১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দাসত্বের সম্পর্ক তৈরি করা হয়েছে ভারতের সাথে : হেফাজত

-

স্বদেশের স্বার্থ না দেখে ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া বন্ধুত্ব নয়, বরং দাসত্বের শামিল- এমন মন্তব্য করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারী, উগ্র হিন্দুত্ববাদী খুনি, ইসরাইলের দোসর, আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সত্তা ধ্বংসকারী মোদি সরকারের সাথে দেশবিরোধী কোনো চুক্তি বা সমঝোতা এদেশের জনগণ মেনে নেবে না। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য এমন দাসত্বের নজির আমরা অতীতেও দেখেছি। কিন্তু দাসত্বের পরিণতি কখনো সম্মানজনক হয় না। ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে মোদি সরকারের সাথে ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হওয়া নিয়ে গতকাল এক বিবৃতিতে হেফাজত আমির এ কথা বলেন। আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী আরো বলেন, আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক। অথচ ভারতকে রেল-ট্রানজিট দেয়ার ব্যাপারে দেশের সার্বভৌমত্বের অধিকারী জনগণের সম্মতি আছে কি নেই, তা দেখা হয়নি। আমাদের বুকের ওপর দিয়ে ভারতের রেল আসা-যাওয়া করবে, কিন্তু এর বিনিময়ে ভারতের সাথে তিস্তাচুক্তি করতেও ব্যর্থ হয়েছে সরকার। রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের যেকোনো চুক্তি বা সমঝোতা হতে হয় পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে। একতরফা স্বার্থের চুক্তি কোনোভাবেই সমমর্যাদা রক্ষা করে না।

তিনি আরো বলেন, অন্যায্য বাঁধ বসিয়ে ভারত তিস্তাসহ আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদীগুলোর পানি একতরফাভাবে ভোগ করছে। আমাদের প্রাপ্যটুকু তারা দিচ্ছে না। আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। সেখানকার কৃষক ও বাসিন্দারা নিদারুণ কষ্টে ভুগছেন। আবার ভারী বৃষ্টিপাতের সময় ব্যারাজ খুলে দিয়ে ভারত উজানের পানিতে আমাদের বন্যায় ডুবিয়ে মারে। টিপাইমুখ ও ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে আমাদের নদীব্যবস্থা ধ্বংস করেছে ভারত। আমাদের দুর্বল নতজানু পররাষ্ট্রনীতির সুযোগে ভারত নদীর পানি প্রত্যাহার ইস্যুগুলো বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখেছে। অথচ জনগণের আপত্তি উপেক্ষা করে আমাদের ফেনী নদীর পানি ভারতকে ভোগ করার সুযোগ দেয়া হলো। হেফাজত আমির বলেন, ভারতের সাথে বন্ধুত্ব নয়, দাসত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। তথাকথিত বন্ধুত্বের নামে আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতের সুবিধাই শুধু দেখা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে আমরাও তো অনেক অসুবিধায় আছি। আমাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো তো ভারত অনুভব করে না। সীমান্তহত্যা বন্ধেও ভারতের কোনো বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যায় না। কিসের স্বার্থে ভারতকে সারাজীবন মনে রাখার মতো সুবিধা দেয়া হচ্ছে, তা দেশের মানুষ বোঝে। একদলীয় ফ্যাসিস্ট শাসন আজ জাতির জন্য করাল অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী আরো বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশকে দখলে নেয়ার ভারতীয় ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার পর ২০২১ সালে মুসলিমবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক মোদি সরকারের নির্দেশে বিনা কারণে শত শত হেফাজত নেতাকর্মী ও দেশপ্রেমিক আলেম-ওলামাকে গ্রেফতার করে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। ভারত আমাদের ধর্ম-সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, আইন-আদালত, আমলা, রাজনীতি সব ক্ষেত্রে দখলবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। কওমি মাদরাসা ধ্বংসের বহুমুখী চক্রান্ত করছে। এবার দেশ বিকিয়ে দেয়ার চুক্তি করা হয়েছে। জন্মভূমির মায়া থাকলে কোনো নাগরিক এসব গোলামি চুক্তি মেনে নিতে পারে না। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ নেই। কিন্তু দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এলে, ইসলামী চেতনা আক্রান্ত হলে হেফাজত নেতাকর্মী ও দেশপ্রেমিক আলেম সমাজ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে পারে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement




up