সেন্টমার্টিন নিয়ে সরকারের নীরবতা দাসসুলভ : ফখরুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০৫
সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাম্প্রতিক ঘটনায় সরকারের নীরবতাকে দাসসুলভ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সঙ্কট চলছে। সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কি দুঃখজনক এটি! কত ব্যর্থতা এই সরকারের যে আমার নিজেদের দ্বীপে যেতে পারছি না। সেই দ্বীপে গেলেই অন্যদেশ থেকে গুলি করা হচ্ছে, মেরেও ফেলা হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত সরকার কোনো বক্তব্য পর্যন্ত দেয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এখনো এমন কোনো অবস্থা হয়নি যে, এটাতে আমরা স্টেটমেন্ট দেবো বা কিছু বলব। ফখরুল বলেন, এই সরকার এতই নতজানু যে মিয়ারমারের মতো দেশকেও তারা কিছু বলতে পারছে না। এটা কতটা দাসসুলভ মনোভাব হতে পারে! একটা কথা মনে পড়ে যে, দাস্য সুখে হাস্য মুখে। সুখ তো হাস্য সুখ, মুক্ত হাসি।
গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে ‘১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী।
মির্জা ফখরুল বলেন, সীমান্তে লোক মারছে অথচ এই সরকার কথা বলে না, পানি দেয় না একটা কথা বলে না। আর সেন্টমার্টিনে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সেখানে কয়েক লাখ মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অথচ এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে : মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিকরা এক প্লাটফর্মে আসুন। আমি সবার কথা বলছি না, আমি গণতন্ত্রে যারা বিশ্বাস করেন, তারা যদি একই জায়গায় আসেন তাহলে আপনারা অনেক বেশি শক্তিশালী হবেন। এখানে আমরা বিভক্তি দেখতে পাই। এই বিভক্তিটাকে এড়ানোর চেষ্টা করুন, যারা সিনিয়র আছেন তারা চেষ্টা করতে পারেন। তরুণরা যারা আছেন তারা চেষ্টা করেন যে, এবার অন্তুত আমরা এক হই। এই লড়াইটা কিন্তু সহজ লড়াই নয়। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই গণতান্ত্রিক সংগ্রাম খুবই কষ্টকর লড়াই। এই লড়াইটা একদিনে উল্টে যাবে, একদিনে পাল্টে যাবে তা হবে না। তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। মানুষ ছাড়া গণতান্ত্রিক লড়াই হবে না। আমি রাতারাতি দুই-চারটা বোমটোম ফুটিয়ে দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারব না। বাংলাদেশে সমস্ত মানুষ যেদিন নেমে আসবে যেটা অতীতে এ দেশে হয়েছে সেই কাজগুলো আমাদের করতে হবে, মানুষকে নামিয়ে আনতে হবে, মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে, সব জায়গায় যেতে হবে। তরুণ-যুবকদের সক্রিয় করতে হবে।
বেনজীরের বে-নজীর কাজ : মির্জা ফখরুল বলেন, জাতির জন্য এর চেয়ে ঘন অমানিশা আর কখনো আসেনি। সব দিক দিয়ে আমাদের সমস্ত আশা-আকাক্সক্ষা সব দিক থেকে বিপন্ন করে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে সংবাদকর্মী যারা আছেন যারা সাহস করে কাজ করছেন তাদের আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই যে বেনজীরের বে-নজীর কাজ এটা যেভাবেই হোক গণমাধ্যমের আপনারাই তুলে নিয়ে এসেছেন। আপনারাই বের করেছেন। আজিজ আহমেদের ঘটনাগুলো কিছু কিছু বের হয়ে আসছে। তার ভাইদেরকে পাসপোর্ট পাইয়ে দেয়ার জন্য সে পুরোপুরি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। এটা ভাবা যায় না যে সেনাবাহিনীর একজন সাবেক প্রধান তিনি এ রকম জালিয়াতি করবেন। আমরা চিন্তা করতে পারি না পুলিশ প্রধান এ রকম ভয়াবহ ডাকাতি করে পুরো দেশে একটা সামাজ্য গড়ে তুলবে। তার দুর্নীতি চিন্তা করা যায় না। কিন্তু এরা সেটাকে সম্ভব করেছে।
তিনি বলেন, কারা সম্পদ লুণ্ঠন করছে, কারা সম্পদ পাচার করছে এটা দেশের প্রত্যেকটা মানুষ জানে। আমরা কিছু কথাটা বলার চেষ্টা করি। যেমন কয়েকদিন আগে বলেছি যে, ‘নগদ’ টাকা পাচার করছে কিভাবে? প্রতিটি টাকায় তাদের পাঁচ পয়সা করে কমিশন নিচ্ছে। এই কমিশনের টাকা কোথায় যায়? আমি এই সম্পর্কে কোনো উত্তর পাইনি।
প্রতিরোধ করতে হবে : মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে অনেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের কথা বলেছেন। শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করা ওদের রাজনৈতিক লক্ষ্য। ওরা দেশকে নির্ভরশীল করে দিতে চায়। নিজস্ব কৃষ্টি, ধর্মবোধ, রাষ্ট্র চেতনা সব কিছু পরিবর্তন করতে চায় তারা। সেই জায়গায় আমাদেরকেই প্রতিরোধ করতে হবে, আমাদের দাঁড়াতে হবে। ছাত্রদের তরুণদের অন্য্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমাদের বেরুতে হবে, এর মধ্যেই আমাদের প্রতিবাদের চেষ্টা করতে হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ নানা কালাকানুনের মধ্যে কাজ করার জন্য গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব। সাংবাদিকরা বেকারত্মের কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে উল্লেখ করে তাদের কষ্ঠের সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন তিনি। টেলিভিশনের ‘টক শো’তে সাংবাদিকদের কেউ কেউ তথ্য-উপাত্ত দিয়ে কথা বলেন সেজন্য তাদেরকেও ধন্যবাদ জানিয়ে আরো জোরালোভাবে সোচ্চার হওয়ার পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, বাকের হোসাইন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খান, মো: খায়রুল বাশার, কায়কোবাদ মিলন প্রমুখ।
এ সময় বিএফইউজের সহসভাপতি মুহাম্মদ খায়রুল বাশার, এ কে এম মহসিন, সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, সোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামসহ বিএফইউজে ও ডিইউজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা