২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মাছের পুষ্টিকথা

-

মাছে ভাতে বাঙালি। কথাটি কিছুটা হারিয়ে গেলেও, মাছের পুষ্টি ও গুরুত্ব এখনো অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। সময়ের সাথে মানুষের জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন হলেও এখনো বাংলাদেশের বেশির ভাগ বাড়িতে কম বেশি মাছ খাওয়া হয়। প্রোটিনের অনেক ভালো প্রাণীজ উৎস হিসেবে মাছের তুলনা হয় না। মাছ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারলে তা শরীরের অনেক উপকারে আসে। লিখেছেন এভারকেয়ার হাসপাতালের
প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী
মাছের পুষ্টি
মাছ প্রোটিনের খুব ভালো উৎস। প্রোটিনের পাশাপাশি মাছে রয়েছে আয়োডিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও অন্যান্য ভিটামিন ও মিনারেল। তৈলাক্ত মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। প্রোটিনের চাহিদা পূরণে গোশতের তুলনায় মাছ শ্রেয়।
মাছ হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
যুক্তরাষ্ট্রের এক স্টাডিতে দেখা গেছে, নিয়মিত মাছ খেলে হার্টের রোগের ঝুঁঁকি ১৫ শতাংশ কমানো যায়। মাছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকায়, তা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। রক্তের ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তবে এক্ষেত্রে এই বেনিফিট পেতে হলে মাছ পরিমিত তেল দিয়ে কষিয়ে রান্না করে খেতে হয়। ডুবো তেলে কড়া ভাজা মাছ থেকে এই উপকার পাওয়া যাবে না তেমন।
মাছ ব্রেন ও চোখের জন্য উপকারী
মাছের ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড চোখ ও ব্রেনের জন্য খুব উপকারী। গর্ভবতী মায়েদের তাই গর্ভাবস্থায় মাছ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। অবশ্য সামুদ্রিক মাছে এই উপকার বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু কিছু সামুদ্রিক মাছে মারকারি বেশি থাকে বলে গর্ভবস্থায় সব সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যায় না। স্যালমন, বড় চিংড়ি, সারডাইন্স ইত্যাদি মাছে কম পরিমাণে মারকারি থাকায় সপ্তাহে ৮ থেকে ১২ আউন্স খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়া ছোট মাছের ভিটামিন-এ চোখের জন্য অনেক উপকারী।
হাড়ের সুস্থতায় মাছ
ফ্যাটি ফিশ বা তৈলাক্ত মাছে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে। ভিটামিন ডি ছাড়াও মাছের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের জন্য অনেক উপকারী।
সহজে হজম যোগ্য প্রোটিন
মাছ, তুলনামূলকভাবে গোশতের চেয়ে দ্রুত হজম হয়। মাছ রান্নার পর নরম ও সহজপাচ্য হয়। তবে রান্নার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডুবো তেলে ভাজা এড়িয়ে চলতে হবে। মাছের সাথে হালকা মশলা ও তেল দিয়ে রান্না করলে তা বেশি সহজে হজম হয়।
মাছ যেকোনো বয়সের জন্য উপকারী একটি খাবার। বয়স্কদের যাদের দাঁতে সমস্যা তারা তাদের প্রোটিন হিসেবে গোশতের চেয়ে মাছ খেলে ভালো। শিশুদের সাত মাসের পর থেকে নরম কাঁটা ছাড়া মাছ শুরু করা যেতে পারে। গন্ধের কারণে অনেকে মাছ এড়িয়ে চলেন। কিন্তু ছোটবেলা থেকে মাছ খাওয়ার অভ্যাস না করালে এ ধরণের সমস্যা হয়। শিশুরা মাছ খেতে না চাইলে, মাছের চপ বা বড়া বা কাটলেট, মাছের স্যান্ডউইচ ইত্যাদি করে দিলে খেতে পারে। মাছ রান্নার আগে লেবুর রস বা সিরকা দিয়ে অল্প সময় ভিজিয়ে রাখলে মাছের গন্ধ অনেক কমে যায়। মাছ ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করলেও এই অভিযোগ কম হয়। মাছের সাথে তরকারি দিয়ে রান্না করলে এসিডিটি সমস্যা অনেক কমে যায়। যদিও সামুদ্রিক মাছে ওমেগা ৩ বেশি থাকায় এর হেলথ বেনিফিট বেশি, কিন্তু কিডনি রোগী, যাদের অনেক ইউরিক অ্যাসিড রক্তে বেশি, যারা আইবিএফ ট্রিটমেন্টে আছেন তারা সামুদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলবেন। অটিজমের শিশুদের সপ্তাহে একবার সামুদ্রিক মাছ দিলে ভালো। অনেকে আছেন হার্ট ভালো রাখতে অনেক বেশি পরিমাণে মাছ খান। মনে রাখবেন স্বাস্থ্যকর হলেও সব খাবার পরিমিত খাওয়া উচিত। কারন মাছে উন্নত প্রোটিন থাকে তাই হার্ট ভালো রাখতে কিডনির ওপর চাপ বেশি না দেয়াই শ্রেয়।


আরো সংবাদ



premium cement