১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার শিশুর লাশ : ইউনিসেফ

-

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের নিচে হাজার হাজার নিখোঁজ শিশুর লাশ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে জাতিসঙ্ঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকারবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। টানা আট মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইল এই ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে। লাগাতার ও বর্বর এই আগ্রাসনে গাজায় ইতোমধ্যেই প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজায় ‘হাজার হাজার নিখোঁজ শিশুর লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে’ বলে ইউনিসেফের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর টেড চাইবান জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জানিয়েছেন। সশস্ত্র সঙ্ঘাতে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসঙ্ঘ প্রধানের সাম্প্রতিক রিপোর্টের ওপর জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ সভায় বক্তৃতা করার সময় টেড চাইবান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘২০২৩ সালে ৪ হাজার ৩১২ ফিলিস্তিনি এবং ৭০ জন ইসরাইলি শিশু নিহত হয়েছে বা পঙ্গু হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, যা রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত হত্যা এবং পঙ্গুত্বের সব যাচাইকৃত ঘটনার ৩৭ শতাংশ।’ টেড চাইবান আরো বলেন, কিন্তু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা শিশুদের সংখ্যা এবং মানবতাবাদী সংস্থা ও ব্যক্তিদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেয়ার অর্থ হলো গাজায় নিহত শিশুদের আরো হাজার হাজার ঘটনাকে প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি জাতিসঙ্ঘ।
এদিকে গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিখোঁজ হয়ে গেছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে বিশ্বজুড়ে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি গত সোমবার জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলার কারণে গাজা উপত্যকায় ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শিশু নিখোঁজ হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছে, অনেককে আটক করা হয়েছে, অনেককে আবার অচিহ্নিত কবরে সমাহিত করা হয়েছে, আবার অনেকেই তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
এক বিবৃতিতে ব্রিটেনভিত্তিক এই দাতব্য সংস্থা বলেছে, গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইল অবিরাম স্থল ও বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এই কারণে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে তথ্য সংগ্রহ এবং তা যাচাই করা ‘প্রায় অসম্ভব’। তবে গাজায় অন্তত ১৭ হাজার শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া আনুমানিক চার হাজার শিশু ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ রয়েছে এবং বিভিন্ন গণকবরেও অসংখ্য শিশুকে সমাহিত করা হয়েছে।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘অন্যদের জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে, যার মধ্যে অজ্ঞাতসংখ্যক শিশুকে আটক করা হয়েছে এবং জোরপূর্বক গাজা থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তাদের সাথে দুর্ব্যবহার ও নির্যাতন করা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া তাদের পরিবারের কাছে তাদের অবস্থান এখনো অজানা।’
সেভ দ্য চিলড্রেনস-এর রিজিওনাল ডিরেক্টর ফর মিডল ইস্ট জেরেমি স্টোনার বলেছেন, ‘পরিবারগুলো তাদের প্রিয়জন কোথায় অবস্থান করছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। কোনো অভিভাবককে যেন তাদের সন্তানের লাশ খুঁজে বের করার জন্য ধ্বংসস্তূপ বা গণকবর খুঁড়তে না হয়। যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো শিশুর একা ও অরক্ষিত অবস্থায় থাকা উচিত নয়। কোনো শিশুকে আটকে রাখা বা বন্দী করাও উচিত নয়।
ইসরাইলকে সাড়ে ৬ বিলিয়ন সহায়তা : গাজা যুদ্ধে ইসরাইলকে সাড়ে ৬ বিলিয়ন সহায়তা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইল গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিরাপত্তা সহায়তা পেয়েছে। এর প্রায় অর্ধেক সহায়তা গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর ৭ মাস পর ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। মার্কিন প্রশাসনের এক সিনিয়র কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, ‘এই সহযোগিতা প্যাকেজ একটি বিশাল ও ব্যাপক উদ্যোগ। এর থেকেই অনুমান করা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক কতটা গভীর ও জটিল। এই সহযোগিতা প্যাকেজই ছিল চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং তার প্রতিনিধি দলের সাথে কথোপকথনের বিষয়। ওয়াশিংটন অস্ত্র সরবরাহ করছে না বলে সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন নেতানিয়াহু। সে কারণে ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের গভীরতা দেখানোর জন্যই এ তথ্য প্রকাশ করেছেন ওই কর্মকর্তা। চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তা এবং ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের মধ্যে আলোচনার সময় সামরিক সহায়তার তথ্য উঠে আসে।


আরো সংবাদ



premium cement