২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল লাজুক মেসিকে বদলে দিয়েছে

প্রতিভাবান লাজুক থেকে লিওনেল মেসি কাতারে ‘দুষ্ট বালক’ নেতা হয়ে উঠলেন - ছবি : বিবিসি

লিওনেল মেসি তার সম্ভাব্য শেষ ও পঞ্চম বিশ্বকাপ মিশনে গিয়ে জিতলেন আরাধ্য ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা। তর্কাতীতভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে অলঙ্কৃত ফুটবল সিভিতে এই একটা অপূর্ণতাই ছিল, যা গত ডিসেম্বরে পূরণ হয়ে গেছে।

এই জয়টা ছিল কেবলই গল্পের একটা অংশ। মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির পরিবর্তন ছিল অপরিহার্য। প্রথমে পর্দার আড়ালে এবং পরে সবচেয়ে বড় মঞ্চে।

৩৫ বছর বয়সী মেসির প্রতিভা নিয়ে কোনো সন্দেহ বা বিতর্ক কোনো কালেই ছিল না। কিন্তু তার চরিত্রে একটা পরিবর্তন এসেছে। বার্সেলোনার যুব দলে খেলার সময় লিওনেল মেসি এতোটাই লাজুক ছিল যে তার সতীর্থদের এড়াতে করিডোরেই পোশাক বদল করে নিতেন।

আর্জেন্টিনা ও অ্যাস্টন ভিলায় খেলা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বলেন, লিওনেল মেসি ‘এই বিশ্বকাপে ছিলেন আলাদা’।

বিবিসি স্পোর্ট ডকুমেন্টারি ‘লিওনেল মেসি: ডেস্টিনি’ তে আর্জেন্টিনার গোলকিপার বলেন ‘আগে যারা জাতীয় দলে খেলতেন তাদের চেয়ে মনে হয় আমরা আক্রমণাত্মক, এখন মেসিও মনে হয় আমাদের মতো হয়ে যাচ্ছে- দুষ্টু বালক।’

২০১৮ সালে যখন লিওনেল স্কালোনি যখন আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্ব পেলেন তখন আর্জেন্টিনার আরেক গ্রেট ডিয়েগো ম্যারাডোনা তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় বলেছিলেন, ‘দারুণ লোক, কিন্তু ও তো ট্রাফিকই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আপনি জাতীয় দলের দায়িত্ব কী করে স্কালোনিকে দেন?’ আর্জেন্টিনায় অনেকেই ম্যারাডোনার সাথে একমত ছিল।

কিন্তু স্কালোনি ছিলেন লিওনেল মেসির কোচ। স্পষ্টত, মেসিই তাকে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে নিয়ে এসেছেন। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনও প্রজন্মের সেরা এই ফুটবলারকে নিজের মতো করে, নিজেদের দলে রাখতে চেয়েছেন।

স্কালোনির নিয়োগের বছরখানেক আগে লিওনেল মেসির সাথে জাতীয় দলের সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। কোচদের সাথেও ঝামেলা হচ্ছিল।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ সালে প্রতিভাবান একটি আর্জেন্টিনা দল জার্মানির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে হারের পর তখনকার কোচ ম্যারাডোনা লিওনেল মেসির নেতৃত্বগুণ নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন।

২০১৮ সালের বিশ্বকাপেও হোর্হে সাম্পাওলির অধীনে আর্জেন্টিনার বিদায় হয় দ্রুতই, দ্বিতীয় রাউন্ডে, একই সাথে কোচও বিদায় নেন। এর মাঝে ২০১৬ সালে লিওনেল মেসি কোপা আমেরিকার ফাইনালে চিলির বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করে হারের পর সাময়িক অবসরেও গিয়েছিলেন।

আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তখন একটা ব্যাপারই নিশ্চিত করতে চেয়েছে। লিওনেল মেসি অর্থাৎ তাদের সবচেয়ে বড় তারকা যাতে খুশি থাকেন।

লিওনেল মেসির আত্মজীবনীর লেখক গিলেম বালাগ বলেন, ‘এফএর একটাই লক্ষ্য ছিল, মেসির সাথে কাজ করে তার সেরাটা বের করে আনতে পারেন এমন একজন ম্যানেজার খুঁজে বের করা’।

সে যা-ই হোক, স্কালোনির খুব জনপ্রিয় না হওয়া, ছোট শহরের মানুষের মতো বিনয় এবং নাক উঁচু স্বভাব না থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর্জেন্টিনা স্কোয়াডের জন্য, বিশেষত মেসির জন্য।

আর্জেন্টিনা ও ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড হুলিয়ান আলভারেজ বলেন, ‘স্কালোনি খুবই নির্ভার, খুব সৎ এবং ছোট শহর থেকে এলে যেমন হয়। আমি এটা মেলাতে পারি কারণ আমিও এমন ছোট শহরে বড় হয়েছিলাম, তার ভেতরের মানবিক গুণ আপনি দেখতে পারেন’।

মার্টিনেজ তার সাথে যোগ করেন, ‘আপনার প্রতিভাবান ফুটবলার থাকবেই কিন্তু আপনি কীভাবে তাদের চালাবেন তা জানতে হবে। এটা অনেকটা ফেরারি চালানোর মতো, আপনি যদি না জানেন কীভাবে চালাতে হয় সেটা, আপনি প্রতি কোণে ধাক্কা খাবেন। আমি স্কালোনির ব্যাপারে একটা কথাই বলতে পারি, স্কালোনি জানেন কীভাবে ফেরারি চালাতে হয়’।

'ছোট আর্জেন্টিনা' তৈরি করা
কাতারে লিওনেল মেসিকে এবং আর্জেন্টিনা দলকে খুশি রাখার পন্থা কী ছিল?

লিওনেল মেসি অল্প বয়সে আর্জেন্টিনা ছাড়ার পরেও তার আর্জেন্টাইন শেকড় বিশেষত তার জন্মভূমি রোজারিওর সাথে সম্পর্ক ধরে রেখেছেন।

'অ্যাঞ্জেলস উইথ ডার্ট ফেইসেস-অ্যা ফুটবলিং স্টোরি অফ আর্জেন্টিনার' লেখক জনাথন উইলসন বলেন, ‘মেসি আর্জেন্টিনিয়ানদের উচ্চারণে কথা বলেন, আর্জেন্টিনিয়ান খাবার খান, আর্জেন্টিনিয়ান সিনেমা দেখেন ও আর্জেন্টিনিয়ান গান শোনেন’।

স্কালোনি ও আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন দ্রুতই লিওনেল মেসি ও তার সতীর্থদের জন্য কাতারে একটা ঘরোয়া পরিবেশ তৈরির প্রতি ঝুঁকে পড়েন। কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে দলটি যেখানে ছিল সেখানে একটা ‘ছোট আর্জেন্টিনা’ তৈরি করা হয়।

স্কালোনির অধীনে শুরুর দিকে জুনিয়র সতীর্থরা আর্জেন্টাইন কার্ড গেম ট্রাকো খেলতে মেসির হোটেলের দরজায় নক দিতেন।

এই একই খেলা কাতারেও সব জায়গায় খেলতেন মেসিরা, পান করতেন আর্জেন্টিনিয়ান চা। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল আর্জেন্টিনিয়ান গরুর মাংসের বার-বি-কিউ আসাদোস, পুরো সফরের জন্য এই মাংসের ৯০০ কেজি কাতারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

মেসির সাবেক সতীর্থ পাবলো জাবালেতা বলেন, ‘আমার মনে হয় যদি মাতে আর সুন্দর বারবিকিউ থাকে তাহলে আর্জেন্টিনার মানুষ জীবনে আর কিছু চাইবে না’।

বালাগ ও আরাউহো দুজনই বলেন এই পন্থায় আর্জেন্টিনা মেসির সেরাটা বের করে এনেছে, বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে এমন একটা জগতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেখানে তিনি ছিলেন ১৩ বছর বয়সে, যখন তিনি বার্সেলোনা চলে যান। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে মেসি শৈশবের একটা প্রতিচ্ছবি দেখা যায় স্পষ্টভাবে।

ডাচ ম্যানেজার লুই ফন হাল লিওনেল মেসির মাঠে কর্মক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, এটা মেসির সতীর্থদের তাঁতিয়ে তোলে এবং ঐতিহাসিক এক বৈরীতায় আগুন লাগিয়ে দেয়।

ব্রাইটনের ম্যাক অ্যালিস্টার বলেন, ‘লিওকে আক্রমণ, আর্জেন্টাইন কারো সামনে এটা করা উচিৎ হবে না’।

মেসির আবেগ প্রকাশ পায় ম্যাচের ৭৩তম মিনিটে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলের পর লিওনেল মেসি কানের পাশে হাত নিয়ে লুই ফন হালকে দেখান, তার কর্মক্ষমতা নিয়ে করা মন্তব্যের জবাব দেন।

লিওনেল মেসি ও আর্জেন্টিনার সাবেক তারকা ফুটবলার হুয়ান রোমান রিকোয়েলমে ভালো বন্ধু। যদিও এর আগে, রিকোয়েলমে ২০০২ সালে এক মৌসুমের জন্য বার্সেলোনায় ছিলেন বলে, সম্পর্কটা ছিল স্তুতির।

রিকোয়েলমের সাবেক এজেন্ট মনে করিয়ে দিলেন, একবার বার্সায় দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলারদের জন্য আয়োজিত বারবিকিউ পার্টিতে লিওনেল মেসি রিকোয়লমের দিকে ‘এমনভাবে চেয়েছিলেন যেন যীশুকে দেখছেন’।

আর্জেন্টিনার সাংবাদিক আরাউহো মনে করেন, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে লিওনেল মেসির উদযাপন ছিল রিকোয়েলমের উদযাপন যা তিনি ক্যারিয়ারে বহুবার করেছেন। লুই ফন হাল ২০০০ এর শুরুর দিকে ছিলেন বার্সেলোনা ম্যানেজার তিনি রিকোয়েলমেকে তার পছন্দের জায়গায় খেলাননি।

আরাউহো বলেন, ‘এটা মেসির থেকে অপ্রত্যাশিত’।

তবে এটাই এই ম্যাচে মেসির লড়াকু মনোভাবের শেষ ছিল না, ম্যাচের পরে আর্জেন্টিনার মেসি নেডারল্যান্ডসের সহকারী কোচ এডগার ডেভিডসের মুখোমুখ হয়েছিলেন এরপর টানেলে সরাসরি টিভি সাক্ষাৎকারের মধ্যে হল্যান্ডের ১৯ নম্বর জার্সি ওউট ওয়েঘোর্স্টের উদ্দেশে বলেন, ‘তুমি এদিকে চেয়ে কী দেখছো, যাও এখান থেকে’।

আরাউহো বলেন, ‘লিওনেল মেসির এই কথাটা ছিল স্বত:স্ফূর্ত। এতে রোজারিওর ধাঁচ ছিল, মনে হয়েছে এটা হয়তো কারও দাদি বলছে। এটা নিশ্চিতভাবেই হালকা কোনও রাগ ছিল না’।

বালাগ বলেন, ‘মেসি এমনভাবে প্রতিক্রিয়া করলেন, যে তিনি নিজেকেই হয়তো চিনতে ভুল করবেন’।

এই রাগ প্রকাশের পেছনের গল্প মেসির শৈশবের শহর রোজারিওর সাথে জড়িয়ে, যা আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসের ১৮৫ মাইল দূরে অবস্থিত।

বালাগ বলেন, ‘বিশ্বকাপে মেসির মধ্যে একটা ব্যাপার ছিল, যে লোকেদের সে পাশে পেয়েছে এরই মধ্যে সে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে’।

মেসি হয়তো ১২ বছর বয়সে রাস্তায় খেলার সময় এমন ছিলেন, ‘এরপর সে বার্সেলোনায় যায় সেখানে মেসি একটা ভিন্ন মানুষ, কাতালান, আরো দূরের মানুষ, আরো শান্ত। কিন্তু তার মধ্যেই এই ব্যাপারটি রয়ে গেছে। এমন না যে মেসি ম্যারাডোনা হয়ে গেছেন কিন্তু মেসির মধ্যে যে রোজারিওর ব্যাপারটা ছিল সেটাই বিশ্বকাপে আমাদের সামনে এসেছে’।

মেসি ওয়েঘোর্স্টের উদ্দেশে ‘বোবো’ বলেন, যার অর্থ বোকা, বাচ্চারাই কেবল এই শব্দটা ব্যবহার করেন।

বালাগের সাথে মার্টিনেজও একমত, মেসি যেন স্কুলের সেই শিশু যে কি না ভুলে অন্য গ্রুপের সাথে পড়ে গেছে।

অ্যাঞ্জেলস উইথ ডার্ট ফেইসেস- অ্যা ফুটবলিং স্টোরি অফ আর্জেন্টিনার লেখক জনাথন উইলসন বলেন, মেসি আসলে তাদেরও অভাব পূরণ করেছেন যারা এই বিশ্বকাপে ছিলেন না।

যারা কথা বলতে পটু যেমন হাভিয়ের মাসচেরানো থাকাকালীন মেসিকে বেশি কথা বলতে হয়নি। কিন্তু কাতারে এখানে একটা শুণ্যতা ছিল।

সাংবাদিক ক্রিশ্চিয়ান মার্টিন পুরো বিশ্বকাপ সফরেই আর্জেন্টিনার দলের সাথে ছিলেন, তিনি ও লিওনেল মেসির আত্মজীবনীর লেখক বালাগ দুজনই মেসির আচরণে ধাক্কা খান, কীভাবে মেসি এই শুণ্যতা পূরণ করে দিলেন একদম প্রথম ম্যাচ থেকেই।

সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ গোলের হার আর্জেন্টিনা দলের দ্রুতই বিদায়ের শঙ্কা জাগিয়ে তুলেছিল।

অতীত বলে, এমন সব ম্যাচের পর লিওনেল মেসি যত কম সময় সম্ভব মাইকের সামনে কাটাতে চাইবেন কিন্তু বালাগ বলেন, এদিন মেসির মিক্সড জোন পার হতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল।

মেসি সবাইকে বলছিলেন, ‘আমরা এর চেয়ে ভালো’।

মার্টিনেজ যোগ করেন, ‘মেসি উপস্থিত সাংবাদিক প্রায় সবার সাথেই কথা বলেছেন, তিনি তাদের বলেন, ‘আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখেন, আমরা আপনাদের হতাশ করব না, আমাদের সাথে থাকুন’।

‘লিওর এই কথাগুলো খুব শক্তিশালী ছিল’।

জাবালেটা বলেন, ‘আমরা মেসিকে উপভোগ করেছি, তিনি একজন যথাযথ নেতা হয়ে উঠেছেন দারুণভাবে। কঠিন সব মুহূর্তে মেসি একাই কথা বলেছেন, মেসি তার কোনো অনভিজ্ঞ ফুটবলারকে ঠেলে পাঠিয়ে দেননি, এটা দারুণ একটা বিষয় ছিল’।

মিডিয়ার সামনে বা নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের মতো প্রতিপক্ষের সামনে সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর যে তাগিদ, এটা ছিল অনেকটা ম্যারাডোনার মতো। মেসি যেন নিজের ভেতরকার ডিয়েগোকে খুঁজে পেয়েছিলেন এই বিশ্বকাপে।

সাংবাদিক আরোউহো অবশ্য ‘মেসি ম্যারাডোনাকে চ্যালেঞ্জ করছেন’ বা ‘লিওনেল মেসি ম্যারাডোনার মতো হয়ে উঠছেন’ এই ধারণায় বিশ্বাসী নন, তিনি মনে করেন মেসি মেসির মতো থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, যে শৈশবে তার পরিবারের নিয়তির বোঝা নিয়ে বার্সেলোনায় এসেছিলেন কিংবা যে সুপারস্টার মেসি একটা জাতির প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছিলেন না আগের বিশ্বকাপগুলোতে।

তিনি বলেন, ‘মাঠে অনেক হাসিখুশি একটা ব্যাপার ছিল, মেসির মাথা ছিল উঁচু এবং আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। মেসি নিজের মধ্যেই একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে নিয়েছিলেন। সে নিজের মতো করে বিব্রত হতেও বিব্রত বোধ করতেন না, যদি সেটার কোনো মানে দাঁড়ায়। লোকে এসএমএস দিচ্ছিলেন, মেসির ওপর কি ম্যারাডোনা ভর করেছে। মেসির হয়ে কি ম্যারাডোনা কথা বলছেন? না, মেসি ম্যারাডোনা হননি, মেসি নিজের ভেতরই বেড়ে উঠেছেন’।

তিনি আরো বলেন, ‘বহু বছর ধরেই মেসির ওপর পারফর্ম করার জন্য চাপ ছিল, আরো কিছু অস্পষ্ট চাপ ছিল, যেমন আরো আর্জেন্টিনিয়ান হয়ে ওঠো, আরো ম্যারাডোনার মতো হয়ে ওঠো। আমার মনে হয় মেসি এটা নিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না। এই বিশ্বকাপে দেখার মতো বিষয় ছিল লিওনেল মেসির শারীরিক স্বস্তি, পারফর্ম করার চাপ নেই, নিজের মতো থাকার স্বাচ্ছন্দ্য আছে।

মেসি নিজের মধ্যেই স্বস্তিতে ছিলেন।

জনাথন উইলসন বলেন, ‘আমার মনে হয় মেসি নিজের কাঁধে ইতিহাসের নি:শ্বাস অনুভব করছিলেন, তার সময় আসছে এটা তিনি বুঝতে পারছিলেন’।

সাংবাদিক আরাউহোর মতে, কাতারে লিওনেল মেসির সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার ছিল শান্ত থাকা, জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা সামলে রাখা।

তিনি বলেন, ‘একটা মজার বিষয় হচ্ছে, ২০০৬ সালে মেসি বেঞ্চে বসেছিলেন তিনি জার্মানির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেননি। মেসির মধ্যে একটা বিষাদ ছিল, একটা তাগিদ ছিল, শিশুসুলভ কিছু ব্যাপার ছিল যা আমরা কাতারে দেখেছি। মানুষের আবেগের পরিপক্ক হয়ে ওঠার চূড়ান্ত এক রূপ দেখেছি। প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে এই বেড়ে ওঠা দেখাটা আসলেই দারু ‘।

এবার কী তবে মেসির বয়স হলো, তিনি কি প্রয়াত ম্যারাডোনার সংস্পর্শ পেয়েছেন। তিনি কি রোজারিওতে ফেলে আসা ছোট মেসিকে ফিরে পেয়েছেন।

যাই চলুক না কেন মেসির মনে মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে সেটা তাকে সাহায্য করেছে জয়ী মেডেলটি জিততে।

মার্টিনেজ বলেন, ‘এই বিশ্বকাপের পর আমার মনে হয়, মেসি ফুটবলকে সম্পূর্ণ করেছে’।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement