১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
আজ ১ আষাঢ়

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে বর্ষার কদম ফুল

-

প্রকৃতিতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বর্ষাকাল। আবহমান গ্রাম-বাংলায় ষড়ঋতুর মধ্যে বর্ষাকাল যেন সেরা ঋতু। আর তাইতো এ বর্ষাকে স্বাগত জানাতে আগমনী বার্তা নিয়ে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে গাছে গাছে ফুটেছে মনভোলানো সৌন্দর্যের বর্ষার দূত কদম ফুল। চকচকে উজ্জ্বল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে থাকা কদম ফুলের সৌরভ নিচ্ছে রঙিন প্রজাপতিও।
কদম ফুলে রঙিন প্রজাপতির ছুটাছুটি যেন প্রকৃতিতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে। সেই সাথে চিরচেনা মিষ্টি একটা গন্ধে মেতে উঠেছে গ্রামীণ সবুজ শ্যামল প্রকৃতিও। কদম ফুলের সতেজ নির্মল সৌন্দর্য আর মোহনীয় ঘ্রাণ প্রকৃতিপ্রেমীসহ সবার মনে সৃষ্টি করেছে ভিন্ন এক অনুভূতি।
বর্ষার সাথে কদম ফুলের যেন এক নিবিড় সম্পর্ক প্রাকৃতিকভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাইতো পল্লীকবি জসীম উদ্দীন লিখেছিলেন, ‘প্রাণ সখিরে.......ঐ শোন কদম্বতলে বংশী বাজায় কে।’ মূলত ঐতিহ্যগতভাবেই বর্ষা ঋতুতেই প্রকৃতিকে রাঙিয়ে ফোটে বর্ষাদূত কদম ফুল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কদম ফুল সাধারণত আষাঢ় মাসে দেখা যাওয়ার কথা থাকলেও জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ থেকেই হোসেনপুরে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে এ কদম ফুল।
কদম এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। এই ফুলের আরেক নাম নীপ। এছাড়াও এ ফুলের আরো কতগুলো আঞ্চলিক নাম রয়েছে। যেমন সর্ষপ, সুরভি, পুলকি, মেঘাগমপ্রিয়, বৃত্তপুষ্প, সিন্ধুপুষ্প, মঞ্জুকেশিনী ইত্যাদি। স্থানীয় হোসেনপুর মহিলা কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নাজমুন নাহার জানান, দেশের ফুলগুলোর মধ্যে কদম ফুল অন্যতম। এই গাছের উচ্চতা ৪০ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এর আদি নিবাস ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, মালয় ও চীনে। এই গাছের পাতা লম্বা, চকচকে উজ্জ্বল সবুজ। শীতকালে এই গাছের পাতা ঝরে গেলেও বসন্ত এলেই এই গাছে নতুন পাতা গজাতে শুরু করে। কদম ফুল গোলাকার। ফুলটিকে একটি ফুল মনে হলেও আসলে এটি অসংখ্য ফুলের একটি গুচ্ছ। এর ভেতরে মাংসল পুষ্পাধার রয়েছে, যাতে হলুদ রঙের ফানেলের মতো নরম সাদা পাপড়িগুলো আটকে থাকে। কদম গাছের ফল বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। এরাই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় এই গাছের বংশবিস্তারে সাহায্য করে থাকে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে, মেঠোপথের ধারে, বসতবাড়ির আশপাশে, পুকুর ও দীঘির পাড়ের কদম গাছ ছেয়ে আছে মিষ্টি গন্ধে ভরা তুলতুলে কদম ফুলে। এসব ফুলের মনভোলানো সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হচ্ছেন শিশুরাসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। শিশুরা এসব ফুল তাদের খেলার অনুষঙ্গ হিসেবেও ব্যবহার করছে। কিশোরীদের চুলের খোঁপা ও বেনিতেও শোভা পাচ্ছে বর্ষাদূত কদম ফুল। উঠতি বয়সী কিশোর-কিশোরীদের হাতেও শোভা পাচ্ছে এই ফুল। প্রতিটি সড়ক দিয়ে যেতে যেতে কদম ফুলের গন্ধ ও সৌন্দর্য উপভোগ করছেন সবাই। কদম ফুলের গন্ধে যেন গ্রামবাংলার চিরচেনা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় প্রকৃতিপ্রেমী ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন জানান, বর্ষাকালে প্রকৃতিতে কদম ফুল ফোটার সাথে গ্রামবাংলার এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এখন অসময়েও কদম ফুল ফুটতে দেখা যায়। এবার উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কদম ফুল ফুটেছে। এ ফুলের মধ্যে যেন বাঙালি বাঙালি এক আভিজাত্য রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement