নতুন শিক্ষাক্রমে ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মেধা নৈতিকতা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ জুন ২০২৪, ০০:২২
নতুন শিক্ষাক্রমের আড়ালে খুদে শিক্ষার্থীদের মেধা ও নৈতিকতা ধ্বংসের সব আয়োজন চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। একই সাথে তাদের দাবি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া অ্যাসাইনমেন্টের নামে শিক্ষার্থীদের ডিভাইসে আসক্তিও বাড়ছে। গতকাল সোমবার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করেন উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। শিক্ষাক্রম-২০২১ বাতিল, সন্তানদের সার্বিক শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের নামে মিথ্যা মামলা ও হয়রানির প্রতিবাদে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধনে অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষা নিয়ে পুতুল খেলা চলবে না। আমাদের শিশুরা পুতুল না, রাষ্ট্রে শিক্ষাব্যবস্থা দেশ-বিদেশী এজেন্সির দাস হতে পারে না। তারা বলেন, আমাদের সন্তানরা পুতুল নয়, তারা রাত জেগে অ্যাসাইনমেন্ট নাকি ডিভাইসে আসক্ত? সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকরা কথা বলবে না তো কে বলবে? আমরা সন্তানদের শিক্ষা ধ্বংসের চক্রান্ত আমরাই রাখব। ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? প্রজেক্ট অ্যাসাইনমেন্টের নামে শিক্ষা ব্যয় বাড়ছে এসব লেখা বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধনে অংশ নেন তারা।
নতুন যে শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে তা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মেধা ও নৈতিকতা ধ্বংসকারী উল্লেখ করে অভিভাবকরা এটা বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে খালেদা নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার নাম খালেদা হলেও আমি শেখ হাসিনার ভক্ত, পছন্দ করি। তিনি দেশে অনেক ভিশনারি কার্যক্রমের উদ্ভাবক। কিন্তু তিনি হয়তো জানেন না, নতুন যে শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে সেটি কতটা ক্ষতিকর। এই নতুন শিক্ষাক্রম অ্যাসাইনেমন্ট নির্ভর। শিশু শিক্ষার্থীরা বেসিক কিছু শিখছে না। কোনো সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন নেই। যে যার মতো রাত জেগে ডিভাইস ব্যবহারে গুগল সার্চ করে অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করছে।
রুপা নামে আরেক অভিভাবক বলেন, আমরা নতুন এই শিক্ষাক্রমে বিরোধী না। কিন্তু আমরা অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। নতুন শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী করা সময়ের দাবি। আমরা এখন কৃষিনির্ভর। আমরা ইংল্যান্ডের মতো না। লন্ডন হয়ে যায়নি ঢাকা। অথচ আমাদের শিশুরা মধ্যরাত পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকছে। সেই ছোটবেলায় গণিতের সূত্রগুলো আমাদের এখনো মুখস্থ। কিন্তু আমাদের শিশুরা সেই গণিতের বেসিক সূত্র সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। আমরা ধোঁয়াশার মধ্যে আছি। আসলে শিশুরা কি শিখবে সেটার সঠিক যুগোপযোগী গাইডলাইন দরকার। আমরা মাউশি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিপক্ষে না।
সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এক শিক্ষার্থীর মা আফসানা পারভীন বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে আমাদের কোনো পূর্ব ধারণা নেই। মাউশি কোনো গাইডলাইন দেয়নি। আমার সন্তান ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণীতে উঠল। আমি চেষ্টা করেছি মৌলিক শিক্ষা দেয়ার জন্য। যেটার কোনো বালাই নেই নতুন কারিকুলামে। মৌলিক শিক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা সরে গেছে বিষয়টা এরকম নয়। তবে কারিকুলামে তাদেরকে এ ধরনের কোনো শিক্ষাই দেয়া হচ্ছে না তাহলে সন্তানটা কি শিখছে? অবিলম্বে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে সংশোধন বিয়োজনে যুগোপযোগী করার দাবি জানান তিনি।
আরেক নারী অভিভাবক বলেন, শিক্ষা কারিকুলাম চালুর পর আমার সন্তান ডিভাইসনির্ভর হয়ে পড়েছে। নতুন অ্যাসাইনমেন্ট করার নামে সে মোবাইল ব্যবহার করছে গেম খেলছে, লাভ রিলেশনে জড়াচ্ছে। এর দায়ভার কে নেবে? নতুন করে কি কারিকুলাম চালু করবেন জানি না, আমার দাবি এই নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করতে হবে।
ভিকারুননিসার দুই শিক্ষার্থীর মা আল আসমাউল হুসনা বলেন, আমরা শিশুদের ভালোর জন্য বলছি, নতুন কারিকুলাম নিয়ে চিন্তা করা উচিত। যেটা সারাজীবন দরকার সেটা শেখানো হচ্ছে না। বাস্তবমুখী কোনো কিছু এখানে নেই। তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ে এসেছি। আমি জানি শিশুদের কি শেখাতে হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রচুর অ্যাসাইনমেন্ট করানো হচ্ছে। অ্যাসাইনমেন্ট তো তারা করবে যারা ফিল্ডে কাজ করবে। আমার মেয়ে ক্লাস সেভেনে এই স্কুলে পড়ে। তাকে ছয় দফার ওপরে অ্যাসাইনমেন্ট করতে বলা হয়েছে। কিভাবে করবে কোনো গাইডলাইন নেই। প্রশ্ন করলাম কিভাবে করবা জিজ্ঞেস করো শিক্ষককে। শিক্ষক বলেছে গুগল দেখে করে আনতে। অথচ মাত্র তিনটা প্রশ্ন তাদের বইয়ে দেয়া। কবে ছয় দফা হয়েছে, কে ছয় দফা দিয়েছে, কোথায় দিয়েছে। অথচ এসব সেই বইয়ে নেই। তিনি বলেন, আমরা যে শিক্ষা উপকরণ কিনছি তাও বাইরে থেকে। যে বই দেয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত মানহীন। অথচ আমাদের কর্ণফুলী মিল বন্ধ। এসব শিক্ষাব্যবস্থার সাথে জড়িত।
নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, যেটা চাচ্ছি না, যেটা যাচ্ছে না, যেটা হচ্ছে না, সেটা কেন আমরা মেনে চলব। তিনি বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে এখানে আসিনি। আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এখানে এসেছি। নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার যে ব্যয় সেটা অভিভাবকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। নতুন শিক্ষাকারিকুলামে বিজ্ঞান অঙ্কের যে গুরুত্ব সেটা কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে এখনকার শিক্ষার্থীদেরকে অতীতের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তাদের অনেকে বোঝা হিসেবে উল্লেখ করতে পারেন। কিন্তু নতুন শিক্ষা কারিকুলামে ৯৫ জন শিক্ষার্থীকেই শিক্ষককে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। নতুন শিক্ষাকারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের যে মেধা যে চরিত্র সেটা সঠিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। যা পড়ানো হচ্ছে শেখানো হচ্ছে তা অভিভাবকদের বোধগম্য নয়। অভিভাবকরা উৎকণ্ঠিত যে তাদের কোমলমতি শিশুরা ডিভাইসমুখী হয়ে পড়ছে। এই অবস্থার উত্তরণে অবশ্যই নতুন শিক্ষা কারিকুলাম চালু করতে হবে এই বিদ্যমান শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা