মংলায় জেলে পরিবারে নীরব কান্না
- সেকান্দার আলী মংলা
- ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০৫
ঘূর্ণিঝড় রেমাল কেড়ে নিয়েছে মংলার জেলে পরিবারগুলোর শেষ সম্বল জাল-নৌকা আর সরঞ্জমাদিসহ মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও। এক দিকে ঝড়ের ক্ষত চিহ্ন, অন্য দিকে মাছের প্রজনন মৌসুমে সরকারের চলমান ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞার ফলে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলেদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বেকার হয়ে পড়েছে এলাকার প্রায় ২৫-৩০ হাজার জেলে। পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন বাঁচাতে নতুন করে লড়াই করতে হবে এ পেশার সাথে জড়িতদের। জেলেদের চলমান এ সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়াতে বিকল্প কর্মসংস্থানসহ সরকারি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে নদী ও খালের পরিমাণ ১৮৭৪.১ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনের পানির ভাগকে বলা হয় মৎস্য সম্পদের ভাণ্ডার। মংলার উপকূলীয় এলাকায় কয়েক হাজার জনগোষ্ঠী প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সাগর ও সুন্দরবনের মৎস্য আহরণের ওপর নির্ভরশীল। বছরের পুরো সময়টাই কাটে তাদের সুন্দরবনের সাগর-নদী-খালে মাছ ধরে। আর এতে যতটুকুই রোজগার হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার। গত ২৬ মে হঠাৎ শুরু হয় ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডব। রাত-দিনের চলমান এ তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এখানকার জেলে পল্লীতে। নদীর উপকূলে বসবাস করায় বন্যার পানিতে ভাসিয়ে নিয়েছে তাদের জাল-নৌকা ও সরঞ্জামসহ মাথা গোঁজার ঠাঁই ও মালামাল। এতে বেশির ভাগ জেলে রাস্তায় আবার কেউ নদীর তীরে টং ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, এরই মধ্যে বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম শুরু হওয়ায় গত ১ জুন থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে মাছ আহরণ, পর্যটক প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ যেন রীতিমতো জেলেদের উপর মড়ার উপর খাড়ার ঘা। এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কাটছে তাদের অর্ধাহারে-অনাহারে। জীবন বাঁচাতে কুমিরের মধ্যেও নদীর পাড়ে নারীরা জাল টেনে দিন পার করছেন। এ উপকূলীয় এলাকায় জেলে পেশার সাথে জড়িত আছেন প্রায় ২৫-৩০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা মাত্র ১০ হাজার ৪০০। বছরের বিভিন্ন সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে শুধু তারাই সহায়তা পেয়ে থাকেন। বাকি জেলেদের জীবন কাটে চরম কষ্টে। ঝড়ে সব কিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মংলা উপকূলের কয়েক হাজার জেলে পরিবার। নিবন্ধিত জেলেরা সরকারের প্রণোদনা পেলেও বাকিদের কী হবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছে এখানকার জেলে পরিবারগুলো। তাই বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় সরকারী সহায়তার দাবি জানিয়েছেন তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না নিবন্ধিত জেলেদের পাশাপাশি অনিবন্ধিত জেলেদের তথ্য সংগ্রহ ও ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারগুলো ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি সহায়তার আশ্বাস দেন। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার অঞ্জন বিশ্বাস জানান, ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের এখানে জেলেদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। তাদের মধ্যে জয়মনির জেলেরা যারা কুঁড়েঘরে থাকে তাদের ক্ষতি বেশি হয়েছে। আমরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তা ছাড়া আমরাও চেষ্টা করছি তারা যেন বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে কিছু পেতে পারে।
প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগর ও সুন্দরবনে বছরে দুইবার মাছ ধরা বন্ধ রাখে সরকার, এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষত জেলে পাল্লীতে। তাই অসহায় এ পরিবারগুলোকে বাঁচাতে সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা