২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় অন্তঃসত্ত্বাদের নিয়ে যা করবেন

করোনায় অন্তঃসত্ত্বাদের নিয়ে যা করবেন - সংগৃহীত

করোনাকালীন সময়ে নিয়মিত চেক-আপ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বাদের। ভিডিও কলে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ রেখে চলা। কাউন্সেলিং করা। বাড়িতেই রক্তচাপ, সুগার, ওজন দেখতে পারেন। রুটিনমাফিক সোনোগ্রাফি না হলেও প্রয়োজন হলে করিয়ে নেয়া যেতে পারে, সেই সাথে রক্তপরীক্ষাও।

চেম্বারে আসতে হচ্ছে না বলে সংক্রমণের আশঙ্কা কমছে। এছাড়া অনেক সময় চেম্বারে ভিড় ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা যায় না । কাজেই আপাতত ভিডিও কলের মাধ্যমে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা নিরাপদ।

গর্ভাবস্থায় কোভিডের আশঙ্কা খুব একটা বাড়ে না। তা-ও যদি রোগ হয়, হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে হবে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় যতটুকু জানা গেছে, তার ভিত্তিতে বলা যায়, অন্তঃসত্ত্বাদের রোগ হলেও তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃদু বা মাঝারি পর্যায়ে থাকে। তাই সন্তানেরও কোনো ক্ষতি হয় না। ১১৮ জন কোভিড আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বার উপর সমীক্ষা চালিয়ে উহানের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে ৯২ শতাংশের রোগ ছিল মৃদু। তার মধ্যে ২১ শতাংশের প্রসব হয়েছিল সময়ের আগে। আমেরিকাতে হওয়া এক গবেষণা থেকে অবশ্য জানা গেছে অন্তঃসত্ত্বারা কোভিড থাকলে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে সময়ের আগে প্রসব হতে পারে।

গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে সংক্রমণ হলেও গর্ভপাতের আশঙ্কা খুব কিছু নেই। এ পর্যন্ত সে বিপদের খবর পাওয়া গেছে মাত্র একটি। সুইজারল্যান্ডের লুসেন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ডা. ডেভিড বড জানিয়েছেন, তার এক রোগীর ১৯ সপ্তাহে গর্ভপাত হয়। সম্ভবত মায়ের প্ল্যাসেন্টা থেকে রোগ ছড়িয়েছিল ভ্রুণে। কারণ প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত প্ল্যাসেন্টাতে ভাইরাস জীবিত ছিল। তবে আরও অনেক গবেষণা না করে এ ব্যাপারে কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাবে না।

ইরানের ৭টি বড় হাসপাতালে ভর্তি অন্তঃসত্ত্বা কোভিড রোগীদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে আমেরিকান জার্নাল অফ অবস্ট্রেটিক্স ও গায়নোকলজিতে প্রকাশিত প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা সাতজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। চীনে অন্তঃসত্ত্বা কোভিড রোগীদের মধ্যে মাত্র একজন মারা গিয়েছেন। কাজেই গর্ভাবস্থায় কোভিড হলে মৃত্যুহার বাড়ে বলেও মনে হচ্ছে না এখনও।

অনেকের ধারণা, স্বাভাবিকভাবে প্রসব হলে সন্তানে রোগ ছড়াতে পারে। কিন্তু ধারণাটা ভুল। যার যেভাবে প্রসবের প্রয়োজন, তাকে সেভাবেই করাতে হবে। বরংসিজারে বিপদ বেশি, তবে সেটা মা বা সন্তানের নয়, চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের। কাজেই নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে সিজার করতে হয়।

চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী সবাইকে পিপিই পরে নিতে হবে, সেটা অবশ্য স্বাভাবিক পথে প্রসব করালেও পরতে হবে। অজ্ঞান করলে শ্বাসনালিতে যে টিউব পরাতে হয়, সেখান থেকে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। কাজেই শিরদাঁড়ায় ইঞ্জেকশন দিয়ে অবশ করে অপারেশন করতে হয়।

পেট কাটার সময় সচরাচর ডায়াথার্মি নামে এক বিদ্যুৎচালিত কাটারের সাহায্য নেয়া হয়, তাতে যে তরলের সূক্ষ্ম কণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে তা থেকে একটু হলেও সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। কাজেই ডায়াথার্মি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করতে বলা হয়।

প্ল্যাসেন্টা দিয়ে রোগ ছড়ায় কি না তার নিশ্চিত প্রমাণ এখনও নেই। দু-একটা স্টাডিতে দেখা গেছে, ছড়িয়েছে। আবার ছড়ায়নি এমন নজিরও আছে। কোভিড-মায়ের সন্তান সংক্রামিত হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি ঠিকভাবে না মানার ফলে। হাত ধুয়ে মাস্ক পরে বাচ্চাকে দুধপান করানোর কথা, সেখানে কোনো ভুল হলে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের নির্দেশমতো মায়ের দুধ বোতলে ভরে খাওয়াতে হবে। সব নিয়ম মেনে নার্সের সাহায্যে মা এই কাজ করবেন, তা খাওয়াবেন অন্য কেউ। বুকের দুধ দিয়ে রোগ ছড়ায় না।

ঘন ঘন হাত ধোওয়া। বাড়িতে লোকজন থাকলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ধোওয়াই ভালো। বাড়িতে কারও হাঁচি-কাশি-জ্বর হলে তার থেকে কম করে ৬ ফুট দূরে থাকা। সম্ভব হলে মাস্ক পরা। বাইরের কারও সাথে মেলামেশা না-করা। প্রয়োজন না হলে চিকিৎসকের চেম্বারেও যাওয়ার দরকার নেই। গেলে যথাযথ সাবধানতা নিয়ে যাওয়া ও ফিরে এসে জামা-জুতো-ব্যাগ থেকে শুরু করে সব কিছু ধুয়ে গোসল করে নেয়া। ঠিকঠাক খাওয়া-দাওয়া করা, একটু হাঁটাহাঁটি করা ও ভালো করে ঘুমানো।
সূত্র : আনন্দবাজার


আরো সংবাদ



premium cement