হারের বৃত্ত ভাঙতে চায় বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ

কিছুটা আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি যোগ হওয়ার কথা বাংলাদেশ শিবিরে। গত শনিবার শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শান্তি মিললেও স্বস্তি আসেনি। শান্ত-তাসকিন-লিটন আগেই বলেছিলেন একটি জয় আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি পূরণ করবে। সেই বিশ্বাসেই টি-২০ বিশ্বকাপে আজ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামবে টাইগাররা। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে। টি-২০তে এ পর্যন্ত প্রোটিয়াদের বিপক্ষে আট ম্যাচ খেলে কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। এবার হারের বৃত্ত ভাঙতে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা।
বিশ^কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেটে রোমাঞ্চকর জয় পায় বাংলাদেশ। তবে ব্যাটিং নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে টাইগার শিবিরে। অবশ্য প্রথম ম্যাচ থেকে পাওয়া দুই পয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে শান্ত বাহিনীকে।
গ্রুপ পর্বে ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলঙ্কা করেছিল ৭৭ রান আর ডাচরা করেছিল ১০৩ রান। মন্থর উইকেটের কারণে উভয় ম্যাচেই জয় পেতে বেগ পেতে হয়েছে প্রোটিয়াদের। ইতোমধ্যেই নিউ ইয়র্কের উইকেট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। উইকেটের উন্নতিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে আইসিসি। তবে উইকেট মন্থর হলে সেখান থেকে বেশি সুবিধা পাবে বাংলাদেশই।
বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমাদের ম্যাচের আগে নিউ ইয়র্কে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। তাই উইকেট সম্পর্কে আমরা কিছু ধারণা পাবো। উইকেট যেমনই হোক না কেন, আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে যেকোনো দলকে হারাতে পারি বলেই আমি বিশ্বাস করি।

বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণেই আত্মবিশ্বাসী শান্ত। ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স করছে দলের বোলাররা। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে বেশির ভাগ সময় বাদ হয়ে যাচ্ছে বোলারদের অর্জন। শান্ত বলেন, বেশ কিছু দিন যাবতই আমাদের বোলাররা সেরা ফর্মে আছে। বিশ্বের যেকোনো ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দিতে পারে তারা। আগামী বছরগুলোতেও তারা সেটা ধরে রাখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি যোগ করেন, ব্যাটিং উদ্বেগ থাকলেও আমি খুব বেশি চিন্তিত নই। সব ব্যাটার একসাথে জ্বলে উঠবে এমনটা আশা আপনি করতে পারেন না। কিন্তু এটাও সত্য, কাজ করার জায়গা আছে। আমরা ব্যাটিং সমস্যা সমাধানের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের জন্য বাংলাদেশের বোলারদের কৃতিত্ব দিতেই হবে। প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলঙ্কাকে ৯ উইকেটে ১২৪ রানের বেশি করতে দেয়নি টাইগার বোলাররা। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বেগ পেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের ২ উইকেটের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মিডল অর্ডার ব্যাটার তৌহিদ হৃদয়ের ২০ বলে ঝড়ো ৪০ রান। ৩৬ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস। স্ট্রাইক রেট কম থাকলেও ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী লিটনের ধীরগতির ব্যাটিং ম্যাচে বড় ভূমিকা রেখেছিল। শেষ দিকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অভিজ্ঞতায় জয়ের হাসি বাংলাদেশের। শান্ত বলেন, আমি মনে করি, শ্রীলঙ্কা সত্যিই ভালো বোলিং করেছে। কিন্তু এ রকম উইকেটে আমাদের সহজেই জেতা উচিত ছিল। লিটনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সে লড়াই করেছে ঠিকই, কিন্তু তার দক্ষতা দেখিয়েছে। হৃদয়ের খেলার ধরন দারুণভাবে সাহায্য করেছে।
এ দিকে সাকিবের ফর্মহীনতা ভাবাচ্ছে দলকে। তবে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস বলেন, আমরা চাই সাকিব পারফর্ম করুক। কারণ সাকিব অলরাউন্ডার। সে ব্যাটিং বোলিং আমাদের হয়ে দুইটা কাজ করে থাকে। সে যদি আরেকটু ওয়ার্কআউট করে, আরেকটু হার্ডওয়ার্ক করে তাহলে অবশ্যই ফর্মে ফিরবে। ফর্মটা টেম্পোরারি। অবশ্যই সে অবদান রাখবে আগামী ম্যাচগুলোতে।

প্রোটিয়া অধিনায়ক এইডেন মার্করাম বলেন, এক দিনের ব্যবধানে আরো একটা ম্যাচ খেলা একটু অস্বস্তির। তবে দলের অবস্থা ফুরফুরে। ডাচদের বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল শেষ পর্যন্ত পরিতৃপ্তির। ১২ রানে চার উইকেট হারানোর পর একটু চিন্তা পেয়েছিল বৈকি। শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন না ঘটায় স্বস্তিতে পুরো টিম। দুই জয়ে সুপার এইটে যাওয়ার পথটা সুগম হয়েছে। কাল (আজ) বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় দিয়ে সেটিকে আরো মসৃণ করতে দলের সবাই বদ্ধপরিকর।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ী একাদশই ধরে রাখবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল : নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ (সহঅধিনায়ক), লিটন দাস, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, তৌহিদ হৃদয়, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলি অনিক, তানভির ইসলাম, মাহেদি হাসান, রিশাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম হাসান সাকিব।
রিজার্ভ : আফিফ হোসেন, হাসান মাহমুদ।
দক্ষিণ আফ্রিকা দল : আইডেন মার্করাম (অধিনায়ক), অটনিল বার্টম্যান, জেরাল্ড কোয়েৎজি, কুইন্টন ডি কক, বিজর্ন ফরচুইন, রেজা হেনড্রিক্স, মার্কো জানসেন, হেনরিচ ক্লাসেন, কেশব মহারাজ, ডেভিড মিলার, এনরিচ নর্টি, কাগিসো রাবাদা, রায়ান রিকেলটন, তাবরাইজ শামসি, ট্রিস্টান স্টাবস।