১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মুদ্রানীতি প্রণয়নে অর্থনীতিবিদদের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক

টাকা পাচার বন্ধ ও সুদহার না বাড়াতে পরামর্শ
-

অর্থপাচার বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সুদহার না বাড়িয়ে বিকল্পভাবে সমন্বয় করতে হবে। জোর দিতে হবে বাজার তদারকিতে। মুদ্রানীতির উপকরণের মাধ্যমে জনভোগান্তি কমাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি প্রণয়ন কমিটিকে এমনই পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। আর এ কারণে আগামী ছয় মাসের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে তার মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী পদক্ষেপ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থনীতিবিদদের নিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়নের জন্য এক বৈঠকের আয়োজন করে। গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এতে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে ইতোমধ্যে এক লাফে টাকার মান সাত টাকা কমিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ প্রতি ডলার যেখানে ১১০ টাকায় লেনদেন হতো, এক ধাক্কায় সাত টাকা বাড়িয়ে তা ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে। বর্তমানে প্রতি ডলারের দর আরো এক টাকা বাড়িয়ে ১১৮ টাকা করা হয়েছে। যদিও এ দরে বেশির ভাগ গ্রাহক ডলার পাচ্ছেন না। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, অর্থনীতিবিদদের পক্ষে বলা হয়েছে দাম বাড়ানোর কারণে ডলার সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু এ অর্থ নানা উপায়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে, যা ঠেকাতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে এলসির মাধ্যমে ডলার পাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এলসির মাধ্যমে অর্থপাচার বন্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বন্দর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে একটি কমিটি বা কাঠামো ছিল। ওই কাঠামোকে আবারো পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক তার মুদ্রানীতিতে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার কৌশল নির্ধারণ করে। এজন্য কখনো সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে, আবার কখনো সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। গত বছর সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এজন্য নীতিনির্ধারণী সুদহার কয়েক দফা বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যার প্রভাবে বেড়ে গেছে ব্যাংকঋণের সুদহার। আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতে সুদহার বেড়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি বাজারে পড়েছে। টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কৌশল কাজে আসছে না। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখীর লাগাম টানা যাচ্ছে না। বৈঠকে অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, শুধু টাকার প্রবাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তারা এজন্য বাজার তদারকি জোরদার করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সম্পৃক্ত হতে পরামর্শ দিয়েছে। অতিমুনাফাখোর মজুদদারদের আইনের আওতায় আনতে পদক্ষেপ নিতে হবে। সবার সামগ্রিক পদক্ষেপেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। একই সাথে সুদহার না বাড়িয়ে বিকল্প উপায়ে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী মুদ্রানীতি উপকরণের কারণে জনভোগান্তি যাতে না বাড়ে সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। এজন্য আগামী ছয় মাসের মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী পদক্ষেপ রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, আগে প্রতি ছয় মাস পর পর মুদ্রানীতি ঘোষণা করতো বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এখন অর্থবছরের শুরুতেই আগামী এক বছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। যা ছয় মাস পর পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। আগামী ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি চলতি মাসের ১৮ জুলাই বা মাসের শেষ সপ্তাহ ঘোষণা করা হতে পারে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement