২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা সুরক্ষাসামগ্রী থেকেই ছড়াতে পারে ভাইরাস

করোনা সুরক্ষাসামগ্রী থেকেই ছড়াতে পারে ভাইরাস - সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের জন্য নির্ধারিত সুরক্ষাসামগ্রী থেকেই ছড়িয়ে পড়তে পারে ভাইরাসটি। একেবারেই নতুন এ ভাইরাসটি এ যাবত বিশ্বে দেখা সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক একটি অণুজীব। ভাইরাসটি খুব দ্রুতই নিজের অবস্থা এবং ভেতরের ডিএনএ’র পরিবর্তন করে নতুনরূপে আবির্ভূত হচ্ছে। ফলে এ ভাইরাসটিকে বিশ্বের তাবৎ স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা বাগে আনতে পারছে না। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে একযোগে ভাইরাসটির ওষুধ ও টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। সাধারণত কোনো রোগের ওষুধ অথবা টিকা আবিষ্কারের পর প্রথমে প্রাণীর ওপর এর পরীক্ষা চালানো হয়। কিন্তু বর্তমান করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা ও ওষুধ আবিষ্কারের এ চেষ্টায় প্রাণীর ওপর পরীক্ষা না চালিয়ে প্রথমেই মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ভাইরাসটি এত বেশি বিপজ্জনক ও ছোঁয়াচে যে এটা দ্রুত একজন থেকে আরেকজনকে সংক্রমিত করে থাকে। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা ভাইরাসটির এ ছোঁয়াচে বৈশিষ্ট্যকেই ভয় করছেন।

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এখনো করোনা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়নি বলে তারা উদ্বিগ্ন। ছুটি দিয়ে সবাইকে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টায় সরকার অনেকাংশে সফল হলেও অংশত এখনো কিছুটা ব্যর্থতা রয়েছে বলে তারা মনে করছেন। কিছু মানুষ সরকারের নির্দেশ অমান্য করে এখনো ঘরের বাইরে দল বেঁধে ঘোরাফেরা করছে, এক সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। দল বেঁধে টং দোকানে বসে চা খাচ্ছে। ছুটি পেয়ে গাদাগাদি করে ঢাকা থেকে মানুষ গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে। আবার গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঢাকায় আসার আহ্বান করায় এক দিনে কয়েক লাখ শ্রমিক একই রকম গাদাগাদি করে ঢাকায় প্রবেশ করেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেই বলা হচ্ছে কিছু কিছু পর্যায়ে করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হচ্ছে। ফলে কে কার থেকে সংক্রমিত হচ্ছে কেউ বলতে পারছে না। গতকাল রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস ব্রিফিংয়েং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নতুন করে ১৮ জনের সংক্রমিত হওয়ার খবর দিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় অবস্থানরতদের সংখ্যাই বেশি।

চিকিৎসকরা বলছেন, সুরক্ষাসামগ্রী থেকেই অনেক সময় ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুসদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা: মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সুরক্ষাসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ব্যবহৃত মাস্ক, টিস্যু পেপার, ড্রেস ও হেড কাভার ইত্যাদি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হচ্ছে মাস্ক, টিস্যু, হ্যান্ড গ্লাভস ইত্যাদি। কারণ টিস্যুতো একবার ব্যবহার করে মানুষ যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছে। কোনো করোনাভাইরাস অনেক দিন পর্যন্ত লক্ষণ প্রকাশ করে না। লক্ষণ প্রকাশ না করা পর্যন্ত যেকোনো ব্যক্তি নিজেকে সুস্থ বলেই ভাবে। সহজলভ্য হওয়ায় এখন অনেকেই রুমাল ব্যবহার না করে টিস্যু ব্যবহার করে। আক্রান্ত ব্যক্তি সর্দি ও কাশি অথবা হাঁচি টিস্যুর মধ্যে মুছে যেখানে সেখানে ফেলে দিতে পারে। এ টিস্যুটা অন্য কারো গায়ে লাগলে অথবা পায়ে লাগলেই সে নিজের পায়ের মাধ্যমে ভাইরাসটি বহন করে নিয়ে যাবে এবং অন্য অনেককে আক্রান্ত করে দিতে পারে নিজের অজান্তেই। অধ্যাপক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন তো মাস্ক বেশ সহজলভ্য হয়ে গেছে। মাস্ক এখন যত্রতত্র পরে থাকতে দেখতে পাওয়া যায়। এই মাস্ক থেকেও ছড়িয়ে পড়তে পারে ভাইরাসটি। এটা ছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের অজান্তেই তার বাড়ি অথবা এপার্টমেন্টের সকলেই আক্রান্ত করে দিতে পারে।

অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম জানান, সাধারণ মানুষের কথা বাদ দিলাম। চিকিৎসকরা চিকিৎসা শেষে তাদের ব্যবহৃত পিপিই কোথায় ফেলছেন? চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত নানা ধরনের সামগ্রী খোলা ডাস্টবিনে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কোনো করোনাভাইরাসের রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করে ফেলে দিলে তা কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ার কারণ হবে। রাজধানী ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল ছাড়া অনেক হাসপাপাতাল তাদের ব্যবহৃত চিকিৎসাসামগ্রী এমনিতে ফেলে দিয়েছে এর উদাহরণ আগে পত্রিকা খুললেই পাওয়া যেত। এখন যে এমন হবে না এর নিশ্চয়তা কোথায়?
তা ছাড়া করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালের চিকিৎসকদের ব্যবহৃত পিপিই কোথায় ফেলছেন এবং কিভাবে ফেলছেন? এটা কি জীবাণুমুক্ত করে ফেলেছেন? সরকারকে এ ব্যাপারটি খুবই সতর্কতার সাথে দেখার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম পরামর্শ দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নয়া দিগন্তের সাথে কথা হয় আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এবং মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীরের সাথে। তারা দু’জন জানান, আইইডিসিআরে করোনা পরীক্ষার সাথে যারা কাজ করছেন তাদের ব্যবহৃত পিপিই প্রথমে ডিকন্টামিনেশন (জীবাণুমুক্ত) করা হয়। জীবাণুমুক্ত হয়েছে নিশ্চিত হয়ে পরে মেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান প্রিজমকে তা দিয়ে দেয়া হয়। তারা জানান, ব্যবহৃত ওই পিপিইর মধ্যে কোনো জীবাণু থাকে না। করোনা চিকিৎসায় নির্ধারিত হাসপাতালেও এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement