২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোগ নির্ণয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফি

-

৪৫ বছর বয়সের জরিনা খাতুন এসেছেন কানের প্রধান আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে। কারণ কয়েক বছর ধরে এক কানে শনশন শব্দ করে, কান বন্ধ থাকে, মাথা গরম হয়। অপর কানে পুঁজ বের হয়, দুর্গন্ধ আছে এবং কানে কম শোনেন। আল্ট্রা করলেই তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন বলে তার ধারণা।
কিছুতেই বোঝাতে পারছিলাম না কানের আল্ট্রাসনোগ্রাম হয় না। অবশেষে অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না জানতে চাইলে জানালেন হাজারো সমস্যা। এর মধ্যে বেশি অসুবিধা মাঝে মাঝে বুকে ব্যথা হয়, ডান দিকে পিছনে ছড়িয়ে যায়, অতিরিক্ত-অনিয়মিত মাসিক হয়, যা ওষুধ খেলে কমে যায়। অবশেষে তাকে আশ্বস্ত করা হলো। পেটের আল্ট্রাসনো পরীক্ষা করিয়ে দেখা গেল তার পিত্তথলিতে পাথর, সেই সাথে জরায়ুতে ছোট টিউমার (ফাইব্রয়েড)। আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের ছোটখাটো অসুবিধায় পড়তে হয়, যা সম্পর্কে আমাদের চিকিৎসকদের ন্যূনতম ধারণা থাকা দরকার। রোগীরাও মনে করে আল্ট্রাসনোগ্রাম হলো একটি চিকিৎসা।
বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ে খুবই প্রচলিত একটি নাম আল্ট্রাসনোগ্রাফি, নতুন দিগন্তের একটি দিকনির্দেশনা। অতি সহজে রোগ নির্ণয় সম্ভব বলে চিকিৎসকগণ অনেকটা নির্ভরশীল। পেটের যেকোনো ব্যথায়, লিভারের অসুখ, কিডনির রোগ, যেকোনো টিউমার, পাথর প্রদাহ, স্তনের টিউমার, রক্তনালীতে কোনো অসুবিধা, থাইরয়েডে সমস্যা, গর্ভাবস্থায় ভ্রƒণ থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গাবস্থা পর্যন্ত বাচ্চার গঠন, অবস্থান, সুস্থতা, জন্মগত ত্রুটি, ডেলিভারির তারিখ দেখার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানো হয়।
অনেক সময় পেটে ব্যথা হলেই পুরো পেট পরীক্ষার জন্য উপদেশ দেয়া হয় কোনো রকম জিজ্ঞাসাবাদ না করেই।
সকালবেলা রোগী ভরা পেটে এলো পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করার জন্য। আপনি সনোলজিস্ট এবং কমার্শিয়াল ক্লিনিকের আয়ের জন্য করে দিলেন, রিপোর্ট সূক্ষ্ম হলো না। এতে আপনার ক্ষতি নেই, যিনি পাঠিয়েছেন তারও অসুবিধা নেই। কিন্তু রোগী বেচারার সঠিক রিপোর্টের অভাবে অর্থের শ্রাদ্ধ হলো হয়তো তার আংশিক পরীক্ষায় রোগ নির্ণয় সম্ভব ছিল, তাতে অর্থের কিছুটা সাশ্রয় হতো। ডাক্তারের নেয়া অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানোর পর ওষুধ কেনার টাকা শেষ। এবার বাড়ি যাওয়ার পালা। আল্ট্রাসনোগ্রাফি তো হয়েছে।
করাতে হবে তলপেটের আল্ট্রা। সনোলজিস্টের সময় নেই, কারণ। অন্য ক্লিনিকের ডাক এসেছে। সুতরাং টৎরহধৎু নষধফফবৎ চধৎঃরধষষু ঃরষষবফ লিখেই খালাস। অথচ মূত্রথলি পূর্ণ না হলে কোনো টিউমার, পলিপ, পাথর মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ুতে টিউমার বা তলপেটের অন্য কোনো ক্ষত নাও ধরা পড়তে পারে। এ অবস্থায় যিনি পাঠান পরীক্ষার জন্য তার পক্ষে সঠিক রোগ নির্ণয় যেমন কঠিন, চিকিৎসা দেয়া আরও কঠিন। কাজেই যিনি পাঠাবেন তার জন্য যা জানা জরুরিÑ
Ñকোন জায়গায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে রোগীর সমস্যা জেনে তা নির্দিষ্টভাবে লিখে দেয়া।
Ñসম্ভব হলে রোগ নির্ণয়ের আঙ্গিকে সুনির্দিষ্টভাবে চাওয়া।
Ñবিভিন্ন অঙ্গের পরীক্ষার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে রোগীকে কিছু উপদেশ দেয়া। যেমন- (১) উপরের পেট (লিভার, পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয়) দেখার জন্য ৮-১০ ঘণ্টা পেট খালি রাখা, পরীক্ষার আগে ডিম, জর্দা বা ধূমপান না করা।
(২) কিডনি, মূত্রথলি দেখার জন্য রোগী প্রস্রাবের বেগ নিয়ে পরীক্ষা করাবে।
(৩) গর্ভবতী রোগীকে বোঝাতে হবে লিঙ্গ নির্ণয় মূল বিষয় নয় বরং বাচ্চার অবস্থান, সুস্থতা, পানি থাকা, গর্ভফুলের অবস্থান ইত্যাদি জানা, ডেলিভারির ধরন অনুমান করা যেতে পারে।
বর্ণিত উপদেশগুলো যেমন সনোলজিস্টদের জন্য সুবিধা হবে রিপোর্টে, তেমনি সঠিক চিকিৎসা রোগীকে করে তুলবে সুস্থ আর আপনি যিনি চিকিৎসা দিয়েছেন হয়ে যাবেন সবার কাক্সিক্ষত।
অতিরিক্ত ব্যস্ততার মধ্যেও সনোলজিস্টদের ধৈর্য ধরতে হয় সঠিক রিপোর্ট করার জন্য। পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতিও আপনাকে অনেকটা সহযোগিতা করতে পারে। কখনো পরীক্ষার বিষয় ছাড়াও রোগীর উপসর্গ অনুসারে অন্য জায়গায় দেখা যেতে পারে, তাতে অনাকাক্সিক্ষত কিছু পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়- যা আপনার। চিকিৎসককে সহযোগিতা করতে পারে চিকিৎসা দিতে।
গর্ভাবস্থায় ছেলে বা মেয়ে প্রকাশ করাকে আমরা গর্ববোধ করে থাকি যা কারও জন্য সুখের পরিবর্তে দুঃখ বয়ে আনতে পারে। মানসিক ভারসাম্যতা হারাতে পারে। স্বামী সংসারের অন্যরা অবহেলা করবে ভেবে অনেকে যায় গর্ভপাত করাতে, তখন মৃত্যুর সাথে লড়তে লড়তে বেঁচে যায়।
একটি সঠিক রিপোর্ট আপনার যতখানি সুনাম আনবে, তারও বেশি। দুর্নাম হবে একটি ভুল রিপোর্টে। কাজেই নিজেদের দায়িত্বকর্তব্যকে অবহেলা না করে আসুন আমরা পরস্পরের সহযোগী হই। তাহলে আমাদের দরিদ্র, অবহেলিত, অশিক্ষিত রোগীরা অন্তত তাদের ন্যূনতম চাহিদাটুকু তো মেটাতে পারবে।
নিবন্ধকার : সনোলজিস্ট, এসএসএস হাসপাতাল, টাঙ্গাইল


আরো সংবাদ



premium cement