১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে

সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতার শীর্ষ বৈঠক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
-

ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা শক্তিশালী করার সার্বিক দিক নিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়েত্রা বলেছেন, এই আলোচনার মধ্যে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধা, যৌথ মহড়া, সামরিক বাহিনীর জন্য সরঞ্জাম যা ভারত সরবরাহ করতে পারে। এই বিষয়ে দুই পক্ষে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা সামনের দিনগুলোতে এ ব্যাপারে অগ্রগতি আশা করছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর নিয়ে গত শনিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিনয় কোয়েত্রা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গত শুক্রবার ও শনিবার দিল্লি সফর করেন। সফরের শেষ দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অতি সম্প্রতি বাংলাদেশকে একটি সাবমেরিন দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন নিয়ে কোনো ঐকমত্য হয়েছে কি না?
জবাবে কোয়েত্রা আরো বলেন, দুই দেশের প্রতিরক্ষা স্টাফ কলেজের মধ্যে শিক্ষা বিনিময়ের ওপর একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পরিস্থিতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ইস্যুটিকে আমরা খুব স্পর্শকাতরতার সাথে দেখি। সীমান্ত হত্যা কমানোর জন্য আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাণঘাতী নয়- এমন অস্ত্রের ব্যবহার। তবে যখনই আমাদের সীমান্তরক্ষীরা অপরাধী চক্র দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন আত্মরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে হয়। এটির কারণে কখনো কখনো দুঃখজনকভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবে আমরা এ ব্যাপারে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করি।
তিস্তা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, তিস্তার পানি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের জন্য কারিগরি দল গঠন করা হয়েছে। দুই দেশের অভিন্ন পানি সম্পদের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যার জন্য কারিগরি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এটা যতটা না পানি বণ্টন, তার চেয়ে বেশি তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ ব্যবস্থাপনা। বিষয়টি যেহেতু কারিগরি প্রকৃতির, তাই দুই নেতা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে এ ব্যাপারে অগ্রগতির জন্য কারিগরি দল প্রচেষ্টা চালাবে।
ভারতের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কোয়েত্রা বলেন, ভারত-বাংলাদেশ শীর্ষ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে দুই দেশের কৌশলগত ও নিরাপত্তা স্বার্থ নিয়ে, চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবং এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে সুযোগ খোঁজার উপায় নিয়ে। আলোচনা তৃতীয় কোনো দেশের চেয়ে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ওপর বেশি কেন্দ্রীভূত ছিল।
এদিকে দিল্লিতে শীর্ষ বৈঠক সম্পর্কে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনাকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নে যৌথ কারিগরি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এ সময় তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে ভারতের পক্ষ থেকে আগ্রহ দেখানো হয়। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়। বৈঠকে সীমান্তে হতাহত শূন্যে নামিয়ে আনতে জোর দিয়েছে দুই দেশ। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীরা মাদক চোরাচালান, অবৈধ চলাচল এবং মানবপাচার রোধে একত্রে কাজ করবে বলে আলোচনা হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল রাজনীতি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও কানেক্টিভিটি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সংস্কৃতি ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ।
দিল্লি থেকে ফিরে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর খুব ফলপ্রসূ ছিল। সেখানে তিস্তা নদী ও অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তার জন্য ভারতের কারিগরি দল বাংলাদেশে আসবে। এটা ইতিবাচক। তবে সেখানে তিস্তা প্রকল্পে চীনের সংশ্লিষ্ট নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমারে জাতিগত সঙ্ঘাত চলছে, সে বিষয়ে চীনের প্রসঙ্গ এসেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, সৌদি আরবে হজ করতে গিয়েছিলাম। সেখানে সৌদি যুবরাজের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। তাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। যুবরাজ বলেছেন, ইনশাআল্লাহ।


আরো সংবাদ



premium cement