ছয়জন মায়ের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগটির ব্যাপকতা এত বাড়ছে যে, এক সময়ের কৃষি অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে বিশ্বের শীর্ষ ১০তম ডায়াবেটিস আক্রান্ত দেশে। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, শারীরিক পরিশ্রমের প্রতি মানুষের অনীহা এবং খাদ্যাভ্যাস বদলে যাওয়া। গত শতাব্দীর ৯০ দশকের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে। ফলে বেড়েছে যান্ত্রিক জীবনযাপন এবং প্রতি দিনকার খাদ্যে তুলনামূলক বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার যোগ হয়েছে। ডায়াবেটোলজিস্টরা বলছেনÑ এটাই ডায়াবেটিস হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

এ বছর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ডায়াবেটিস সেবায় পার্থক্য গড়ে দেয় নার্সিং’। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

ডায়াবেটিস শুধু যে বাংলাদেশের সমস্যা, তা নয়। এটা একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের হিসাব মতে, ২০১৯ সালে প্রতি ১১ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিল। সংখ্যার হিসেবে দাঁড়ায় ৪২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। ২০৪৫ সালে বর্তমানের চেয়ে ৪৮ শতাংশ বেড়ে ৬২ কোটি ৯০ লাখে উন্নীত হবে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ মুহূর্তে বিশ্বের মোট ডায়াবেটিসের রোগীর ৮৭ শতাংশই উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে বসবাস করছে। বিশ্বে চার ভাগের তিন ভাগ ডায়াবেটিস রোগী নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে বসবাস করছে। ২০১৬ সালে পৃথিবীর মানুষের স্বাস্থ্য খাতের মোট ব্যয়ের ১২ শতাংশের বেশি অর্থ ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ব্যয় হয়েছে।

বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি, তেমনি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম স্থানে অবস্থান করলেও ২০৩০ ও ২০৪৫ সালে বাংলাদেশ শীর্ষ নবম অবস্থানে থাকবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে উচ্চহারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে। বাংলাদেশসহ সব উন্নয়নশীল দেশে খুব দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে, মানুষের দৈহিক ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে কাক্সিক্ষত মাত্রার চেয়েও বেশি হারে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে মানসিক চাপ বেড়েছে অনেক গুণ। বিপরীতক্রমে উন্নত দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীর হার কমলেও তবে তা খুব উল্লেখযোগ্য হারে কমছে না।

বাংলাদেশে প্রধানত টাইপ-২ ডায়াবেটিস বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে উন্নত দেশে মহিলাদের মধ্যে বেশি সংখ্যায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস দেখা যায়। আর উন্নয়নশীল দেশে পুরুষরা টাইপ-২ ডায়াবেটিসে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও টাইপ-২ দেখা যায়। এই বিপুলসংখ্যক ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসা ও সামনের দিনগুলোতে আরো বেশিসংখ্যক মানুষকে ডায়াবেটিসের হাত থেকে রক্ষা করতে এখনই হওয়ার সময়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, ডায়াবেটি রোগকে প্রতিরোধ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে এবং হতে হবে ডায়াবেটিস হয়ে যাওয়ার আগে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা: এ কে আজ খান জানান, ডায়াবেটিস একবার হয়ে গেলে বাকি জীবন ডায়াবেটিস নিয়েই চলতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম, নিয়মিত খেলাধুলা অব্যাহত রাখতে হবে। মুটিয়ে যেন না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন করতে হবে। বিশেষ করে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস যেন না হয় সে জন্য মায়েদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। মাকে নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা উচিত। অধ্যাপক আজাদ খান বলেন, গর্ভকালীন মায়ের ডায়াবেটিস হলে গর্ভজাত শিশুরও ডায়াবেটিস হবে। আবার মায়েরা গর্ভকালীন অপুষ্টির শিকার হলেও গর্ভজাত শিশুরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, একবার ডায়াবেটিস হলে তা কখনো সেরে যায় তবে নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবনযাপন করা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement