২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

পেঁপের উপকারিতা

-

পেঁপে ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের সর্বত্রই এর চাষ হয়। স্বাদে, বর্ণে, পুষ্টিতে ভরপুর অতুলনীয়। ‘একটি করে পেঁপে খাও বাড়ি থেকে বদ্যি তাড়াও।’ ফল, সবজি, স্যুপ, তরকারি, সালাদ, হালুয়া, শরবত, সাবান ও প্রসাধনীসামগ্রীতে পেঁপে ব্যবহৃত হয়। জৈব পদার্থসমৃদ্ধ মাটিতে পেঁপে সহজেই চাষ করা যায়। তেমন জায়গার প্রয়োজন হয় না। দেশী উন্নত জাতের পেঁপে সবচেয়ে ভালো। লাগানোর এক বছরের মধ্যে পেঁপে ফল দিতে শুরু করে, সারা বছর ফল ধরে, পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক বাড়িতে দু-তিনটি পেঁপে গাছ থাকা খুবই প্রয়োজনীয়। পেঁপেতে পেপসিন-সদৃশ পেপাইন নামক এনজাইম থাকে, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। গোশত ও ডালকে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করার জন্য পেঁপে ব্যবহৃত হয়। যকৃতের কার্যক্ষমতা বাড়াতে পেঁপের জুড়ি নেই। যারা বদহজমে ভোগেন তাদের জন্য পেঁপে মহৌষধ, পেঁপেতে আরো রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’। আধুনিক বিজ্ঞানে গবেষণায় পেঁপের আরো চমৎকার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা গেছেÑ শিশুর ব্রেনের গঠনÑ পেঁপে ফলিয়েটের একটি ভালো উৎস, এই ফলিয়েটই মানুষের ভ্রƒণের ব্রেন গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। গর্ভবতী প্রসূতি মা নিয়মিত পেঁপে খেলে শিশুর ব্রেনের গঠন উন্নত হবে। * জন্ডিসসহ লিভারের রোগেÑ * কাঁচা পেঁপের আঠা ও বীজ ক্রিমিনাশক, প্লীহা ও যকৃতের পক্ষে হিতকারী। কাঁচা পেঁপের আঠা চিনি বা বাতাসার সাথে মিশিয়ে খেলে অর্শ ও জন্ডিসসহ লিভারের বিভিন্ন রোগ ভালো হয়। প্রতিদিন সকালে কাঁচা পেঁপের পাঁচ-সাত ফোঁটা আঠা বাতাসার সাথে খেলে অর্শের রক্ত পড়া বন্ধ হয়। এই আঠা পেটের অসুখ ও লিভারের ক্ষেত্রে উপকারী। ব্রণ, আঁচিল ও জিভের ঘায়ে এ আঠা লাগালে উপকার হয়। আঠা ও বীজ কৃমিনাশক। পাণ্ডু রোগে যকৃৎ বেড়ে যায়। এই অবস্থায় পেঁপের আঠার সাথে চিনি মিশিয়ে দিনে দুই তিনবার খেলে এক সপ্তাহের মধ্যে যকৃৎ প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যায়। পেঁপে গাছের শুকনো পাতা পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি খাওয়ালে পাকস্থলীর স্বাভাবিক ক্রিয়া ফিরে আসে। ভিটামিনের অন্যতম উৎসÑ পেঁপের মধ্যে ম্যাগনেশিয়াম, কপার, প্যান্থাটনিক এসিড, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, আলফা এবং বিটা ক্যারোটিন, জিঅ্যান্থান, পটাশিয়াম. ম্যাঙ্গানিজ ও লাইকোপেন আছে।তারুণ্য ধরে রাখতেÑ পেঁপের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায়, স্থূলতা হ্রাস করে এবং মৃত্যুর হার কমায়। নিয়মিত পেঁপে খেলে হাঁপানি রোগের উপশম হয়, পেঁপের বিটা-ক্যারোটিন একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা শরীরকে শক্তিশালী করে রোগ প্রতিরোধ ও শক্তি বৃদ্ধি করে। ব্রোকলি, ফুটি, কুমড়া ও গাজরে পেঁপের মতো গুণাবলি রয়েছে। কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। হাড়ের স্বাস্থ্যÑ পেঁপের ভিটামিন ‘কে’ হাড়ের ম্যাটিক্সের প্রোটিনের পরিবর্তন হিসেবে কাজ করে। হাড়ের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম শোষণ করে এবং প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিকÑ পেঁপেতে খুব কম চিনি থাকে, যে কারণে এটি ডায়াবেটিসের জন্য ভালো। আধা পাকা পেঁপে ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়াতে এটি ডায়াবেটিসের জন্য খুবই ভালো। পেঁপে ভিটামিন ‘এ’ একটি চমৎকার উৎস। ১০৯৪ আইইউ/১০০ গ্রাম এবং ফেভিনয়েডস যেমনÑ ক্যারোটিন লুটেইন, জিঅ্যান্থনিন এবং ক্রিপটো জান্থনিন, ভিটামিন ‘এ’ স্বাস্থ্যবান মিউকাস মেমব্রেন, চামড়া ও দৃষ্টিশক্তি ঠিক করে। ফুসফুস ও মুখের গহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে। পেঁপেতে বি-কমপ্লেক্স আছে, নিয়মিত পেঁপে খেলে টাক মাথায় চুল গজায়, ভিটামিন ‘এ’ চুল গজাতে সাহায্য করে। রক্তের শর্করা কমাতে : পেঁপে ফুল পরিষ্কার করে ধুয়ে হালকা ভেজে খেলে শরীরে রক্তের গ্লুকোজ কমাতে কাজ করে। নিয়মিত খেলে বাড়তি ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় না। পাকা পেঁপে কোষ্ঠ পরিষ্কার করে, বায়ুনাশ করে। পাকা পেঁপে খিদে বাড়ায়, খাওয়ার রুচি আসে এবং খাবার হজম করতে সাহায্য করে। বদহজমের রোগীরা পেঁপে খেলে খুব উপকার মিলবে। পাকা পেঁপে অর্শ রোগের পক্ষেও উপকারী। কাঁচা পেঁপে সবজি ও সালাদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই দৈনিক একটি করে পেঁপে খাওÑ বাড়ির বাইরে ডাক্তার তাড়াও ।
লেখক : চিকিৎসক, ফোন : ০১৭১৬২৭০১২০

 


আরো সংবাদ



premium cement