১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাস জাতিসঙ্ঘে

ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত গাজায় খাবার পানি পেতে কঠিন সংগ্রামে ফিলিস্তিনি শিশু-কিশোর : মিডলইস্ট আই -

- প্রস্তাবে রাজি হামাস সাড়া নেই ইসরাইলের
- হামাসের বুবি-ট্র্যাপে ৪ ইসরাইলি সেনার মৃত্যু

ইসরাইল-গাজা যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে, তাতে সায় জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ‘পুরো ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি’র প্রস্তাব রেখেছে; তাতে হামাসের হাতে বন্দীদের মুক্তি, মৃত বন্দীদের দেহাবশেষ হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের সাথে মুক্তি দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
ইসরাইল যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করেছে জানিয়ে হামাসকেও তা মেনে নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছ খসড়ায়। তবে ইসরাইলের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবের পক্ষে কোনো ইতিবাচক সাড়া এখনো পাওয়া যায়নি। বরং প্রস্তাব না মানার ইঙ্গিত এসেছে দেশটির পক্ষ থেকে। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসরাইল বলেছে, ‘গাজা নিয়ে কোনো অর্থহীন আলোচনা করা হবে না।’ বিবিসি, রয়টার্স ও আলজাজিরা।
জাতিসঙ্ঘে ইসরাইলের প্রতিনিধি জানান, তার দেশ গাজা নিয়ে এমন কোনো অর্থহীন ও দীর্ঘমেয়াদি আলোচনায় জড়াবে না, যেটা হামাস নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাতে পারে। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে হামাস। এক বিবৃতিতে সংগঠনটি কিভাবে যুদ্ধবিরতির শর্তগুলো বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীদের সাথে কাজ করার সদিচ্ছার কথা জানিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। সিএনএন বলছে, প্রস্তাব পাসের পর জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, এটা বাস্তবায়নের ভার এখন ইসরাইলের হাতে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার সিনিয়র হামাস কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা। সামি আবু জুহরি বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি, ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে হামাস। ইসরাইল যেন প্রস্তাবটি মেনে চলে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে অবিলম্বে দখলদারদের যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রকৃত পরীক্ষার মুখে রয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত ৩১ মে তিন পর্বের এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। কয়েকটি দেশের সরকারের সাথে ধনী দেশগুলোর জোট জি সেভেন তাতে সমর্থন দিয়েছিল। এবার নিরাপত্তা পরিষদও তাতে সায় দিলো। বিবিসি লিখেছে, নিরাপত্তা পরিষদের এই ভোটাভুটি চলমান সঙ্ঘাতের অবসানে দুই পক্ষের ওপরই চাপ বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শান্তি চুক্তির পক্ষে সমর্থন আদায়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ বিদেশী নেতাদের সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের বৈঠকের পরপরই নিরাপত্তা পরিষদের এ সম্মতি এলো।
এই ভোটাভুটির কয়েক ঘণ্টা আগে ব্লিনকেন ওই অঞ্চলের নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যদি শান্তি চান, তাহলে হামাসকে ‘হ্যাঁ’ বলতে চাপ দিন। হামাস এর আগে বলেছিল, বাইডেনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের একাংশ মেনে নিতে তারা রাজি। সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির পর এক বিবৃতিতে তারা ওই খসড়াকে ‘স্বাগত’ জানিয়েছে। বিবিসি লিখেছে, ফিলিস্তিনের এই সংগঠন এখন স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা এবং গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলের সব সেনা প্রত্যাহারে দাবি জানাতে পারে।
তবে দোহায় যুদ্ধবিরতির যে আলোচনা চলছে, হামাস নেতারা সেখানে এই প্রস্তাব নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেননি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি কর্মকর্তারা। বাইডেনের তিন ধাপের এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের চূড়ান্ত ধাপে গাজার বড় ধরনের পুনর্গঠনের কথা বলা আছে। গত ছয় মাসের যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওই ভূখণ্ড।

শান্তি প্রস্তাব প্রশ্নের মুখে : জাতিসঙ্ঘের অনুমোদনের পর বাইডেন প্রশাসন গাজায় শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর করতে পারে কি না, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। হামাস প্রস্তাবকে স্বাগত জানালেও যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তির দাবি করছে। তবে হামাস ইসরাইলের কাছে যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের যে দাবি করছে, ইসরাইল তা পুরোপুরি নাকচ করে দেয়ায় আমেরিকার পক্ষে শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর করা কঠিন হবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। মার্কিন পক্ষের দাবি, ইসরাইল ইতোমধ্যে সেই পরিকল্পনায় সম্মতি জানিয়েছে। এবার হামাসকেও সেই প্রস্তাব মেনে নিতে হবে। হামাস নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিকে স্বাগত জানিয়েছে। মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ওই পরিকল্পনা কার্যকর করার সদিচ্ছাও প্রকাশ করেছে সেই গোষ্ঠী।
ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশ-বিদেশে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অস্ত্রবিরতির একাধিক প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বাইডেন প্রশাসন সমালোচনার মুখে পড়েছিল। এবার নিজস্ব উদ্যোগে এমন প্রস্তাব এনে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন বাইডেন। তবে হামাস ইসরাইলের কাছে যুদ্ধের স্থায়ী অবসানের যে দাবি করছে, ইসরাইল তা পুরোপুরি নাকচ করে দেয়ায় আমেরিকার পক্ষে শান্তি পরিকল্পনা কার্যকর করা কঠিন হবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।
গাজায় হামাসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার আগে ইসরাইল যুদ্ধ বন্ধ করতে প্রস্তুত নয়। বাইডেন প্রশাসন ধাপে ধাপে সেই স্থায়ী অস্ত্রবিরতির পথে এগোতে চাইলেও আপাতত অনেক বাধার মুখে পড়ছে। পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এই উদ্যোগকে সঠিক দিশায় পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন সোমবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে মুখোমুখি কথা বলেছেন। ইসরাইলি মন্ত্রিসভা থেকে বিরোধী নেতা বেনি গ্যান্টজের বিদায়ের পর নেতানিয়াহু কট্টরপন্থী জোটসঙ্গীদের ওপর আরো নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় তার পক্ষে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। জোটসঙ্গীরা সরকার ভেঙে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে।
৪ ইসরাইলি সেনা নিহত : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত ভূখণ্ড গাজায় হামাসের পেতে রাখা বুবি-ট্র্যাপে চার ইসরাইলি সেনার মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার এই চার সেনা মারা যান এবং সাতজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনী। এ নিয়ে গাজায় ২৯৯ ইসরাইলি সেনা নিহত হলো। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষাবাহিনী জানিয়েছে, নিহত চারজন সেনা হলেন: মেজর তাল সেবেনস্কি শোলাভ, স্টাফ সার্জেন্ট আইতান কার্লসবার্ন, সার্জেন্ট আলমগ শালোম এবং ইয়ের লেভিন। আইডিএফের দেয়া তথ্য অনুসারে, এই চারজনই ইসরাইলি বাহিনীর জিভাতি ব্রিগেডের হয়ে কাজ করতেন। শালোম এবং লেভিন এখনো তাদের প্রশিক্ষণের সময়ই শেষ করেননি। আইডিএফের প্রাথমিক আইডিএফ তদন্ত অনুসারে, সৈন্যরা রাফাহের শাবোরা পাড়ায় একটি সন্দেহজনক বাড়ির ভেতরে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছিল এই ভেবে যে, হয়তো কোনো ফাঁদ পাতা আছে। কিন্তু তাতে কোনো কিছু না ঘটায় ওই চার সেনা বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করে। দু’জন সেনা তিনতলা ভবনটিতে প্রবেশ করার সাথে সাথে সেই বিস্ফোরকই বিস্ফোরিত হয় এবং বাড়িটি সেনাদের ওপর ভেঙে পড়ে।

 


আরো সংবাদ



premium cement