১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করবে

পেশাজীবী পরিষদের বিবৃতি
-


সাংবাদিকতা নিয়ে পুলিশসার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ-বিএসপিপি। গতকাল সোমবার বিএসপিপি’র আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী সই করা এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, অ্যাসোসিয়েশনটির বক্তব্য স্বাধীন গণমাধ্যম ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার উপর প্রচ্ছন্ন হুমকি এবং দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা বলে মনে করে বিএসপিপি। পেশাজীবীদের শীর্ষ এই সংগঠনের নেতারা বলেন, কেবল পুলিশি রাষ্ট্রে সাংবাদিকদের এমন হুমকি দিতে দেখা যায়। এ কথা বলতে আজ দ্বিধা নেই যে, পুলিশের উপর ভর করে বারবার রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের কারণে পুলিশের ঔদ্ধত্য এতোই বেড়েছে যে, তারা আজ ধরাকে সরাজ্ঞান করছে। সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি এটাই প্রমাণ করে ‘দেশ ক্রমেই পুলিশি রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’ নেতৃদ্বয় অবিলম্বে এই বিবৃতি প্রত্যাহারের দাবি জানান।

বিএসপিপির বিবৃতিতে বলা হয়, পুলিশের কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবৈধ অর্জনের সংবাদ প্রকাশের ক্ষুব্ধ হয় পুলিশ ক্যাডার সার্ভিসের সংগঠন ‘বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’। তারা গণমাধ্যমকে ‘সতর্ক’ করে যে বিবৃতি দিয়েছে, সেখানে সাংবাদিকদের জন্য প্রচ্ছন্ন হুমকিও রয়েছে, যা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত।

পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে গণমাধ্যমে ‘অতিরঞ্জিত’ ও ‘নেতিবাচক’ সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে দাবি করে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘কিছু মিডিয়া হাউজ ব্যক্তিগত আক্রোশ ও নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় কোনো কোনো পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবমাননাকর নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করছে যার মধ্য দিয়ে ‘পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে’।
নেতৃদ্বয় বলেন, আমরা জিজ্ঞাসা করতে চাই, কোনো একটি বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সংবাদ প্রকাশ করলে সেটি কীভাবে ওই প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করে? তার মানে এই নয় কি, তারা দুর্নীতি করেই যাবে গণমাধ্যম কিছুই লিখতে পারবে না? আমরা তাদের কাছে জানতে চাই, ‘ব্যক্তির অপরাধের দায় কি বাহিনী বা প্রতিষ্ঠানের?’ আর এভাবে বিবৃতি দেয়া দুর্নীতিবাজদের পক্ষে সাফাই গাওয়া নয় কি? এই বিবৃতি কি গোটা পুলিশ বাহিনীকে কলঙ্কিত করেনি?

আমরা আরো অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই বিবৃতির একদিন পরই গণমাধ্যমে যাতে পুলিশের খবর প্রকাশের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়! চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষণ্ণ হয় এ ধরনের খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোর অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশনা দেখে মনে হচ্ছে, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে গণমাধ্যম মহাঅপরাধ করে ফেলেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এমন চিঠি এটাই প্রমাণ করে ‘রাষ্ট্র দুর্নীতিবাজদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিতে যাচ্ছে’!

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা পত্রিকায় আরো একটি খবর দেখলাম, পুলিশের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এলে তা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সদর দফতরের অনুমতি নেয়ার বিধান চান পুলিশ কর্মকর্তারা। শিগগির সরকারের কাছে প্রস্তাব আকারে পুলিশ এই দাবি জানাবে বলে একটি পত্রিকায় খবর বের হয়েছে। আমরা মনে করি, ‘এ ধরনের উদ্যোগ দুর্নীতিকে আরো বেশি উৎসাহিত করবে। দুর্নীতিবাজরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে। মোদ্দাকথা, দুর্নীতিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদন দেয়া হবে। যা একটি জাতিকে ধ্বংস করার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’
সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের কাছে আমাদের জিজ্ঞাস্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অ্যাসোসিয়েশন যে বিবৃতি দিয়েছে, একইভাবে যদি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সংগঠন থেকেও দাবি উঠে যে, তাদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এলে তা তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সদর দফতরের অনুমতি নিতে হবে! আর তাদের আবদার রক্ষার্থে এটি কার্যকর হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলে কি আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে?


আরো সংবাদ



premium cement