১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আলসারেটিভ কোলাইটিস উপসর্গ ও চিকিৎসা

-

পূর্বে ইউরোপ ও আমেরিকায় এ রোগ দেখা গেলেও উপমহাদেশের জনগণের মধ্যে ছিল কদাচিত। তবে বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর খাদ্যাভ্যাস ও সংস্কৃতি অনুকরণের ফলে আমাদের দেশের জনগণের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে আলসারেটিভ কোলাইটিস। এ রোগটি সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মাঝামাঝি লোকজনের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। আলসারেটিভ কোলাইটিস ঠিক কাদের হয় তার কারণ সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে মামাত, চাচাত, খালাত ও ফুফাত ভাই-বোনদের সন্তানদের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন কোলনের অন্ত্রগাত্রের আবরণ যদি দুর্বল হয় তবে এ রোগ হতে পারে।
কেউ যদি খুবই দুশ্চিন্তায় ভোগে, দুধ কিংবা দুগ্ধজাতীয় খাবার খায় অথবা আমাশয়ে ভোগে তবে আলসারেটিভ কোলাইটিসের উপসর্গগুলো বারবার দেখা দিতে পারে।
উপসর্গ
১. ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়া;
২. পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া;
৩. অনেক সময় এমনিতেই মলদ্বার দিয়ে মিউকাস কিংবা আমজাতীয় পদার্থ বের হওয়া;
৪. রক্ত যাওয়া;
৫. তলপেটে মোচড় দেয়া এবং সাথে সাথে প্রচণ্ড পায়খানার বেগ অনুভব হওয়া;
৬. সময় মতো বাথরুমে যেতে না পারলে;
৭. পায়খানা হয়ে কাপড় নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং;
৮. ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও রক্ত যাওয়া ফলে রোগীর পানি, লবণ এবং রক্তশূন্যতা দেখা দেয়া ইত্যাদি।
সময় মতো চিকিৎসা না করলে কী
হতে পারে
১. কোলনে ক্যান্সার হতে পারে
২. দেহের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে, যেমন-কোমর, মেরুদণ্ড, হাঁটু, পায়ের গোড়ালি, হাতের জয়েন্টে;
৩. চামড়ার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লাল দাগ অথবা আলসার হতে পারে;
৪. চোখের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত রোগ হয়ে অন্ধ হয়ে যেতে পারে;
৫. মুখ, হাত ও পায়ে পানি এসে শরীর ফুলে যেতে পারে এবং
৬. জন্ডিস হতে পারে, লিভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয় লিভার নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা
ওষুধ : সাধারণত স্টেরয়েড ও সালফাসেলজিন জাতীয় ওষুধ দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। তবে মাঝে মধ্যে হাইড্রোকরটিসন, এজাথায়েপ্রিন অথবা সাইক্লোসপোরিন ব্যবহার করলে অনেকের মুখ ও শরীর ফুলে যেতে পারে, মাথার চুল পড়ে যেতে পারে, অনিদ্রা, অরুচি, হাতে-পায়ে জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাবসহ নানাবিধ শারীরিক অসুবিধা হতে পারে।
অপারেশন : আলসারেটিভ কোলাইটিসের স্থায়ী চিকিৎসা হতে পারে অপারেশন, তবে সব রোগীর ক্ষেত্রে অপারেশনের দরকার হয় না।
যেসব ক্ষেত্রে অপারেশন প্রযোজ্য
১. রোগীর অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন হলে, যেখানে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ ব্যবহারের পরও কোনো উন্নতি হয় না;
২. রোগী যদি ঘন ঘন পায়খানায় যেতে যেতে হাঁপিয়ে ওঠেন, পায়খানা ধরে রাখতে পারেন না কিংবা রক্তশূন্যতায় ভোগেন;
৩. দীর্ঘমেয়াদি স্টেরয়েড ব্যবহার করার পরও, যখন স্টেরয়েড আর কাজ করে না বরং স্টেরয়েড ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন;
৪. কোলনোস্কপি বা সিগময়ডোস্কোপি করার পর যখন ক্যান্সার ধরা পড়ে।
এ অপারেশনের পর পেটে স্থায়ীভাবে মলত্যাগের ব্যাগ লাগাতে হবে কিনা এটি একটি বড় প্রশ্ন। আজকাল জটিল বিশেষ ধরনের অপারেশন করে পেটে স্থায়ী মলত্যাগের ব্যাগ (আইলিওস্টমি) না লাগিয়েও অপারেশন করা যায়। এ অপারেশন করতে দীর্ঘ সময় লাগে এবং বিশেষভাবে পারদর্শিতার প্রয়োজন হয়।
লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, (অব) কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।
চেম্বার : ইডেন মাল্টি-কেয়ার হসপিটাল, ৭৫৩, সাতমসজিদ রোড, (স্টার কাবাব সংলগ্ন) ধানমণ্ডি, ঢাকা। ফোন : ০১৭৫৫৬৯৭১৭৩-৬

 


আরো সংবাদ



premium cement