লাল কার্ড পেয়েও ভারতের সাথে ড্র বাংলাদেশের
- রফিকুল হায়দার ফরহাদ মালদ্বীপ থেকে
- ০৪ অক্টোবর ২০২১, ১৯:০২, আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২১, ১৪:১২
এ যেন জয়ের চেয়েও বেশি আনন্দের। যাদের বিপক্ষে গত ১৮ বছরে নেই জয়ের রেকর্ড, আগের সর্বশেষ দেখায় ০-২ গোলে হার, আগের ৩০ ম্যাচের ১৬টিতে যাদের জয়, তাদের সাথে ১-১ এ ড্র। তাও আবার ১০ ফুটবলার নিয়ে। গতকাল মালেতে চলমান ১৩তম সাফের এই ম্যাচে বাংলাদেশ ১-১ অবস্থানে ঠেকিয়ে দেয় ভারতকে। প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়া লাল-সবুজরা ৭৫ মিনিটে ইয়াসিন আরাফাতের হেডের গোলে সমতা আনে। ফলে দুই ম্যাচ শেষে চার পয়েন্ট এখন জামাল ভূঁইয়াদের ভাণ্ডারে। অন্য দিকে ভারত এক ম্যাচ থেকে জমা করেছে এক পয়েন্ট। ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ তাদের তৃতীয় ম্যাচ খেলবে মালদ্বীপের বিপক্ষে। স্বাগতিকরা প্রথম ম্যাচে ০-১ গোলে হারে নেপালের কাছে।
২০১৯ সালে কলকাতার মাঠে যে রেজাল্ট, কাল মালেতেও তাই। তবে তফাত ভারতের মাঠে লিড নিয়েও ড্র। আর কাল মালদ্বীপের রাজধানীতে পিছিয়ে পড়ে এবং ১০ ফুটবলার নিয়ে ১-১ এ ড্র। তাই এই ড্রয়ের আনন্দটা জয়ের কাছাকাছিই। সবচেয়ে বড় বিষয়, ভারতের বিপক্ষে পয়েন্ট না খোয়ানোর মিশনে সফল কোচ অস্কার ব্রুজন। টানা দুই ম্যাচে অপরাজিত থাকা লাল-সবুজরা এখন পরের দুই ম্যাচের একটিতে জিতলে উজ্জ্বল হবে তাদের ১৬ তারিখের ফাইনালে খেলাটা। প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে দুই ড্রতেই আছে জামালের ভূমিকা। কলকাতায় তার ফ্রি-কিকে সাদউদ্দিনের হেডে গোল। আর কাল তার কর্নারে ইয়াসিন আরাফাতের হেডে পরাস্ত ভারতীয় কিপার।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ী হওয়া একাদশে দু’টি পরিবর্তন। জুয়েল রানার বদলে সাদউদ্দিন এবং সুমন রেজার বিকল্প মতিন মিয়া। র্যাংকিংয়ে ৮৪ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারতের বিপক্ষে ৪-১-৪-১ ফরমেশনে খেলা শুরু বাংলাদেশ দলের। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই ভারতীয়দের চেপে ধরা। এই চাপ সামলাতে বারবার ভুল পাস দিচ্ছিল সাতবারের সাফ জয়ীরা। প্রস্তুতি কমের কারণে সুনীল ছেত্রীরা বাংলাদেশকে ওপরে টেনে এনে পাল্টা আক্রমণে বল জালে পাঠানোর অপেক্ষায় ছিল। আর যাদের দলে আছে সুনীল ছেত্রীর মতো গোলমেশিন তিনি তো এমন সুযোগের অপেক্ষায় থাকবেনই। ২৬ মিনিটেই এলো সেই সুযোগ। ডান প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন উদান্ত সিং। তাকে সময় মতো বাধা দিতে পারেননি লেফট ব্যাক ইয়াসিন আরাফাত। অন্য দিকে তপু বর্মনের মার্কিংও যথাযথ ছিল না। ফলে উদান্ত সিংয়ের কাটব্যাকে যা হওয়ার তাই। সে বলে সুনীল ছেত্রীর শটে পরাস্ত বাংলাদেশ কিপার। বলের আশ্রয় জালে। জাতীয় দলে এটি সুনীলের ৭৬তম গোল।
এরপরই সুনীল ছেত্রীর আরেকটি শটে বাম দিকে শরীর ফেলে কর্নার করেন বাংলাদেশ কিপার। শুরু হয় লাল-সবুজদের গোল পরিশোধের চেষ্টা। ৪০ মিনিটে সেই সুযোগ আসে। ক্ষিপ্রগতির স্ট্রাইকার মতিন মিয়ার থ্রু পাসে ফাঁকায় বল পেয়ে যান সাদউদ্দিন। সামনে শুধু গোলরক্ষক। ২০১৯ সালে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে গোল করা সাদ নিজে শট নিলেও পারতেন। কিন্তু বাড়তি নিশ্চয়তার জন্য সাদ পাস দেন অরক্ষিত বিপলু আহমেদকে। তবে এই মিডফিল্ডারের ডান পায়ের বাঁকানো শট বাম দিকে শরীর ফেলে ঠেকিয়ে দেন ভারতীয় কিপার গুরপ্রিত সিং সান্দু। ৪৩ মিনিটে জামালের কর্নারে হেড নিতে পারেননি তপু বর্মন।
এক গোলে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ বিরতির পর নতুনভাবে শুরুর ছক কষে। তখনই ফের আঘাত অস্কার ব্রুজনের দলে। নিজের আলস্যে বলের দখল হারান বিশ্বনাথ। এরপর বিপজ্জনকভাবে ঢুকে পড়া লিস্টন কোলাসেকে ফাউল করেন বিশ্বনাথ। রেফারি মাজিদ মোহাম্মদ ভুল করে কোলাসেকে লাল কার্ড দেখালেও পরে তা বাংলাদেশ রাইট ব্যাককেই প্রদর্শন করেন। ফলে ১০ জনে পরিণত হন জামাল ভূঁইয়ারা। ৫৭ মিনিটে জিকো বাংলাদেশকে রক্ষা করেন উদান্ত সিংহের শট রুখে দিয়ে।
এক খেলোয়াড় কম নিয়েও দমে যায়নি বাংলাদেশ। মতিন মিয়া দুইবার বল নিয়ে ঢুকেও গোলে শট নিতে পারেননি বিপক্ষ ডিফেন্ডারের বাধায়। অবশেষে ৭৫ মিনিটে গোল। জামাল ভূঁইয়ার কর্নারে ব্যাক হেড করেন রাকিব হোসেন। সেই বলে ডিফেন্স থেকে উঠে আসা ইয়াসিন আরাফাতের ডাইভিং হেড জালে। মুহূর্তেই কেঁপে ওঠে মালে ন্যাশনাল স্টেডিয়াম। হাজার হাজার বাংলাদেশীর ‘গোল গোল’ শব্দে প্রকম্পিত পুরো স্টেডিয়াম। সিনিয়র জাতীয় দলের লাল-সবুজ জার্সিতে এটি সাইফ স্পোর্টিংয়ের এই ফুটবলারের প্রথম গোল। ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান তপু বর্মন।
বাংলাদেশ দল : জিকো, তপু, তারিক, বিশ্বনাথ, আরাফাত, জামাল, বিপলু (সোহেল রানা ৬৫ মি.), রাকিব (রহমত ৭৭ মি.), সাদউদ্দিন, ইব্রাহিম (সুফিল ৬৫ মি.), মতিন ( সুমন রেজা ৬৫ মি.)।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা