১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়ালের সাফল্যের মূল মন্ত্র আনচেলত্তির ‘শান্ত নেতৃত্ব’

- ছবি - ইন্টারনেট

রিয়াল মাদ্রিদের সুপারস্টাররা হয়তো প্রায়ই পত্রিকার হেডলাইনে নিজেদের নাম দেখতে পান। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে যার কারণে একের পর এক সাফল্য ঘরে আসছে তার নেতৃত্বে আছেন কোচ কার্লো আনচেলত্তি।

আগামী শনিবার ওয়েম্বলিতে ফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে যদি রিয়াল মাদ্রিদ হারাতে পারে তবে প্রথম কোচ হিসেবে আনচেলত্তি পাঁচবার এই শিরোপা হাতে নেবার কৃতিত্ব অর্জন করবেন।

ইতোমধ্যেই টুর্ণামেন্টের ইতিহাসে এই ইতালিয়ান সবচেয়ে সফল কোচের তকমা ছিনিয়ে নিয়ছেন। এসি মিলানের হয়ে ২০০৩ ও ২০০৭ সালের পর মাদ্রিদের হয়ে জিতেছেন ২০১৪ ও ২০২২ মৌসুমে। এর মাধ্যমে লিভারপুলের বব পেইসলি ও মাদিদ্রের জিনেদিন জিদানের থেকে একটি বেশি শিরোপা জিতে ‘মিস্টার চ্যাম্পিয়ন্স’ খ্যাতি অর্জন করেছেন।

এর আগে খেলোয়াড় হিসেবে মিলানের জার্সিতে দুইবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয় করেছেন আনচেলত্তি। কিন্তু কোচ হিসেবে তার গায়ে লিজেন্ডের তকমা লেগে গেছে। শিরোপা জয়ের আনন্দ উৎসবে তার সানগ্লাস ও পোজ এখন বিশ্বব্যাপী দারুণ জনপ্রিয়।

আগামী ১০ জুন ৬৫ বছরে পা রাখতে যাওয়া আনচেলত্তি সবসময়ই তার শিষ্যদের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন, বিশেষ করে তার ‘শান্ত স্বভাব’ নেতৃত্ব এই শিরোপার মূল মন্ত্র। আনচেলত্তি জানেন কিভাবে তার খেলোয়াড়দের একসাথে সঠিক পথে এগিয়ে নেয়া যায়। এমনকি কঠিন মুহূর্তেও তিনি অবিচল থেকে নির্ভারভাবে খেলোয়াড়কে দিক নির্দেশনা দিয়ে যান। কখনই তাকে মাঠে উত্তেজিত হতে দেখা যায়নি।

ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রডরিগো কিছু সময় ফর্মের ঘাটতিতে ভুগছিলেন। কিন্তু আনচেলত্তি সবসময়ই তাকে সমর্থন করে গেছেন। গত বছর নভেম্বরে এ সম্পর্কে আনচেলত্তি বলেছিলেন, ‘এমন একটি সময় আসবে যখন প্রতিটি বলেই তুমি গোল পাবে। আবার কখনো এমনো হবে তুমি হয়তো অনেক শট করছো কিন্তু কোনো গোল পাচ্ছো না। সময় পরিবর্তন হয়, প্রত্যেকেরই একসময় সুযোগ আসে।’

আনচেলত্তির এই আস্থা দেখে রডরিগো কখনই বিচলিত হননি এবং দ্রুতই তিনি ফর্মে ফিরে আসেন।

রিয়ালের আরেক ব্রাজিলিয়ান ভিনিসিয়াস জুনিয়রও ফর্মহীনতায় ভুগেছে। কিন্তু আনচেলত্তির নির্দেশনায় তিনি ঠিকই আবার সঠিক সময়ে নিজেকে ফিরে পেয়েছেন।

খেলোয়াড়দের সাথে সুসম্পর্কের কারণে তারাও কোচের সব সিদ্ধান্তই সুন্দরভাবে মেনে নেয়। মিডফিল্ডার এডুয়ার্ডো কামনভিনগা ও অরেলিয়েন টিচুয়ামেনি উভয়ই আনচেলত্তির সিদ্ধান্তে রক্ষনভাগে খেলেছেন। কিন্তু কোনো সময়ই এ নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। এবারের মৌসুমে শীর্ষ পর্যায়ের একজন নীতি নির্ধারক হিসেবে আনচেলত্তি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সিদ্ধান্ত একাই নিয়েছেন, যা মাঝে মাঝে দলকে দারুণভাবে সহযোগিতা করেছে।

এবারের মৌসুমে আনচেলত্তির প্রথম বড় সিদ্ধান্ত ছিল কিভাবে দলে নতুন আসা জুড বেলিংহামকে কাজে লাগানো যায়। সেন্ট্রাল এই মিডফিল্ডার প্রথমে আক্রমণভাগে খেলা শুরু করেন। যা অনেকটাই কাজে আসে, প্রথম ১৩ ম্যাচে বেলিংহাম ১৩ গোল করেছিলেন। এরপর বেলিংহামকে মধ্যমাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সপ্তাহে সাবেক এই ডর্টমুন্ড খেলোয়াড় বলেছেন, ‘কোচের উপর শতভাগ আস্থা আছে। আমি জানি সব ধরনের পরিস্থিতিতে কিভাবে একজন খেলোয়াড়কে কাজে লাগানো যায়।’

সেপ্টেম্বরে অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের কাছে এবারের লিগে একমাত্র পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল মাদ্রিদকে। তারপর থেকেই বেলিংহামের পজিশনের পরিবর্তন আনেন আনচেলত্তি। এরপর আনচেলত্তি তার সেট-আপ নতুন করে সাজিয়ে নেন। এই পরিবর্তনের পর মাদ্রিদ ৩২ ম্যাচে অপরাজিত থাকে, লা লিগা শিরোপা জয় করে।

ফেব্রুয়ারিতে আনচেলত্তি বলেছেন, ‘যে ম্যাচে তুমি জিততে পারবে না, ওই ম্যাচে হারাও যাবে না।’

নানা ধরনের ইনজুরি সমস্যা সত্ত্বেও লস ব্লাঙ্কোসরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এবার কোনো ম্যাচে হারেনি। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে খেলোয়াড়রা দারুণভাবে মাদ্রিদকে লড়াইয়ে ফিরিয়েছে। আনচেলত্তি তাদের মধ্যে এই অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। সেমিফাইনালে বায়ার্নের বিপক্ষে জোসেলুর শেষ মুহূর্তের জোড়া গোল কেবলমাত্র আনচেলত্তির অনুপ্রেরণায় সম্ভব হয়েছিল।

আনচেলত্তিকে মাঠে খুব কমই নার্ভাস হতে দেখা গেছে। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তিনি সবসময়ই টেনশনে থাকেন। এ নিয়ে কোচ হিসেবে ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তিনি মাঠে নামতে যাচ্ছেন। ফাইনালের সময়টা তার অনেক কিছুই মাথায় থাকে না, ধীরে ধীরে তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন বলে স্বীকার করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement