২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

১৯ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল

বদলে গেছে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের চিত্র। - ছবি : সংগৃহীত

২০০৩-০৪ সালে যাত্রা শুরু বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের। প্রথম বাংলাদেশ দলের অবস্থা এমনই ছিল যে ঢাকায় পশ্চিমবঙ্গের দলের বিপক্ষে খেলার জার্সি তাদের ছিল না। শেষ পর্যন্ত পুরুষ সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের জার্সি পরিয়ে নামিয়ে দেয়া মহিলা দলকে। এই দলের ফুটবলাররা আবার কেউ সাঁতারু, কেউ অ্যাথলেট, হ্যান্ডবল খেলোয়াড় ইত্যাদি।

এরপর ধীরে ধীরে মহিলা জাতীয় দল গঠনে জোর দেয়া, আর আন্তর্জাতিক ফুটবলের গন্ডি বলতে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে গিয়ে ম্যাচ খেলা। ২০০৬ সালে সাহস করেই এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের বাছাই পর্বে অংশ নেয় বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে কিরগিজস্তানের কাছে ০-৬ এবং ভারতের কাছে ০-৯ হেরে মিশনে সমাপ্তি। ২০১৪ সালে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে লাল-সবুজ মেয়েদের ৯-০ তে হারায় থাইল্যান্ড। সিনিয়র লেভেলে সেটিই এখন পর্যন্ত বড় হার।

অথচ মাঠে নামার ১৯ বছর না যেতেই সেই বাংলাদেশ এখন সাফ চ্যাম্পিয়ন। আর অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে তো টানা দুই আসর ধরে এশিয়ার সেরা সাত দলের একটি তারা। তাদের চোখ এখন সিনিয়র লেভেলে এশিয়ার সেরাদের কাতারে থাকা।

এই তো সেদিনও বাংলাদেশ মহিলা দল মানেই ছিল প্রতিপক্ষের হালি গোলের উৎসব। গত বছর উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ইরান ও জর্ডানের কাছে ০-৫ গোল করে হজম। ২০১৮ সালে মিয়ানমারে অলিম্পিক গেমস ফুটবল বাছাইয়ে ভারত ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল সাবিনাদের। ভারতকে এবার সেই হিসেব চুকিয়ে দেয়া হয়েছে।

২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমসে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের স্বাদ ২-০ গোলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে। এরপর পাকিস্তানকে ১-০তে হারিয়ে ব্রোঞ্জ অর্জন। সে বছরই কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত প্রথম মহিলা সাফ ফুটবলে ভুটানের বিপক্ষে পাওয়া ৯-০ গোলের জয় এখন পর্যন্ত সাবিনাদের সবচেয়ে বড় জয়।

বাংলাদেশের মেয়েরা যে আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোছানো, পরিকল্পিত ও তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটবল খেলতে পারে সে জানান দিয়েছিল ২০১০ সালে কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলের বাছাই পর্বে। ভারত ও ইরানের কাছে ০-৬ এবং জর্ডানের কাছে ১-৬ গোলে হারলেও প্রথমার্ধে দুর্বার ছিলেন সাবিনা-মিরোনারা। নেতিয়ে যায় দ্বিতীয়ার্ধেই।

এরই ধারাক্রমে ২০১৪ সালের এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবলের বাছাই পর্বে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ১-০ গোলে হারিয়ে দেয় জর্ডানকে। সাফ অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে সেটিই ছিল গোলাম রাব্বানী ছোটন বাহিনীর প্রথম বড় সাফল্য। এরপর ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুই দফা এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে চূড়ান্ত পর্বে যাওয়া।

মহিলা ফুটবলে প্রথম শিরোপা জয়ের স্বাদ ২০১৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল ফুটবলে নেপালকে ফাইনালে ১-০তে হারিয়ে। এর আগে তারা পরাজিত করেছিল ইরান ও ভারতকে। ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলের ট্রফি জয় দিয়ে আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের শুরু মারিয়া মান্ডাদের। পরের বছর অনূর্ধ্ব-১৮ সাফের শিরোপাও জয় করেন মিসরাত জাহান মৌসুমীরা।

গত বছর অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা সাফের ট্রফি জয়ের পর এবার এলো সাফ শিরোপাও। এসবই এসেছে ধারাক্রমে। বাফুফে সারা বছর ধরেই মহিলা ফুটবলারদের ক্যাম্পে রেখে ট্রেনিং করানোর ফলই আজ পাচ্ছে দেশের মহিলা ফুটবল।

দলটি এখন এতটাই সংগঠিত যে হাই র‌্যাংকিংয়ের মালয়েশিয়া, ভারত, নেপাল বা হংকং কেউই পাত্তা পাচ্ছে না। ২০১৯ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে বিশ্বকাপে খেলা অস্ট্রেলিয়া তো বাধ্য হয়েছিল ২-২ গোলে ড্র করতে। যেকোনো বিশ্বকাপে খেলা দলের বিপক্ষে এটাই বড় অর্জন তহুরা খাতুনদের।

এখন বাকি মহিলা এশিয়ান কাপ, এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অলিম্পিক গেমস বাছাই ফুটবলে সাফল্য পাওয়া।


আরো সংবাদ



premium cement