১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঢাকার মতো এত নোংরা শহর কোথাও নেই : গণপূর্ত মন্ত্রী

-

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক পুরনো শহর আছে। কিন্তু ঢাকার মতো এত নোংরা শহর কোথাও নেই বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবাদুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা শুধু পরিকল্পনা আর কর্মশালা করি, কিন্তু এর বাস্তবায়ন হয় না।
গতকাল রাজউক অডিটরিয়ামে ‘লালবাগ ও হাজারীবাগ এলাকার জন্য জলবায়ুসহিষ্ণু সবুজ কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো: ছিদ্দিকুর রহমান সরকারের (অব:) সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নবীরুল ইসলাম। আরো আলোচনা করেন, জিআইজেড বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্টিনা বারকার্ড, প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো: আশরাফুল ইসলাম, ত্রয়ী অ্যাসোসিয়েটের টিম লিডার মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, বিআইপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ প্রমুখ।
র আ ম উবাদুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ২০১১ সাল থেকে হাজারীবাগ ও লালবাগের সবুজ উন্নয়নের আলোচনা শুনছি। এখনো চলছে, কিন্তু আপনারা (রাজউক) কাজটি বাস্তবায়ন করবেন কবে? আমরা কিসের পরিকল্পনা করি যে পরিকল্পনার অগ্রগতি নেই? এসব পরিকল্পনার দরকার কী?’
ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, মাঠের কাজ রাজনীতিবিদরা করেন না, যারা সরকারি কর্মকর্তা তারাই করেন। আমাদের সময় তো চলে যাচ্ছে, কবে আমরা গ্রিন ঢাকা করব? ১৯৯৬-৯৭ সাল থেকে হাজারীবাগ নিয়ে আলোচনা শুনছি। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমি চাই এই বছর শেষ হওয়ার আগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিন। শুরু হলে কাজ কিছু হবে। কিন্তু শুধু পরিকল্পনার মধ্যে থাকলে কাজ হবে না।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, পূর্বাচলের প্লট পেয়েছেন যাদের অনেকেই এখন মারা গেছেন। কিন্তু পূর্বাচলে এখনো কাজ চলমান। এটি কবে শেষ হবে? এ সময় তিনি দু’টি জায়গায় সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এক হচ্ছে আমাদের দেশপ্রেম চলে যাচ্ছে এবং অন্যটি হচ্ছে আমরা আমাদের দায়িত্বের প্রতি খেয়াল দেই না।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জিআইজেড ও সিটি ক্লাইমেট ফিন্যান্স গ্যাপ ফান্ডের সহায়তায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) হাজারীবাগ ও লালবাগ এলাকায় সমীক্ষার মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনাটি প্রণয়ন করে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ষাটের দশকে স্থাপিত হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা ছিল বাংলাদেশের একমাত্র চামড়া শিল্প ট্যানারি। ট্যানারি থেকে অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলা হতো, যা নদী ও আশপাশের পরিবেশের জন্য বিপর্যয়কর ছিল। পরিবেশ দূষণের কারণে ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শিল্পটি সাভারে স্থানান্তরিত করা হয় ২০১৭ সালে। ১১৩ একরজুড়ে বিস্তৃত এ এলাকাটি এখন অব্যবহৃত। জরাজীর্ণ ভবন ও পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি ছাড়া এখানে আর কিছু নেই। দীর্ঘ দিনের ট্যানারি কার্যক্রমের ফলে মাটিতে বিপজ্জনক মাত্রায় ক্রোমিয়াম জমা হয়েছে। এলাকার বায়ুদূষণের প্রভাব পুরোপুরি কেটে যেতে সময় লাগবে। তারা বলেন, হাজারীবাগ এলাকাটিকে একটি টেকসই ও বাসযোগ্য এলাকায় রূপান্তর করার জন্য রিজেনারেশন প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে, ট্যানারি মালিকদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে, দূষিত মাটি পরিষ্কার করা হবে এবং একটি নতুন মিশ্র-ব্যবহারের উন্নয়ন তৈরি করা হবে। পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে নেয়া প্রকল্পের ফলে এলাকাটি আবাসিক, বাণিজ্যিক অথবা বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে নতুনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। তাই পুনর্বাসনের সময় ঐতিহ্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে সবার জন্য টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।


আরো সংবাদ



premium cement