২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অস্টিওআর্থ্রাইটিস

-

অস্টিওআর্থ্রাইটিস এক ধরনের ডিজেনারেটিভ রোগ, শত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়ার পরেও এটা মানুষের হওয়া সম্ভব। বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিসের মধ্যে সবচেয়ে কমন হচ্ছেÑ অস্টিওআর্থ্রাইটিস। শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে হাড়ের শেষপ্রান্তে যে কার্টিলেজ থাকে তা একটা কুশনের মতো কাজ করে। ক্রমাগত মুভমেন্টের ফলে জয়েন্টের হাড়ের মধ্যে ঘর্ষণ হয়। এই ঘর্ষণের কারণে সম্ভাব্য ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে কার্টিলেজ। নানা কারণে এই ক্ষয় হতে হতে এই কার্টিলেজের টোটাল ক্ষতি হয়। এর ফলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়, জয়েন্টে ব্যথা হয় ও মাবিলিটি কমতে থাকে। জয়েন্ট মার্জিনে নতুন হাড় তৈরি হয়।

কার্টিলেজ ক্ষতির কারণগুলো
* অস্থি-সন্ধির স্টেবিলিটি নষ্ট হওয়া
* অস্থি-সন্ধিতে অত্যধিক ভার বহন
* কার্টিলেজের মোবিলিটি কমে যাওয়া
* অস্থি-সন্ধির প্রদাহ
* কার্টিলেজের নিচে অত্যধিক নতুন হাড় তৈরি

যেভাবে হাড়ের মোবিলিটি রক্ষা হয়
* অস্থি-সন্ধির উপাদানগুলো সঠিকভাবে থাকা
* তরুণাস্থির আকৃতি ঠিক থাকা
* লিগামেন্ট এবং ক্যাপসুল ঠিক থাকা
* সাইনোভিয়াল ফ্লুইড ঠিক থাকা
* মাসল টোন ও স্নায়ুর নিয়ন্ত্রণের সমতা

অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়ার কারণ
বয়স বেশি হওয়া : বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্রমাগত ব্যবহারে কার্টিলেজের ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে থাকে এবং এই প্রটেক্টিভ কভার হারিয়ে যাওয়ার কারণে জয়েন্টের দু’দিকে হাড়ের ঘর্ষণে ব্যথা হয়।
স্থূলতার কারণে : স্থূলতার ফলে শরীরের ওয়েট বিয়ারিং জয়েন্ট অর্থাৎ যে জয়েন্টে শরীরের ভার বহন করেÑ সেগুলোর ওপর চাপ বাড়তে থাকে। বেশি শারীরিক ওজনের কারণে হাঁটুতে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
অন্যান্য কারণে : উল্লিখিত দুটি কারণের পাশাপাশি আরো কিছু কারণে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে পারে। যেমন :
* বারবার জয়েন্টে আঘাত লাগা বা অপারেশন করা
* জয়েন্টে বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি
* জয়েন্টে ইনফেকশন হওয়া।
* ডায়াবেটিস থাকা
* অতিরিক্ত ইউরিক এসিড ও বাত থাকা

কাদের এবং কোন বয়সে বেশি হয়
* যাদের শরীর মোটা এবং ভারী
* ৪০ বছর বয়সের পর
* বংশগতভাবে অর্থাৎ পরিবারে কারো এই রোগ থাকলে তাদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
* পুরুষের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়
* যাদের পেশা জীবনে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তাদের বেশি হয়
* কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণে হয়ে থাকে

কোথায় অস্টিওআর্থ্রাইটিস বেশি হয়
হাঁটু, কোমর, হাত ও পায়ের আঙুল, স্পাইন, কনুই, রিস্ট, এংকেল প্রভৃতি স্থানে সচরাচর অস্টিওআর্থ্রাটিস হয়।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস স্পাইনে হলে বলা হয় স্পন্ডাইলোসিস। যেমনÑ ঘাড়ে হলে সারভাইকেল স্পন্ডাইলোসিস এবং কোমরে হলে লাম্বার স্পনডাইলোসিস।

রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ
* বিশ্রামের সময় অথবা হাঁটাচলা বা কাজ কর্ম করার সময় ব্যথা
* হাঁটু, হাত ও পায়ের আঙুলের জয়েন্ট ফুলে যাওয়া, কোমর ব্যথা, ঘাড় ব্যথা বা শিরদাঁড়া ব্যথা
* ডিফরমিটি বা বিকৃতি (যেমন : হাঁটু বাইরের দিকে বেঁকে যাওয়া)
* খুঁড়িয়ে চলা
* মুভমেন্টের সময় শব্দ হওয়া
* মুভমেন্ট কমে যাওয়া

পরীক্ষা নিরীক্ষা
* এক্সরে * এমআরআই * সিটি স্ক্যান * আর্থোস্কপি

চিকিৎসা
* ব্যথার ওষুধ যেমন এনএসএআইডি
* কার্টিলেজ রক্ষাকারী ওষুধ
* ফিজিওথেরাপিÑ ব্যায়াম, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, হাইড্রোথেরাপি ইত্যাদি

সার্জারি
আর্থোস্কপি করে জয়েন্ট মসৃণ করা হয়। এ ছাড়াও গুরুতর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের জন্য টোটাল হিপ বা টোটাল নি রিপ্লেসমেন্ট করা যায়। তবে সার্জারির আগে ও পরে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।

উপদেশ
* খুব বেশি ব্যথা হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেবেন
* শারীরিকভাবে স্থূল রোগীর ক্ষেত্রে ওজন কমানো প্রয়োজন
* বিপরীত হাতে লাঠিতে ভর করে হাঁটা
* হাঁটু মুড়ে উবু হয়ে বসা যাবে না, উঁচু স্থানে বসতে হবে
* হাই কমোড ব্যবহার করতে হবে
* ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক নিয়মে ব্যথার ওষুধ খেতে হবে
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস বিভাগ, সিটি মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement