২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রেইন টিউমার

-

ব্রিটেনের এক জরিপে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ছয়জন প্রতি বছর ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। টেনটোরিয়াম নামক একটি পর্দা দিয়ে আমাদের ব্রেইনকে দুইটি কম্পার্টমেন্টে ভাগ করা যায়। একটি উপরের প্রকোষ্ঠ ও আরেকটি নিচের প্রকোষ্ঠ।
একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের উপরের প্রকোষ্ঠে শতকরা ৮০-৮৫ ভাগ টিউমার হয়ে থাকে এবং নিচের প্রকোষ্ঠে শতকরা ১৫-২০ ভাগ টিউমার হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে উপরের প্রকোষ্ঠে শতকরা ৪০ ভাগ এবং নিচের প্রকোষ্ঠে শতকরা ৬০ ভাগ টিউমার হয়ে থাকে।
ব্রেইন টিউমার প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়
১। বেনাইন টিউমার যা ক্যান্সার জাতীয় না ।
২। মেলিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার জাতীয়।
ক্যান্সার জাতীয় টিউমার আবার দুই ধরনেরÑ ষ প্রাথমিক মেলিগন্যান্ট যা মস্তিষ্কে উৎপত্তি হয়, ষ মেটাসটেসিস যা শরীরের অন্য জায়গা থেকে উৎপন্ন হয়ে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে।
আবার যে কোষ থেকে টিউমার উৎপত্তি হয় সেই কোষের নাম অনুযায়ী টিউমারের নাম করা হয়। যেমন ধংঃৎড়পুঃড়সধ, বঢ়বহফুসড়সধ, সবহরহমরড়সধ, ঢ়রঃঁরঃধৎু ঃঁসড়ৎ ইত্যাদি।
ব্রেইন টিউমারের কারণ : আমাদের শরীরে কিছু জীন আছে যা টিউমার হতে বাধা দেয়। এদেরকে টিউমার সাপ্রেসর জীন বলে। কোনো কারণে টিউমার সাপ্রেসর জীন যদি কাজ না করে তা হলে ব্রেইন টিউমার হয়ে থাকে।
লক্ষণ : ব্রেইন টিউমারের প্রাথমিক লক্ষণ মাথা ব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা। তবে সব মাথা ব্যথাই ব্রেইন টিউমারের জন্য নয়। মাথা ব্যথা শতকরা ১ ভাগেরও কম কারণ হলো ব্রেইন টিউমার। ব্রেইন টিউমারের জন্য মাথা ব্যথা, সাধারণত খুব ভোরে শুরু হয়। তা ছাড়া মাথা ব্যথার সাথে সাথে খিঁচুনি হতে পারে। খিঁচুনি সাধারণত হাতে বা পায়ে বা অন্য কোনো স্থান থেকে শুরু হয়ে সাড়া শরীরে ছড়িয়ে পরে। পিটুইটারি গ্ল্যান্ড টিউমার হলে রোগীর দৃষ্টি শক্তি কমে যায়। সে সামনের অংশ দেখতে পারে এবং দুই পাশে দেখে না এবং একপর্যায়ে অন্ধ হয়ে যায়। রোগীর ব্রেইন সামনের অংশে বা ফ্রন্টাল লোবে টিউমার হলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। অস্বাভাবিক আচরণ করে। দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
মটর এরিয়া টিউমার হলে উল্টা দিকে প্যারালাইসিস হয়ে থাকে। মস্তিষ্কের খুলির নিচের প্রকোষ্ঠে টিউমার হলে রোগী হাঁটতে গেলে পড়ে যায় যায়, কানে শুনে না, কথা স্পষ্ট করে বলতে পারে না। টিউমার বেশি বড় হয়ে গেলে রোগীর হঠাৎ মৃত্যুও হতে পারে।
রোগ নির্ণয় : ব্রেইন টিউমার ডায়াগনোসিস করার জন্য এমআরআই অব ব্রেইন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান অব ব্রেইন করতে হয়।
প্রতিরোধ : ব্রেইন টিউমার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা মানুষের নেই। তবে ধূমপান থেকে বিরত থাকলে ফুসফুস ক্যান্সার হবে না এবং তা থেকে ব্রেইন এ মেটাস্টেটিস হবে না। তা ছাড়া তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ পরিহার করতে হবে। যেমন মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমানো। তেজষ্ক্রিয় স্থান থেকে দূরে থাকা। তা ছাড়া খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিলে এবং নিয়মিত প্রচুর ফল, শাকসবজি খেলে ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা যায়।
ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসা : আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বহু সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে, সফলতার সাথে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে ব্রেইন টিউমার অপারেশন করা হয়। এন্ডোস্কোপির সাহায্যে খুলি না কেটে পিটুইটারি টিউমার অপারেশন করা হচ্ছে।

লেখক : অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, ঢাকা
চেম্বার : পদ্মা ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, মালিবাগ মোড়, ঢাকা
মোবাইল : ০১৭১১৩৫৪১২০,০১৭০৪২৫৯১৯৪

 


আরো সংবাদ



premium cement