দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন : ঢাবি শিক্ষক সমিতি
- ঢাবি প্রতিনিধি
- ১১ জুলাই ২০২৪, ০০:৩২
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেছেন, ‘পূর্বের পেনশন স্কিম যারা রয়েছেন তারা প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন না। বরং গত ১ জুলাই থেকে চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্তরা এই স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। এখানে প্রত্যয় স্কিম থাকা না থাকা নিয়ে আমাদের হারানোর কিংবা পাওয়ার কিছু নেই। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যারা শিক্ষকতা পেশায় আসবে তাদের জন্য ন্যায্য দাবি আদায়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ আন্দোলনে নেমেছেন। জাতির বিবেক; নিজেদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে প্রত্যয় স্কিম নামক বৈষম্যমূলক স্কিমের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা আন্দোলন করছেন।
গতকাল দুপুরে ঢাবির কলা ভবনের প্রধান ফটকে শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচিতে এ মন্তব্য করেন তিনি। এসময় শিক্ষক সমিতির অন্যান্য সদস্যরা প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বক্তব্য দেন।
অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, প্রত্যয় স্কিমের বাতিলের দাবি নিয়ে যে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমাজ সেটার সাথে যারা বিদ্যমান পেনশন ব্যবস্থার আওতাধীন তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের আন্দোলন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। যারা ভবিষ্যতে শিক্ষকতা পেশায় আসবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। তাই আমরা চাই, দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা এ পেশায় আসুক। তিনি আরো বলেন, প্রত্যয় স্কিম ম্যানমেইড ডিজাস্টার। এই দুর্যোগ পেনশন কর্তৃপক্ষ তৈরি করেছে। গণমাধ্যমকর্মীরা আমাদের প্রশ্ন করছে শিক্ষকরা কবে ক্লাসে ফিরবেন। আমরা তাদের বলতে চাই এটা অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করুন। আমাদের দাবি তারা কবে মেনে নেবে। তারা এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সংলাপের আমন্ত্রণ করেনি। আমাদের তিন দফা দাবি মেনে নিলে এখনই কর্মবিরতি ছেড়ে ক্লাসে ফিরব।
এই শিক্ষক নেতা বলেন, আমরা অনুধাবন করছি ক্লাসে দ্রুত না ফিরলে সমস্যা তৈরি হবে। তবে বাধ্য হয়ে জাতির স্বার্থে আন্দোলনে রয়েছি। তবে আমাদের শিক্ষকরা যথেষ্ট আন্তরিক। শুক্র-শনিবার বন্ধের দিনেও রুটিনে থাকা ক্লাসগুলো অফলাইন-অনলাইনে নিয়ে শ্রেণীকার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি। এ ব্যাপারে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জিনাত হুদাকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে সেটা বিচারাধীন বিষয়। এ নিয়ে আমরা মন্তব্য করতে চাই না। কোটা যাদের আছে তারাও আমাদের শিক্ষার্থী। আবার, কোটাবিরোধীরাও আমাদের শিক্ষার্থী। এখানে আদালত কর্তৃক একটি রায়ের ভিত্তিতে তারা পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন করছেন। এটা শিক্ষার্থীদের নিজস্ব বিষয়। আমরা এ নিয়ে কোনো মতামত দিতে চাই না।
অবস্থান কর্মসূচিতে অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রত্যয় নামক পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এক ও অভিন্নভাবে আন্দোলন করছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ জাতির বিবেক। তারা যদি এই বৈষম্যকে মেনে নিয়ে চুপ থাকে তাহলে ঐতিহাসিকভাবে তারা অপরাধীর কাতারে থাকবেন। মূলত সমগ্র জাতির প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরব না। তিনি আরো বলেন, প্রত্যয় থাকা না থাকা নিয়ে আমাদের পাওয়ার বা হারানোর কিছু নাই। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহের জায়গাটাকে সচল রাখতে আমরা তিন দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করছি। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সংলাপের আহ্বান পাইনি। আমরা ক্লাস, গবেষণাগার ছেড়ে আন্দোলনে থাকতে চাই না। আমাদের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের ধর্মঘট চলবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বজনীন পেনশনে প্রত্যয় নামক স্কিম যুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই স্কিমে বেশ কিছু সুবিধা অবনমন করা হয়েছে। মূলত প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল, সুপার গ্রেডে পদোন্নতির দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছে দেশের ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতৃত্বে অর্ধদিবস কর্মবিরতি, মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করেছেন।
এছাড়াও, গতকাল সকালে প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই প্রতিবাদী সমাবেশ করেন তারা। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষকদের ডাকা লাগাতার কর্মবিরতিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাউন্ড ফোরে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি করে শিক্ষকরা। এতে ক্লাস, পরীক্ষা, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম সবকিছু এখনো বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালুর দাবিও জানানো হয়।
ববি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ আবদুল বাতেন চৌধুরী বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা