২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভুলে যাওয়া

-

ভুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ভুলে যাওয়া আমাদের জন্য বিধাতার আশীর্বাদও বটে। প্রতিদিনের এত এত দুঃখ, কষ্ট, রাগ, অভিমান যদি আমরা ভুলতে না পারতাম তাহলে হয়তো জীবন অচল হয়ে যেত। আবার এই ভুলে যাওয়াই কখনো কখনো স্বাভাবিকতার সীমা ছাড়িয়ে যায়। আমাদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়।
মনে রাখার রসায়ন বড় জটিল। আমরা যা মনে রাখতে চাই, প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও তা অনেক সময় মনে রাখতে পারি না। পরীক্ষা খারাপ হয়ে যায়, চাকরি হাতছাড়া হয়ে যায়। আবার বহু বছর আগের কোনো এক তুচ্ছ ঘটনা অযাচিতভাবে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে ছবির মতো। কেন মনে হচ্ছে তার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
যে জিনিসগুলো আমাদের আকর্ষণ করে সেগুলোর ওপরে আমরা সহজে মনোসংযোগ করতে পারি। সেগুলো আমাদের স্মৃতিতে জায়গাও করে নেয় সহজে। কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমরা প্রয়োজনে হোক বা ভালোলাগার কারণে হোক মনে মনে আওড়াতে থাকি বা ভাবতে থাকি। এগুলোও আমাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকে।
আমাদের মন খুব চঞ্চল। কোনো একটা বিষয়ের ওপর একটানা স্থির হয়ে থাকা তার স্বভাব নয়। কোনো একটা বক্তৃতা শোনার সময় বা সিনেমা দেখার সময় আমরা প্রায়ই পাশের জনকে জিজ্ঞেস করি, ‘কী বলল?’ দেখা গেল পাশের জন শুনেছে ঠিকই। আবার কিছুক্ষণ পর হয়তো পাশের জনই আমাকে বলছে, ‘কী বলল?’ যে অংশগুলোতে আমরা মনোযোগ রাখতে পারি না সে অংশগুলো আমাদের স্মৃতিতে জায়গা করে নিতে পারে না।
কম বয়সে ভুলে যাওয়ার স্বাভাবিক সীমা আমরা সাধারণত বুঝতে পারি। কখন তা স্বাভাবিকতার সীমা ছাড়িয়ে যায়, কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত তা বুঝতে পারা তুলনামূলকভাবে সহজ। তবে কখনো কখনো মনোযোগের ঘাটতিকে বিস্মৃতি বলে ভুল হয়ে যায়। বিস্মৃতি না অমনোযোগ সে বিচারের দায়িত্ব অবশ্য চিকিৎসকের। আর সীমা ছাড়িয়ে গেলে দু’টোর জন্যই চিকিৎসার প্রয়োজন।
আমরা যখন বার্ধক্যে উপনীত হই, আমাদের স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এ সময় মানুষের তেমন কোনো কাজ থাকে না। অনেক কিছু চোখে পড়লেও দেখার প্রয়োজন হয় না বা দেখার কোনো আকর্ষণও থাকে না। অনেকে এ সময় কিছুটা হতাশায় ভোগেন। মৃত্যু চিন্তা অনেককে গ্রাস করে। সর্বোপরি মস্তিষ্কের কোষগুলো বয়সের সাথে সাথে ক্ষয়ে যেতে থাকে।
বয়সজনিত ভুলে যাওয়াকে আমরা স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করি। বয়সের সাথে সঙ্গতি রেখে এটা বাড়তে থাকে। তবে এই বেড়ে যাওয়ার একটা সীমারেখা আছে। সীমা অতিক্রম করলে তা অসুখ। বার্ধক্যের স্মৃতি-বিস্মৃতির এই সীমারেখা নির্ধারণ করা সাধারণের জন্য কঠিন। অনেক সময় চিকিৎসককেও বিস্মরণ মাপার বৈজ্ঞানিক মানদণ্ডের আশ্রয় নিতে হয়।
অনেক মা-বাবা তার স্কুল বা কলেজপড়ুয়া সন্তানকে নিয়ে এসে বলেন, ‘আমার সন্তানের স্মরণশক্তি কম, পড়া মনে রাখতে পারে না। তখন তাকে কোনো ক্রিকেটারের প্রোফাইল জিজ্ঞেস করলে গড় গড় করে বলতে থাকে। সন্তানের স্মরণশক্তি দেখে তখন বাবা-মা ঘাবড়ে যান। বিভিন্ন কারণে শিশুরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হতে পারে। সে জন্য এ রকম হয়। তবে পরীক্ষার রেজাল্ট ক্রমেই খারাপ হতে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। বাচ্চার সাধারণ বুদ্ধি বয়সের সাথে সাথে না বাড়লে অথবা কমতে থাকলেও তার কারণ খুঁজে বের করা জরুরি।
কোনো কোনো মধ্যবয়সী রোগী এসে বলেন, ইদানীং তিনি সব কিছু ভুলে যাচ্ছেন। চাবিটা কোথায় রাখলেন, কাকে কত টাকা দিলেন কিছুই মনে রাখতে পারছেন না। আর এটা নিয়ে তিনি বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন। বয়স্করাও এ ধরনের সমস্যার কথা বলেন। এগুলো আসলে বিস্মৃতি নয়, অমনোযোগ। যেসব রোগী সাধারণত বিস্মৃতির অসুখে ভোগেন তারা বিস্মৃতির জন্য দুশ্চিন্তা করেন না। পরিবারের সদস্যরা প্রথম এ সমস্যা উপলব্ধি করেন। কাজেই কারো ভুলে যাওয়া স্বাভাবিকতার সীমা অতিক্রম করছে কি না তা বোঝার দায়িত্ব আসলে পরিবার-পরিজনের।
বয়স্কদের স্মৃতি-বিস্মৃতির সীমারেখা নির্ধারণ করা যদিও কঠিন, তবু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা বেশ সহজ। অনেক সময় তারা চেনা মানুষকে চিনতে পারেন না, খাবার খেয়ে উঠে আবার খেতে চান, এক ওয়াক্তের নামাজ দুইবার পড়েন। এগুলো নিশ্চিতভাবেই অসুস্থতার ইঙ্গিত করে।
ডিমেনশিয়া শব্দটি অনেকে শুনে থাকবেন। এর কোনো বাংলা পরিভাষা নেই। বিস্মৃতির কথা বলতে গেলে অনিবার্যভাবে ডিমেনশিয়ার কথা চলে আসে। বিস্মৃতি আর ডিমেনশিয়া এক নয়। তবে বিস্মৃতি ছাড়া ডিমেনশিয়া হয় না। ডিমেনশিয়াটা বিস্মৃতির চেয়ে ব্যাপক।
শুধু বিস্মৃতি সাময়িক সময়ের জন্য হতে পারে, আবার দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। কিন্তু যখন তা ডিমেনশিয়ার অংশ হিসেবে থাকে তখন সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
বিস্মৃতির কারণ অনেক। এর মধ্যে কিছু কারণ আছে যেগুলো সমাধানযোগ্য। আর কিছু আছে সমাধানযোগ্য নয়। চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি প্রথমেই বিস্মৃতির কারণ খোঁজেন। তারপর কারণ অনুযায়ী চিকিৎসার উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেন। উদ্দেশ্য হতে পারে অসুখ একেবারে ভালো করে ফেলা। আমরা জেনেছি, অনেকগুলো সমস্যা আছে যেগুলোর সমাধান করা সম্ভব। আবার এমন হতে পারে যে সমস্যাটা সমাধানযোগ্য নয়, কিন্তু যাতে আর বাড়তে না পারে সে ব্যবস্থা করা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটুকুও করা যায় না। তখন অসুখের গতি কমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সেটাও করা সম্ভব না হলে যাতে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা যায় সে চেষ্টা করা হয়।
লেখক : কনসালট্যান্ট (মেডিসিন),
সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল ধুনটে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বৃদ্ধের মৃত্যু বাকৃবির এক্স রোটারেক্টরর্স ফোরামের বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠিত পাবনায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড, হিট স্ট্রোকে মৃত্যু ১ দাগনভুঞায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তির ঘটনায় আ’লীগ নেতাকে শোকজ দখলে থাকা ৪ গ্রাম আজারবাইজানকে ফিরিয়ে দেবে আর্মেনিয়া স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর আত্মহত্যা! কুলাউড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে নারীর মৃত্যু যেসব এলাকায় রোববার ১২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে

সকল