২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নভেল করোনাভাইরাস

-

বর্তমান বিশ্বে একটি আতঙ্কের নাম নভেল করোনাভাইরাস। চীনের হুপেই প্রদেশে উহান শহরে এই ভাইরাসের প্রার্দুভার দেখা দিয়ে বর্তমানে বিশ্বের ১৪০টি দেশে প্রায় দুই লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং প্রায় ছয় হাজার মানুষ মারা গেছে মর্মে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত হলেও মূলত এর সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি।
পুরো পৃথিবীর অর্থনীতির চাকা আজ স্থবির হয়ে পড়েছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছে। তাই এ ভাইরাস থেকে আমাদের নিষ্কৃতি পেতে হলে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতিব আবশ্যক। নভেল করোনাভাইরাস-১৯৬০ দশকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। প্রথমদিকে মুরগির মাধ্যমে এ ভাইরাস সংক্রামক ব্রংকাইটিস ভাইরাস হিসেবে দেখা দেয়। পরে সাধারণ সর্দি কাশিতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এ রকম দুই ধরনের ভাইরাস পাওয়া যায়। মানুষের দেহে পাওয়া দু’টি ভাইরাস হলোÑ ১) মনুষ্য করোনাভাইরাস ২২৯ই ২) মনুষ্য করোনাভাইরাস ওসি৪৩ নামে নামকরণ করা হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ভাইরাসটির আরো বেশ কিছু প্রজাতি পাওয়া যায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ২০০৩ সালে ‘এসএআরএস-সিওভি’ ২০০৪ সালে-‘এইচকেইউ১’ ২০১২ সালে ‘এমইআরসি-সিওভি’ এবং সর্বশেষ ২০১৯ সালে চীনে নভেল করোনাভাইরাস। হিউম্যান করোনাভাইরাস প্রথম খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল চীনে ১৯৬০ সালে যিনি সর্দিতে ভুগছিলেন।
করোনাভাইরাস নামটি এসেছে এর আকৃতির ওপর ভিত্তি করে। ইলেকট্রন মাইক্রোস্কপে এই ভাইরাসটি ক্রাউন বা মুকুটের মতো দেখতে হওয়ায় এর নামকরণ করা হয়েছে ‘করোনা’।
মানুষের দেহে ছয় ধরনের করোনাভাইরাস সংক্রামিত হতে পারে যথা- আলফা করোনাভাইরাস (ঘখ৬৩ এবং ২২৯ঊ), বিটা করোনাভাইরাস (ঐকট১ ও ঙঈ৪৩) এবং বাকি দুটি সার্স ও মার্স তাদের প্রাণঘাতী লক্ষণগুলোর জন্য পরিচিত। হিউম্যান করোনা ভাইরাসের লক্ষণ ঘখ৬৩ এবং ২২৯ঊ, ঐকট১ ও ঙঈ৪৩ এর কারণে ফ্লু এর মতো লক্ষণ দেখা দেয় যা, হালকা থেকে মাঝারি আকার ধারণ করে। অন্যদিকে মার্স ও সার্স মারাত্মক লক্ষণ সৃষ্টি করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে মধ্য চীনের হুপেই প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী ও উহান নগরীর কর্তৃপক্ষ এই নতুন ধরনের করোনাভাইরাসটি শনাক্ত করেন।
করোনাভাইরাস বিস্তারের কারণগুলো:-
হিউম্যান করোনাভাইরাস ছড়ানোর কারণ এ ভাইরাস সাধারণত একজন ব্যক্তির শ্বাসনালীকে প্রভাবিত করে।
শ্বাসনালীতে সংক্রমিত তরল কাশি, হাঁচির সময় এক ব্যক্তির দেহ থেকে আরেক ব্যক্তির মধ্যে চলে যায়।
সংক্রমিত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে ভাইরাসটি বাতসে ছড়িয়ে পড়ে এবং সুস্থব্যক্তি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে, যেমন হ্যান্ডশেক করলে বা সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে নাক বা মুখ একসাথে স্পর্শ করলে অথবা বিরল ক্ষেত্রে রোগীর মলমূত্র স্পর্শ করলেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
এ ভাইরাসের পূর্ববতী লক্ষণগুলো হলো:-
ভাইরাসটি সংক্রমণ ও লক্ষণ প্রকাশের অন্তর্বর্তী কাল (ইনকিউবেশন পিরিয়ড) এখন ও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি, তবে ১ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই রোগের উপসর্গ দেখা যাবে বলে বিশেষজ্ঞ মহল অনুমান করেছেন। এই ভাইরাসের সংক্রমণে জ্বর, অবসাদ, পেশিতে ব্যথা, শুকনো কাশি, শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসনালীর রোগ (যেমন- ক্লোমনালীর প্রদাহ তথা ব্রঙ্কাইটিস এবং নিউমোনিয়া) হয়ে থাকে। কদাচিৎ মাথাব্যথা বা কফসহ কাশি হতে পারে। রোগীদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে এ ভাইরাসের কারণে তাদের শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা হ্রাস পায়। এ ছাড়া যকৃতও বৃক্কের (কিডনি) ক্ষতি হয়। সাধারণত এক সপ্তাহের আগ পর্যন্ত উপসর্গগুলো ডাক্তার দেখানোর মতো জটিল রূপ ধারণ করে না। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে ব্যক্তিভেদে অবস্থার দ্রুত ও গুরুতর অবনতি ঘটতে পারে। যেমন ফুসফুসের ক্ষতি বৃদ্ধির সাথে ধমনীর রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা (হাইপক্সেমিয়া) দেখা দেয় এবং রোগীকে অক্সিজেন চিকিৎসা দিতে হয়। এ ছাড়া তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত উপসর্গসমষ্টি (অজউঝ বা ধপঁঃব ৎবংঢ়রৎধঃড়ৎু ফরংঃৎবংং ংুহফৎড়সব) পরিলক্ষিত হয়।
করোনাভাইরাসের প্রাথমিক উপসর্গগুলোÑ ১) সর্দি ২) গলাব্যথা ৩) কাশি ৪) মাথাব্যথা ৫) জ্বর ৬) হাঁচি ৭) অবসাদ ৮) শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া ৯) অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
সংক্রমিত হওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। লক্ষণ দেখা দিলে বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় :-
হাঁচি-কাশির সময় মুখে হাত দিতে হবে এবং হাঁচি কাশির পরে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
কাশি বা হাঁচির সময় বা আগে মুখ ঢেকে নিতে হবে।
সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে চলতে হবে।
হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহার শেষে তা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
ঠাণ্ডা থেকে সর্তক থাকতে হবে।
গোশত ডিম খুব ভালোভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে।
বন্যপ্রাণী বা গৃহপালিত পশুকে খালি হাতে স্পর্শ করা যাবে না ।
মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
পরিষ্কার পরিছন্ন থাকতে হবে।
কাঁচা খেজুরের রস খাওয়া যাবে না।
স্টেশন কম্পাউন্ড, টয়লেট- বাথরুম, ড্রেন ,বাড়িঘরের আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ধোয়াটে এলাকা বা ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে
ঘনবসতি থেকে দূরে থাকতে হবে।
কাঁচা ডিম, কাঁচা গোশত খাওয়া যাবে না।
যেসব প্রাণী বিষাক্ত সেসব প্রাণী খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
মানুষের ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
যে এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে সে এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং যে এলাকায় ওই ভাইরাস আক্রান্ত নাই সে এলাকার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
দেহকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং জীবাণুমুক্ত পরিষ্কার পানিদ্বারা ওজু ও গোসলের মাধ্যমে দেহকে পবিত্র রাখতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে।
ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আত্মার শক্তি বৃদ্ধি করার মাধ্যমে মনোবল বৃদ্ধি করতে হবে।
এভাবে কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে আতঙ্কিত করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ সম্ভব।

লেখক : প্রধান সম্পাদক, দৈনিক আমার সময়


আরো সংবাদ



premium cement