২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সোনালি অধ্যায়ে ফুলের সঙ্গে ছিল কাঁটাও

সোনালি অধ্যায়ে ফুলের সঙ্গে ছিল কাঁটাও - ছবি : সংগৃহীত

কারো কাছে তিনি ছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র। কেউ তাকে ঈশ্বররূপে দেখার চেষ্টা করতেন। বুয়েনস আইরেসের তস্য গলি থেকে সাফল্যের রাজপথে বিচরণ করেছিলেন শুধু বাঁ পায়ের জাদুতে। সাফল্যের শিখর স্পর্শ করেছিলেন বিদ্যুৎ গতিতে। রাতারাতি হয়েছিলেন তরুণ প্রজন্মের ‘আইকন’। খ্যাতি আর বিতর্ক তার জীবনে হাত ধরাধরি করে চলত। সীমাহীন ভালোবাসায় পূর্ণ ও বাঁধনহারা জীবন ছিল তার। তিনি আর কেউ নন। ডিয়েগো আর্মান্দো মারাডোনা।

কৈশোরেই তার ফুটবল প্রতিভা সবার নজরে আসে। পরবর্তী সময়ে তার ফুটবল প্রতিভার স্বাদ পায় গোটা বিশ্ব। তারই মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে বারবার জায়গা করে নিয়েছিলেন খবরের শিরোনামে। কোনো কিছুতেই দমেননি ম্যারাডোনা। ফের উঠে দাঁড়িয়েছেন। ডিফেন্সের প্রাচীর ভেদ করে বল পাঠিয়েছেন বিপক্ষের গোলে। যা দেখে আট থেকে আশি উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত হয়ে চিৎকার করে বলে উঠেছে, ‘ডিয়েগো...ডিয়েগো..।’

বেপরোয়া, প্রতিভাবান, আগ্রাসী এবং একজন অনুগত বন্ধু, নির্দয় শত্রু। ম্যারাডোনা সর্বদাই ছিলেন ফুটবলভক্তদের জন্য তীব্র আকর্ষণীয় চরিত্র। তার জনপ্রিয়তার একটা উদাহরণ পাওয়া গেছে আর্জেন্টিনার প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিকের লেখায়, ‘১৮ বছর বয়সে ম্যারাডোনা আফ্রিকায় নেমে ঠিকমতো হাঁটতে পারেননি। তাকে একবার দেখার জন্য জনপ্লাবন আছড়ে পড়েছিল রানওয়েতে। বিমান আটকে গিয়েছিল। এই বিপুল জনপ্রিয়তাই বারবার বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছিল ডিয়েগোকে। খেলার পর মাদকে ডুবে থাকতে ভালোবাসতেন। কপিবুক মানতেন না মাঠে, জীবনেও। সেখান থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার লড়াই চলেছে। কখনও ফিরে আসতে পারবেন ভাবিনি। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছিল ডিয়েগো। ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া যা সম্ভব ছিল না।’

ম্যারাডোনার বিতর্কিত জীবনের জনপ্রিয় অধ্যায় অবশ্যই ‘হ্যান্ড অব গড’। ৮৬-এর বিশ্বকাপে প্রায় একক দক্ষতায় আর্জেন্টিনাকে খেতাব দিয়েছিলেন তিনি। তবে কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তার প্রতিভার উল্টো দিকটাও প্রকাশ পেয়েছিল। এরিয়াল বলে বক্সের মধ্যে হাত দিয়ে গোল করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। যে কারণে ইংল্যান্ডবাসী আজও হয়তো ক্ষমা করতে পারেনি ফুটবলের রাজপুত্রকে। কিন্তু একই ম্যাচে তিনি ৬০ মিটার দূর থেকে দৌড় শুরু করে পাঁচ ইংলিশ ফুটবলারকে কাটিয়ে শতাব্দীর সেরা গোল উপহার দিয়েছিলেন ফুটবল জনতাকে।

কেরিয়ারের সেরা সময়টা তিনি কাটিয়েছিলেন নাপোলিতে। ৮৭’তে নাপোলিকে প্রথমবার সিরি ‘এ’ শিরোপা উপহার দেন ডিয়েগো। তিন বছর পর আবারো ম্যারাডোনার পায়ের স্পর্শে সেরার শিরোপা পায় ইতালির ক্লাবটি। তখন থেকেই নাপোলির সমর্থকদের চোখে আর্জেন্টাইন তারকা হয়ে ওঠেন ‘ঈশ্বর’। ততদিনে অবশ্য তার অধঃপতনও শুরু হয়ে গিয়েছে সমান তালে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে দুর্বল দল নিয়েও ফাইনালে ওঠে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ছোঁয়ার স্বপ্নভঙ্গে শিশুর মতো অঝোরে কেঁদেছিলেন ও কাঁদিয়েছিলেন ফুটবল জনতাকে।

১৯৯১ সালে ইতালিতে কোকেন নিতে গিয়ে ধরা পড়েন ফুটবলের রাজপুত্র। ১৫ মাসের জন্য বল কেড়ে নেয়া হয় তার পা থেকে। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় ম্যারাডোনার নাপোলি অধ্যায়। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের আসরে ডোপ টেস্টে ধরা পড়ায় প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাসিত হন তিনি। ওই বছরেই বাড়ির সামনে এক সাংবাদিককে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ২ বছর ১০ মাস কারাদাণ্ডে দণ্ডিত হন ডিয়েগো। যে জনতার আবেগ ও ভালোবাসা তাকে ফুটবল মাঠে দাপিয়ে বেড়াতে অক্সিজেনের জোগান দিয়েছে, কেরিয়ারের শেষ দিকে ক্রমশ তাদের থেকেই দূরত্ব বাড়তে থাকে তার।

সূত্র : বর্তমান


আরো সংবাদ



premium cement