দাম বাড়বে যেসব পণ্যের
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০৫
আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বেশ কিছু পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্ক বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। আবার কিছু পণ্য ও সেবার ওপর নতুন করে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপের সুপারিশ করেছেন। আর এ কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। দাম বাড়তে পারে এমন পণ্যের তালিকায় রয়েছে মোবাইল সিম কার্ড, মোবাইলে কথা বলা, দেশী ফ্রিজ-এসি, সিগারেট, মোটরসাইকেল, বিদেশী পানির ফিল্টার, বৈদ্যুতিক বাতি, বিদেশী মাছ, কোমল পানীয়, আমসত্ত্ব, ফলের রস, আইসক্রিম, বিদেশী চিকিৎসা ব্যয়, ইঞ্জিন অয়েল, বিনোদন সেবা, ইট, বৈদ্যুতিক মিটার, হাটবাজারের ইজারা, নিরাপত্তা সেবা ইত্যাদি।
চিকিৎসা ব্যয় : এত দিন বিশেষায়িত হাসপাতাল বিশেষ শুল্ক ছাড়ে চিকিৎসাযন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পেত। হার ছিল ১ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে ২০০টিরও বেশি চিকিৎসাযন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। ফলে চিকিৎসাসেবা মূল্য বাড়িয়ে দিতে পারে হাসপাতালগুলো।
মোবাইল সিমকার্ড : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল অপারেটরদের সিমকার্ড বিক্রির ওপর কর ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সিমকার্ড কিনতে বাড়তি ব্যয় করতে হবে ক্রেতাদের।
মোবাইল ফোন ব্যবহার : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী মোবাইল কথা বলার ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। আর এ কারণে একজন ক্রেতাকে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে। বর্তমানে একজন ভোক্তা মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৭৩ টাকার কথা বলতে পারেন। বাকি ২৭ টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসেবে কেটে নেয় মোবাইল অপারেটরগুলো। প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল সেবার ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে ভোক্তা ৬৯.৩৫ টাকার কথা বলতে পারবেন।
কাজুবাদাম : দেশে কাজুবাদাম চাষকে সুরক্ষা দেয়ার অংশ হিসেবে খোসা ছাড়ানো কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে কাজুবাদামের দাম বাড়তে পারে।
এসি : গরমে স্বস্তি পেতে অনেকে এয়ারকন্ডিশন বা এসি কিনছেন। আগামী বাজেটে এসিকে বিলাসী পণ্য বিবেচনা করে দেশে এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও সব ধরনের উপকরণের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে বাড়বে এ পণ্যের দাম।
ফ্রিজ উৎপাদনে ব্যয় : বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য খাতকে সরকার ভ্যাট অব্যাহতি দিয়ে আসছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ফ্রিজ উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে; যা আর বাড়ানো হবে না বলে জানা গেছে। ফলে নতুন অর্থবছরে ৫ শতাংশ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে।
বৈদ্যুতিক মিটার : আমদানিকৃত সাধারণ কিলোওয়াট মিটার এবং প্রিপেইড কিলোওয়াট আওয়ার মিটারে মাঝে মোট করভারে পার্থক্য বিদ্যমান, যা সমান হওয়া যৌক্তিক। সে বিবেচনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী প্রিপেইড কিলোওয়াট আওয়ার মিটার ও অন্যান্য ইলেকট্রিক মিটারের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। একই সাথে প্রিপেইড কিলোওয়াট মিটার যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য ইলেকট্রিক মিটারের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ হতে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ ধার্য করার সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে বৈদ্যুতিক মিটারের দাম বাড়তে পারে।
গাড়ি : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানি করতে হলে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট আরোপে প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে তারা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারেন। অন্য দিকে বিলাসবহুল গাড়িতে শুল্ক ফাঁকি রোধে হাইব্রিড ও নন হাইব্রিড টাইপের গাড়ি ছাড় করতে কিছু সুনির্দিষ্ট শর্ত যোগ করা হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে বিলাসবহুল গাড়ির দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে কোমল পানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, আমসত্ত্বের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ন্যূনতম কর আরো ২ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। এতে বেশি দামে কিনতে হবে এসব পণ্য।
সিগারেট : প্রতিবারের মতো প্রস্তাবিত বাজেটেও সিগারেট উৎপাদনপর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য স্তর বাড়ানো হচ্ছে। তিন স্তরের সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৬৫.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়বে। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪৮ টাকা একই পরিমাণ গুলের মূল্য ২৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যাদের পান জর্দা খাওয়ার অভ্যাস তাদের ব্যয় বাড়বে। একই সাথে সিগারেট-বিড়ি পেপারের স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট সাড়ে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে।
মোটরসাইকেল : ২৫০ সিসির (ইঞ্জিন ক্ষমতা) বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ ধার্য করার সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। একই সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু পণ্যের বিপরীতে বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে দাম বেশি পড়তে পারে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেলের।
বিদেশী পানির ফিল্টার : দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষার জন্য বিদেশী পানির ফিল্টারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। ফলে পানির ফিল্টারের দাম বাড়বে।
বৈদ্যুতিক বাতি : বৈদ্যুতিক বাতির মধ্যে এলইডি ও এনার্জি সেভিং বাতির উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতির ভ্যাট। ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ শতাংশ। একই হারে বেড়েছে টিউবলাইটের ভ্যাট। এতে বাতির দাম বাড়তে পারে।
ফলের রস, আইসক্রিম : আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ফলের রস স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। সেই সাথে আইসক্রিমে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
বিদেশী মাছ : বিদেশ থেকে ম্যাকারেল নামের একটি সামুদ্রিক মাছ আমদানি হয়। এই মাছ আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। ফলে মাছটির দাম বাড়তে পারে। এই করভার সার্ডিন মাছের সমান করা হয়েছে।
বিনোদন সেবা : বিনোদনকেন্দ্র তথা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে ভ্যাট দ্বিগুণ (১৫ শতাংশ) করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বাড়তে পারে ঘোরাঘুরি ও বিনোদনের খরচ।
ইঞ্জিন অয়েল : বর্তমানে দেশে হাইব্রিড গাড়ি ও আধুনিক প্রযুক্তির মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে। এতে সিনথেটিক লুব্রিকেটিং অয়েলের ব্যবহার বাড়ছে। এর আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য অনেক বেশি। তবে আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কায়ন পর্যায়ে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারিত নেই। ন্যূনতম মূল্য টনপ্রতি পাঁচ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এর দাম বাড়তে পারে।
ইট : নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ইটের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট করের পরিমাণ ৫ থেকে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে বাড়বে ইটের দাম।
নিরাপত্তা সেবা : রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তাসেবা প্রায় অপরিহার্য। এ ধরনের নিরাপত্তাসেবা ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বিদ্যমান। প্রস্তাবিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
হাটবাজারের ইজারা : কর ব্যতীত প্রাপ্তি (নন-ট্যাক্স রেভিনিউ) বাড়াতে বাজেটে জেলা, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়নপর্যায়ের হাটবাজারের ইজারামূল্য কিছুটা বাড়বে। সেই সাথে বাড়বে জমির নামজারির মাশুলও (ফি)।
হাসপাতালের সরঞ্জাম আমদানির ব্যয় বাড়বে : কিছু শর্ত প্রতিপালনসাপেক্ষে রেফারেল বা বিশেষায়িত হাসপাতাল শুল্কছাড় সুবিধায় ১ শতাংশ শুল্কে মেডিক্যাল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ রয়েছে। আগামী বাজেটে ২০০টিরও বেশি মেডিক্যাল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে, যা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা ব্যয়কে আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে ডেভেলপারের আনা ব্যবহৃত সামগ্রীতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক ছাড়া অন্যান্য শুল্ককর (ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি শুল্ক) পরিশোধ করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা