১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
এইচইআই’র গবেষণা প্রতিবেদন

দেশে বায়ুদূষণে এক বছরে ১৯ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু

-


বাংলাদেশে বায়ুদূষণে এক বছরে ১৯ হাজারেরও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষের স্বাস্থ্যে যে প্রভাব পড়ছে সে বিষয়ে সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট (এইচইআই)। ইউনিসেফের সহায়তায় করা এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে শিশুদের জন্য বাতাসের গুণগত মান উন্নত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। গতকাল ইউনিসেফ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বাতাসের মানের উদ্বেগজনক অবস্থা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, শুধু ২০২১ সালেই বাংলাদেশে দুই লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মৃত্যুর কারণ ছিল বায়ুদূষণ, যা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বড় ধরনের এক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের (এসওজিএ) ২০২৪ সালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্ব-পশ্চিম, মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশগুলোতে বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা বায়ুদূষণজনিত রোগের বেশি শিকার হয়ে থাকে। এর প্রভাবে অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ, কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়।
বাংলাদেশসহ আফ্রিকা এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে লোয়ার রেসপাইরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণে পাঁচ বছরের কমবয়সী যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার ৪০ শতাংশের জন্যই দায়ী বায়ুদূষণ। ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে ১৯ হাজারেরও বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়। ২০২১ সালে বায়ুদূষণ সম্পর্কিত কারণে বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী সাত লাখের বেশি শিশু মারা যায়। সারা বিশ্বে এই বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ‘অপুষ্টির’ পরই দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ‘বায়ুদূষণ’। মারা যাওয়া এসব শিশুর মধ্যে প্রায় পাঁচ লাখ শিশুর মৃত্যু হয়েছে আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। দূষিত জ্বালানি ব্যবহার করে ঘরের ভেতরে রান্না করাই ছিল এই বায়ুদূষণের কারণ।
জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশে ইউনিসেফের রিপ্রেজেন্টেটিভ শেলডন ইয়েট বলেন, লাখ লাখ মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নিম্ন মানের বাতাসের ক্ষতিকর প্রভাব শিশুদের ওপরই বেশি দেখা যায়। এর প্রভাবে তারা হাঁপানি ও নিউমোনিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হয়। শুধু আজকে আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও বাতাসের গুণগত মান উন্নত করতে টেকসই সমাধান বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ব্যাপক হারে ওজোন গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে, যা বায়ুদূষণজনিত রোগের অন্যতম কারণ। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী ওজোন সম্পর্কিত ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিসঅর্ডার (সিওপিডি) জনিত মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক ঘটেছে ভারতে (দুই লাখ ৩৭ হাজার মৃত্যু), চীনে (এক লাখ ২৫ হাজার ৬০০ মৃত্যু) এবং বাংলাদেশে (১৫ হাজার মৃত্যু)।
এ ছাড়া শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের ভয়াবহ প্রভাব বেশ পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। বায়ুদূষণের ফলে শিশুদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা যায়। বায়ুদূষণের ক্ষতিকর এই প্রভাব শিশু মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থাতেই শুরু হয়ে সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা তাদের শরীরের ওজনের অনুপাতে বেশি বাতাস শ্বাস নেয়ার সময় গ্রহণ করে। দূষিত বায়ুর সাথে তারা দূষিত সব উপাদানও গ্রহণ করে থাকে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে তাদের বিকাশমান ফুসফুস, শরীর ও মস্তিষ্কে।
বায়ুদূষণজনিত এসব রোগের প্রভাব ও প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী সমান নয়। বিশ্বজুড়ে মানুষের ইসকেমিক হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে বায়ুদূষণের অবদান গড়ে ২৮ শতাংশ হলেও ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে এর হার ১০ শতাংশ। তবে পূর্ব, পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর হার (যেমন নাইজেরিয়া, কেনিয়া, রুয়ান্ডা ও বাংলাদেশ) ৪০ শতাংশের বেশি।
এ বছরের এসওজিএ প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব এবং এই বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসঙ্কট মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশ্বজুড়ে দেশগুলো যখন জনস্বাস্থ্যবিষয়ক নীতিমালাকে আরো উন্নত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তখন বাংলাদেশ তার জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বায়ুদূষণ মোকাবেলায় একটি বড় চ্যালেঞ্জের সামনে রয়েছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement