২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নাটকীয় এক দলবদলের সামনে দাঁড়িয়ে এমবাপে

ফরাসি ফুটবল তারকা এমবাপে - ছবি : সংগৃহীত

এই মুহূর্তে বিশ্বের নামিদামি সব ক্লাবেরই পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকেই আছেন ফরাসি ফুটবল তারকা কিলিয়ান এমবাপে। তিনি এখন ফুটবলের ভাষায় ফ্রি এজেন্ট, যাকে যে কোনো ক্লাব সই করাতে পারবে, ভিড়াতে পারবে নিজেদের দলে।

স্পেনের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ জোর দিয়ে জানাচ্ছে যে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই কিলিয়ান এমবাপের সাথে চুক্তি করতে যাচ্ছে। লা লিগার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ চাইছে যাতে এমবাপে দ্রুতই তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।

তবে ফরাসী ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই তেইশ বছর বয়সী এই ফরাসি তারকাকে ছাড়তে নারাজ, তাকে ধরে রাখতে পনের কোটি ইউরোর প্রস্তাবও দিয়েছিল ক্লাবটি।

সামনে নেশন্স লিগে খেলার জন্য এমবাপে ফ্রান্সের জাতীয় ফুটবল দলের ক্যাম্পে যোগ দেবেন এই মাসের শেষে বা জুনের শুরুতে।

রিয়াল মাদ্রিদ তার আগেই ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দিতে চায় যে কিলিয়ান এমবাপে মাদ্রিদেই যাচ্ছেন।

ফুটবল বিষয়ক লেখক-জার্নালিস্ট গিলেম বালাগ লিখেছেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদের সাথে এমবাপের শর্তগুলো নিয়ে আলোচনা হয়ে গেছে। তারা এমবাপের সিদ্ধান্ত ও তার অতীত ক্লাবকে সম্মান করে। যদিও এমবাপে সিদ্ধান্ত নিতে খানিকটা দেরি করছেন, পিএসজির পনেরো কোটি ইউরোর প্রস্তাবের পরে।’

‘মাদ্রিদ এমবাপের ব্যক্তিগত সকল চাওয়া পাওয়ার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এমবাপের ইমেজ রাইটস এবং অন্যান্য যেসব বিষয় রয়েছে তা চূড়ান্ত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। ফ্রান্স দলের সাথে যোগ দেয়ার আগেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে এবং তা হচ্ছে এমবাপে রিয়াল মাদ্রিদ যাচ্ছেন। পিএসজি থেকে নানা ধরনের খবর আসছে তবে রিয়াল মাদ্রিদ বার্তা দিয়েছে ‘চিন্তার কিছু নেই’।’

গিলেম বালাগের তথ্য অনুযায়ী রিয়াল মাদ্রিদের সাথে কিলিয়ান এমবাপের বোঝাপড়া হয়ে গেছে কয়েক মাস আগেই।

পিএসজি আসলে এমবাপেকে রাখতে মরিয়া হয়ে আছে বলেই নানা ধরনের খবর এসেছে, এমবাপেকে দুই কোটি দশ লাখ পাউন্ড বার্ষিক বেতনের প্রস্তাবও দিয়েছে প্যারিসের ক্লাবটি। প্রথমে পিএসজিতে থাকতে সাড়ে বারো কোটি ইউরো, এরপর আরো আড়াই কোটি ইউরো যোগ করে এমবাপেকে প্রস্তাব দেয় দলটি।

এমবাপে সরাসরি না বললেও রিয়াল মাদ্রিদই তার প্রথম পছন্দ, এটি ইউরোপীয় গণমাধ্যমের সাথে সম্পৃক্ত অনেকেই জানেন।

এমবাপের আইডল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে যেসব রেকর্ড গড়েছেন, সেই পথ অনুসরণ করতে চান তিনিও। বর্তমান সময়ের আরো অনেক তারকার মতো এমবাপের চুক্তি এবং অন্যান্য বিষয় পারিবারিকভাবেই দেখা হয়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা এমবাপেরই, জানলেন গিলেম বালাগ।

লিওনেল মেসি প্যারিসে আসার পর এমবাপেকে ঘিরে একটা প্রশ্ন উঠেছিল গণমাধ্যমে, যেখানে মেসির মতো বড় নাম আছে সেখানে এমবাপে মূল চরিত্র থাকতে পারবেন কি না।

এখানে মেসির সাথে ব্রাজিলের তারকা নেইমারের সম্পর্কও মুখ্য বিষয় হয়ে ওঠে। কিন্তু গিলেম বালাগের লেখায় উঠে এসেছে - নেইমারের সাথে লিওনেল মেসির সম্পর্ক ভালো, কিন্তু বার্সেলোনায় থাকাকালীন সেই ঘনিষ্ঠতা এখন আর নেই।

আর পিএসজির বর্তমান কোচ মরিসিও পচেত্তিনোকে একটা কঠিন কাজ করতে হয়েছে, এমবাপের মতো দ্রুতগতির ফুটবলারের সাথে লিওনেল মেসি যিনি তুলনামূলক ধীরে আক্রমণে ওঠা পছন্দ করেন এবং নেইমার যিনি পায়ের কাজে ডিফেন্ডারদের পরাস্ত করতে পছন্দ করেন - এই তিনের সমন্বয়ে একটি আক্রমণভাগ গড়ে তোলা।

এতোসব জটিলতার মধ্যেও এমবাপেই পিএসজির সেরা ফুটবলার, সংখ্যা, প্রভাব এবং মাঠের খেলা সবই কিলিয়ান এমবাপের পক্ষে। তবে পিএসজি এই মৌসুমে বড় ব্যবধানে ফরাসী লিগ জিতে নিলেও সামগ্রিকভাবে দলটা সমালোচনার মুখে আছে। কারণ এটা স্পষ্ট যে, পিএসজি ইউরোপের সেরা ক্লাব হতে চায় বলেই মেসিকে দলে আনা হয়েছে। কিন্তু এবারও তারা ব্যর্থ হয়েছে।

এমবাপেকে নিয়ে এতো কাড়াকাড়ি কেন?

মাত্র ২৩ বছর বয়স এখনই বিশ্বের নামিদামি সব ক্লাবেরই পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকেই আছেন এমবাপে। এ কারণেই এক দেড় বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ইউরোপীয়ান ফুটবলের সফলতম ক্লাব রেয়াল মাদ্রিদে কিলিয়ান এমবাপেকে দলে চাইছে।

প্যারিস থেকে সাত মাইল দূরে বাড়ি এমবাপের। ২০১৭ সালে ইউরোপিয়ান ফুটবলে আসেন মোনাকোর হয়ে। প্রথমে লোনে পিএসজিতে যোগ দেন, এরপর ১৬৫ মিলিয়ন পাউন্ডে তিনি পাকাপাকিভাবেই প্যারিসের ক্লাবটির হয়ে খেলা শুরু করেন।

ফ্রান্সে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই, তাই এই ক্লাবের হয়ে খেলা অনেক ফরাসি ফুটবলারের প্রত্যাশা থাকে। তেমনটি ছিল এই ফুটবলারেরও।

ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের সময়টাতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ভক্ত ছিলেন এমবাপে।

গিলেম বালাগ তার কলামে লিখেছেন, রোনালদোর মতোই এমবাপে সেই বিরল জাতের ফুটবলার যারা প্রচণ্ড চাপ নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন।

এর প্রমাণও দিয়েছেন তিনি, মাত্র ১৮ বছর বয়সে ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন, অবদান রেখেছেন। প্রতিপক্ষে যখন লিওনেল মেসির মতো তারকা ফুটবলার ছিলেন।

২০১৮ সালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে একটি নকআউট ম্যাচে ফ্রান্সের জয়ের নায়ক হয়ে ওঠেন এমবাপে। ফাইনাল ম্যাচেও গোল করেন তিনি। এমবাপে চার গোল করে সেরা তরুণ ফুটবলারের পুরস্কার পেয়েছেন ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে।

বিশ্বকাপ জয়ের পর এমবাপে টিভি ক্যামেরায় বলেন, ‘এটা কেবলই শুরু। আমি এখানে ইতিহাস গড়তে এসেছি।’

গিলেম বালাগের মতে, এটা এমবাপের মানসিক দৃঢ়তার প্রমাণ।

অনেকেই রোনালদোর জায়গা নেয়ার চেষ্টা করেছে মাদ্রিদে, রিয়াল মাদ্রিদে প্রায় নয় বছর কাটিয়েছেন রোনালদো, সেখানে প্রায় সব রেকর্ডই এখন রোনালদোর নামের পাশে।

গিলেম বালাগের মতে, যারা রোনালদোর জায়গা নেয়ার চেষ্টা করেছে তাদের তুলনায় এমবাপে আলাদা। শ্রেষ্ঠত্বের একটা ক্ষুধা আছে তার মধ্যে। এমবাপে ও ক্লাব হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদের চাওয়া একই বিন্দুতে মেলে সেটা হচ্ছে শ্রেষ্ঠত্ব। রেয়ালও চেষ্টা করবে এমবাপেকে সেরাটা দেয়ার সুযোগ করে দিতে।

গিলেম বালাগ একটি বিষয়ে বিস্মিত হয়েছেন, তিনি এমবাপেকে পরিপক্ক এক মানুষ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

‘আমি ভেবেছিলাম পিএসজিতে এতো বেশি স্প্যানিশ ভাষাভাষি আছে যে, এমবাপে এখানে একা বোধ করতে পারে। আমার জানামতে, তিনি ফ্রেঞ্চ ভাষায়ই কথা বলেন। কিন্তু যখন লিওনেল মেসি প্যারিসে যান, সেই সুবাদে আমার এমবাপের সাথে দেখা হলো। শুনে অবাক হলাম তিনি স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলছেন।’

সম্প্রতি একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের সাবেক তারকা থিয়েরি ওঁরি মজা করে এমবাপেকে প্রশ্ন করেন, ড্রেসিংরুমে কেন তিনি স্প্যানিশ বলেন? এমবাপে উত্তরে বলেন, ‘যদি আমি বিশ্বতারকা হতে চাই আমি নিজেকে শুধু ফ্রেঞ্চ ভাষায় সীমাবদ্ধ রাখতে পারি না।’

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement