১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
শুল্ক কমানোর প্রভাব নেই বাজারে

কোরবানিকে সামনে রেখে বেড়েছে মসলার দাম

-

প্রস্তাবিত বাজেটে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, তেজপাতাসহ ২৭টি পণ্য আমদানিতে উৎস কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়। যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা সম্ভব হয়। কিন্তু এর প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাজারে বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের বাজারদর প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাজেটের আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি করা হতো ৬৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়। দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকায়। এলাচ বিক্রি করা হয় ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়, দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায়। দারুচিনি বিক্রি করা হয়েছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়, এখন বিক্রি করা হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৮০ টাকায়। ঈদকে ঘিরে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ৬৮০ টাকা থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
টিসিবির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, খুচরায় প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ দাম বেড়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা। দেশী রসুন বিক্রি করা হচ্ছে ১৯০ থেকে ২৪০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ১৯০ থেকে ২১০ টাকা। আমদানি করা আদা বিক্রি করা হচ্ছে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায়, এক মাস আগে ছিল ২১০ থেকে ২৫০ টাকা। একইভাবে বেড়েছে শুকনো মরিচের দামও। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো মরিচ ৫০ টাকা এবং কেজি ধরে কিনলে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতির দাম বেড়েছে প্রায় ১৫০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দর বেড়ে যাওয়া, এলসি খুলতে অনীহা ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে কোরবানির আগেই অস্থির মসলার বাজার। তবে ভোক্তারা বলছেন, সরকার দাম বাড়ালে মিনিটের মধ্যে কার্যকর হয়। আর দাম কমালে দিনের পর দিন তা কার্যকর হয় না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশে মসলা আমদানি হয়েছে প্রায় তিন হাজার ৮৫২ কোটি টাকার। এর আগের (২০২২-২৩) অর্থবছরে আমদানি হয় তিন হাজার ২০০ কোটি টাকার। অর্থাৎ চলতি বছর এরই মধ্যে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার বেশি মসলা আমদানি হয়েছে। তারা জানান, ৬০ শতাংশ মসলার আমদানি হয় কোরবানির আগে। মূলত ভারত থেকে আমদানি হয় জিরা ও এলাচ। ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও গুয়াতেমালা থেকে আসে লবঙ্গ ও দারচিনি। এত দিন ওই সব দেশে মসলার উৎপাদন কম ছিল। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ডলারের বাড়তি দর। মূলত এসব কারণে আমদানি বেশি হলেও বাড়ছে দাম।
এ দিকে আবার বেড়েছে ডিমের দর। বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের বাদামি রঙের ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ এবং সাদা রঙের ডিম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে ঈদের আরেক প্রয়োজনীয় উপকরণ পোলাওয়ের চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। পোলাওয়ের চাল খোলা প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত চাল ১৫০ থেকে ১৫৫ বিক্রি হচ্ছে। যদিও এসব প্যাকেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দেয়া রয়েছে ১৭০-১৭৫ টাকা।
রাজধানীর বাজারে মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এতে বাজারে তুলনামূলকভাবে ক্রেতা কম। তাই মুরগির দাম কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। তবে গরুর গোশত বাড়তি দাম ৮০০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি করা হচ্ছে।
মসলার পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে বাড়তে দেখা গেছে সালাদের উপকরণ শসা, টমেটো ও গাজরের দাম। প্রতি কেজি শসা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা দিন আগেও ৮০ টাকা ছিল। একইভাবে বেড়ে টমেটো ১২০ টাকা, পুরনো গাজর ৮০ টাকা ও নতুন গাজর ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। লেবু হালি বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা দরে। বাজারে কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বেগুন মানভেদে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ও পটোল ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুরমুখী কেজি ১২০ টাকা, লতি কেজি ৮০ টাকা। লাউ প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চাল কুমড়া প্রতিটি ৫০ টাকা। প্রতি কেজি আলু বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ টাকায়।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পাঙাশ প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, শিং মাছ প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, ছোট সাইজের শোল প্রতি কেজি ৫০০ টাকা ও আর মাঝারি সাইজের শোল ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সরপুঁটি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায়।
বড় সাইজের আইড় মাছ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজিতে। প্রতি কেজি চিতল মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, রুই মাছ ২৬০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা ও কার্প মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকায়। আর চিংড়ি প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া টাকি মাছ প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, মলা মাছ কেজি প্রতি ৪০০ টাকা ও পাবদা মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল